মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনকালে নেওয়া নানা বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত বিশ্ব অর্থনীতিতে দাগ কেটে গেছে। বিশেষ করে, ভারতের উপর নতুন শুল্ক আরোপ এবং পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের পুনর্মূল্যায়ন দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। এই প্রতিবেদনটি সেইসব নীতিগত সিদ্ধান্তের সারাংশ তুলে ধরছে, যা আজও প্রভাব ফেলছে ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্কের উপর।
ভারতের উপর আমেরিকার শুল্ক বৃদ্ধি: কৌশল না প্রতিশোধ?
ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যতম সিদ্ধান্ত ছিল ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যের উপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে আমেরিকার দাবি ছিল, তারা ভারতের বাজারে প্রবেশে নানান বাণিজ্যিক বাধার সম্মুখীন হচ্ছে।
মূলত, ‘Generalized System of Preferences (GSP)’ সুবিধা থেকে ভারতকে বাদ দেওয়া হয় ২০১৯ সালে। যার ফলে প্রায় ৫.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ভারতীয় রপ্তানি অতিরিক্ত শুল্কের আওতায় পড়ে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভারতীয় কৃষি, রাসায়নিক ও ইলেকট্রনিকস পণ্য রপ্তানিকারকরা।

পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য: কূটনৈতিক পথ না ব্যতিক্রমী সমঝোতা?
ট্রাম্প প্রশাসন পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের এক নতুন ধারা শুরু করে। যদিও সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে ট্রাম্প পাকিস্তানকে তেমন সুবিধা দেয়নি, বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে কিছু দরজা খোলা রাখে।
পাকিস্তানকে আফগানিস্তান সংক্রান্ত আলোচনায় অংশীদার করার বিনিময়ে কিছু বাণিজ্যিক সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। তবে এই সিদ্ধান্তগুলো ছিল সীমিত এবং নির্দিষ্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ। ট্রাম্প প্রশাসনের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল আফগানিস্তান থেকে নিরাপদে সেনা প্রত্যাহার, এবং সেই প্রক্রিয়ায় পাকিস্তানের ভূমিকাকে কাজে লাগানো।
এই ধরণের কৌশলগত বাণিজ্যিক সমঝোতা শুধুমাত্র পাকিস্তান নয়, দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক ভারসাম্যকেও প্রভাবিত করে।

ট্রাম্প চুক্তির দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব কী?
ভারতের ক্ষেত্রে, GSP সুবিধা প্রত্যাহারের প্রভাব আজও রপ্তানিকারক শিল্পে অনুভূত হয়। যদিও বাইডেন প্রশাসন কিছু ক্ষেত্রে নমনীয়তা দেখিয়েছে, কিন্তু পূর্ণ সুবিধা এখনও ফেরত দেয়নি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভারতীয় ছোট ও মাঝারি শিল্প (MSME) খাত।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের সঙ্গে ট্রাম্প যুগে গড়ে ওঠা সীমিত বাণিজ্যিক সম্পর্ক খুব বেশি স্থায়িত্ব পায়নি। মার্কিন কংগ্রেসের বিভিন্ন অংশ পাকিস্তানের উপর নজরদারি ও সন্দেহমূলক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রেখেছে।
উপসংহার: দক্ষিণ এশিয়ার দৃষ্টিতে ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি
ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে নেওয়া শুল্ক ও বাণিজ্যিক চুক্তির সিদ্ধান্ত একদিকে যেমন আমেরিকার স্বার্থরক্ষা করেছে, অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি ও কূটনীতিতেও রেখেছে গভীর ছাপ।
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে, এই সিদ্ধান্তগুলো পুনর্মূল্যায়নের সময় এসেছে। ভারতের মতো অর্থনৈতিক শক্তিকে শুল্কের বেড়াজালে আটকে রাখা যেমন যৌক্তিক নয়, তেমনি পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্যিক সহযোগিতা আরও স্বচ্ছ ও নীতিভিত্তিক হওয়া উচিত।