বাবা মা ও স্বামীর দেওয়া পরিচয়ের বাইরে গিয়ে সমাজে নিজের একটা আলাদা পরিচয় তৈরী করার জন্য চাই সাহস আর অদম্য ইচ্ছা। যদিও এ ঘটনা নতুন কিছু না হলেও বহু সাধারন নারী ও গৃহবধুদের জন্য ভীষন রকমের অনুপ্রেরণা মূলক। আজ আপনাদের বলবো সোদপুরের শ্বেতা নাথের কথা।


শৈশব থেকে কৈশোরের পথে যখন আমরা পা রাখি তখন আমরা প্রায় প্রত্যেকেই বাবা বা মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিজেদের নানান শখ আল্হাদ মিটিয়ে থাকি। কখনও বা পিকনিক, কখনও বা বন্ধুদের সাথে রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া, আবার পোষাক আসাক থেকে শুরু করে শখের পোষ্য সহ আরো কত কি। কিন্তু কখনও ভেবেছেন সেই হাত খরচের থেকে নেওয়া টাকা দিয়ে শুরু করা শখের ব্যবসাই আজ হয়ে উঠতে পারে পশ্চিমবঙ্গের একটি রপ্তানীকারক সংস্থা। যা আজ বেশ কিছু পরিবার কে স্বনির্ভর হতেও সাহায্য করেছে।


সোদপুরের শ্বেতা নাথ, তখন সদ্য ক্লাস ইলেভেনের ছাত্রী ছিলেন। বাবা মার একমাত্র কন্যা তখন একটু একটু করে বড় হয়ে উঠছে। পুতুল খেলার সময়, পুতুলের বিয়ে দিতে গিয়ে যে পুঁথি বা নানান উপকরন দিয়ে সেই পুতুলের গয়না তৈরী করতেন সে দিয়ে যে সত্যি মহিলাদের জন্য হাল ফ্যাশনের গয়না তৈরী করা যায় তা জানতে পারলেন। ভাবলেন শিখবেন এই হাতে তৈরী গয়না। বাড়িতে কিছুই না জানিয়ে, বাবার থেকে দু হাজার টাকা নিয়ে লুকিয়ে চলেগেলেন বড় বাজার। সেখানে গিয়ে দেখলেন হাতে তৈরী গয়নার উপকরনের নানান উপকরন ও উপাদান। তার সাথে নকল পুঁথি ও মনি মানিক্যের প্রচুর ষ্টক। শুর হল পথচলা। বাড়িতে জানার পরে ছোট্ট শ্বেতা কে বাবা অবাক হয়ে বলেছিলেন – “তুই ব্যাবসা করবি? “

এ প্রশ্ন করাটাই ছিল স্বাভাবিক। কারন যে ছোট্ট মেয়েটা তখন শহরতলীর অলিগলি ঠিক মতো চেনেনা। জানেনা দুনিয়াদারির নিয়মকানুন সে ব্যাবসা করবে একথা ভাবতেও তো কেমন লাগে। কিন্তু শ্বেতা করে দেখালো। যে মেয়েটা শহরতলীর অলিগলি চিনতো না আজ সেই পথ দেখাচ্ছে পিছিয়ে পড়া অনান্য নারী বা গৃহবধুদের। আজ “শাওন” এর হাতে তৈরী গয়নার চাহিদা শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই সীমাবদ্ধ নেই। পশ্চিমবঙ্গের বাইরের বেশ কিছু রাজ্য থেকে রয়েছে দারুন চাহিদা।

তবে সত্যিই কি “শাওন” কে গড়ে তোলা ছিল খুব সহজ। জীবনের নানান ওঠা পড়া আর তার সাথে কোভিডের ধাক্কা, সব মিলিয়ে কম লড়াই করতে হয়নি শ্বেতা কে। এই সব কিছুকে অতিক্রম করে প্রতিষ্ঠিত করেছেন নিজেকে, গর্বিত করেছেন সমগ্র বাঙালি জাতিকে। “কে বলে, বাঙালি ব্যাবসা করতে পারে না?”
দ্যা ইন্ডিয়ান ক্রনিকলস আয়োজিত “অনন্যা সম্মান ২০২৩” এর জন্য মনোনীত শ্বেতা নাথ আসছেন তার সেই কঠিন লড়াইয়ের কাহিনি শোনাতে অনন্যা সম্মানের মঞ্চে।
আপনারাও যারা ক্ষুদ্রশিল্প বা ব্যাবসায় আগ্রহী তারা চাইলেই শ্রীমতী শ্বেতা নাথের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

শাওনের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ : https://www.facebook.com/SaonForSweta?mibextid=D4KYlr
ফোন নম্বর : 98046 01610 ( সকাল 12টা থেকে বিকেল 4টে )
শ্রীমতী শ্বেতা নাথ ও “শাওন” গর্বিত করেছেন আপামোর বাঙালি ও নারী সমাজ কে। দ্যা ইন্ডিয়ান ক্রনিকেলস খুব তাড়াতাড়ি তার হাতে তুলে দিতে চলেছে “অনন্যা সম্মান ২০২৩”। তার এই উদ্যোগ কে আমরা কুর্নিশ জানাই। অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইলো শাওনের জন্য। আর আপনাদের জন্য রইলো শ্রীমতী শ্বেতা নাথ ও শাওন সম্পর্কিত একটি ভিডিও।