Cleveland Clinic ও Anixa Biosciences-এর যৌথ উদ্যোগে তৈরি একটি নতুন ভ্যাকসিন এখন স্তন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। তিনটি ডোজে দেওয়া এই ভ্যাকসিন প্রাথমিক ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অসাধারণ সাড়া ফেলেছে এবং ভবিষ্যতে ক্যান্সার প্রতিরোধে তা যুগান্তকারী হতে পারে।
কী এই নতুন স্তন ক্যান্সার ভ্যাকসিন?
নতুন এই ভ্যাকসিন Triple-Negative Breast Cancer (TNBC)-এর বিরুদ্ধে তৈরি, যা স্তন ক্যান্সারের সবচেয়ে আক্রমণাত্মক ও চিকিৎসা-প্রতিরোধী রূপগুলির মধ্যে একটি। এটি এমন একটি ক্যান্সার যা ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন ও HER2 রিসেপ্টরের অনুপস্থিতির কারণে প্রচলিত হরমোন থেরাপি ও টার্গেটেড চিকিৎসায় প্রতিক্রিয়া দেখায় না।
👉 এই ভ্যাকসিন শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে ট্রেন করে আলফা-ল্যাক্টালবিউমিন নামক একটি প্রোটিনকে আক্রমণ করতে, যা সাধারণত স্তন্যদানের সময়ই সক্রিয় হয়। অথচ TNBC-তে এই প্রোটিন পুনরায় উপস্থিত হয়। ভ্যাকসিন এই অসঙ্গত প্রোটিনকে টার্গেট করে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করে।

ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল: কী বলছে প্রথম পর্যায়ের ফলাফল?
- অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা: প্রায় ৩০ জন উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা নারী
- ডোজ রূপরেখা: ৩টি ডোজ, প্রতিটি ডোজ দু’সপ্তাহ অন্তর
- প্রতিক্রিয়া:
- বেশিরভাগ অংশগ্রহণকারী শক্তিশালী ইমিউন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন
- গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই; সামান্য ইনজেকশন সাইটে ব্যথা বা ফোলাভাব ছিল
- অটোইমিউন প্রতিক্রিয়ার তেমন ঝুঁকি দেখা যায়নি
➡️ বিশেষজ্ঞদের মতে, ইমিউন সিস্টেম ভ্যাকসিনে সক্রিয় হয়েছে ঠিক যেমনটি প্রত্যাশা করা হয়েছিল। পরবর্তী ধাপে আরও বিস্তৃত গবেষণার প্রস্তুতি চলছে।
গবেষণা ও উন্নয়নের পিছনের প্রতিষ্ঠান
- Anixa Biosciences: বায়োটেকনোলজির মাধ্যমে ক্যান্সার চিকিৎসায় পরিবর্তন আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একটি সংস্থা।
- Cleveland Clinic: বিশ্বখ্যাত মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট যারা বহু বছর ধরে স্তন ক্যান্সার গবেষণায় অগ্রণী।
উভয় প্রতিষ্ঠান ২০২১ সাল থেকে যৌথভাবে এই ভ্যাকসিনের উন্নয়নে কাজ করছে এবং মানবদেহে পরীক্ষার জন্য FDA অনুমোদনও পেয়েছে।
নারীদের জন্য এই ভ্যাকসিন কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে প্রতি আটজন নারীর মধ্যে একজন জীবনের কোনো না কোনো সময়ে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। তবে Triple-Negative Breast Cancer-এর মতো রূপগুলি সাধারণত তরুণ নারীদের মধ্যেই বেশি দেখা যায় এবং তা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
এই ভ্যাকসিন যদি সফল হয়, তবে:
- এটি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ নারীদের জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করবে
- স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা খরচ কমাবে
- গ্রামীণ ও নিম্নবিত্ত নারীদের ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে

ভারতের প্রেক্ষাপটে গুরুত্ব
ভারতের বহু এলাকায় এখনও ক্যান্সার স্ক্রিনিং বা প্রাথমিক চিকিৎসার সুযোগ নেই। এই ভ্যাকসিনের মাধ্যমে যদি ক্যান্সার প্রতিরোধ সম্ভব হয়, তবে চিকিৎসার আগেই রোগের সূত্রপাতে বাধা দেওয়া যাবে।
সেই সাথে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, NGO ও স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির মধ্যে সমন্বয় করে এটি ভারতের জনস্বাস্থ্যের অংশ করা যেতে পারে।
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ
🔸 নিরাপত্তা পরীক্ষা: দীর্ঘমেয়াদি অটোইমিউন সমস্যা হয় কি না তা খতিয়ে দেখা
🔸 Phase-2 ও Phase-3 ট্রায়াল: বিস্তৃত জনগোষ্ঠীর উপর প্রয়োগ
🔸 মূল্য নিয়ন্ত্রণ: যাতে স্বল্প আয় ও গ্রামীণ মানুষেরা সহজেই ব্যবহার করতে পারেন
🔸 সরকারি অনুমোদন ও প্রচার: জাতীয় স্তরে অনুমোদন পেতে সময় লাগবে
ই নতুন স্তন ক্যান্সার ভ্যাকসিন নারীদের জীবনে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে। চিকিৎসা বিজ্ঞান এক নতুন যুগে প্রবেশ করেছে যেখানে শুধু চিকিৎসা নয়, ক্যান্সার প্রতিরোধেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
সচেতনতা, আগাম স্ক্রিনিং ও এই ধরনের ভ্যাকসিনের মাধ্যমে একদিন হয়তো স্তন ক্যান্সার ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নেবে।