বহতা নদী সরকার
মানুষের জীবনযাপন করতে কেমন অর্থের প্রয়োজন হয়? নিশ্চয়ই আমার এ প্রশ্নে আপনার হাসি পাচ্ছে। বলতে পারেন গৌতম আদানি, মুকেশ আম্বানির কথা। শিব নাদার, সাবিত্রী জিন্দাল, লক্ষ্মী মিত্তাল, সাইরাস পুনাওয়ালা, পালোনজি মিস্ত্রি, কুমার মঙ্গলম বিড়লার কথাও উঠতে পারে। তারা এ দেশের প্রথম সারির ধনী ব্যক্তি। তাঁদের জীবনযাত্রার মান ঠিক তাঁদের উপার্জনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। যিনি দিন আনেন দিন খান তাঁরও দিনরাত চলে যায়। আমরা অহেতুক ভবিষ্যত প্রজন্মকে সুখী করতে টাকার পাহাড় গড়ে তুলি। সেটা বৈধ পথেই হোক আর অবৈধ পথেই হোক। এ কথা মোটেও চিন্তা করি না, আমার রেখে যাওয়া টাকা আমার আগামী প্রজন্ম ভোগ করতে পারবে তো?
একজন মানুষের তিনবেলা খাবার আর বাসস্থান হলেই অনেক বড় পাওয়া। সন্তানের পড়োশোনার খরচ, অসুখে একটু পথ্য, কোথাও ঘুরতে যাওয়ার একটু সামর্থ্য- এগুলোই তো মানব জীবন অনেক। কিন্তু আমরা তা না করে টাকার পেছনে হন্যে হয়ে ছুটছি। এই ছোটার কোনও শেষ নেই। বৈধপথে অবৈধ পথে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করছি। এই টাকা উপার্জনের জন্য আমরা অসংখ্য সাধারণ মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা কেড়ে নিচ্ছি।
ইদানীং আমিত্বটা আমাদের বড় বেশি করে পেয়ে বসেছে। আমিত্বকে আমরা মগ্ন হয়ে গেছি। এই বাড়ি আমার, এই জায়গা আমার, এই দোকান আমার, এই গাড়ি আমার, ব্যাংকে কোটি টাকা আমার ইত্যাদি। এই আমিত্বটা কতটা দীর্ঘস্থায়ী তা কখনও একবার ভেবে দেখেছি?
পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ খেতে পান না। রাতে তাঁদের মাথাগোঁজার ঠাঁই নেই। অসুখে চিকিৎসা নেই। অপরাধ না করেও যুদ্ধরত দেশগুলোতে কত নিরপরাধ মানুষ মারা যাচ্ছেন প্রতিদিন। তাঁদের প্রতি আমাদের নিষ্ঠুরতার কথা কি কোনও অবসরে কখনও ভেবে দেখি আমরা?
এই পৃথিবীটা শুধু মানুষের নয়। গরু, ছাগল, বিড়াল, কুকুর, সাপ, বানর, হনুমান, কেঁচো, পিঁপড়া, কুমির, শিয়াল, সিংহ, খরগোশসহ সব জন্তুরই বাঁচার অধিকার আছে। ঈশ্বর কোনও না কোনও কারণে তাদের সৃষ্টি করেছেন।
সাগর, পাহাড়, নদী, বন-জঙ্গল, গাছ-গাছালি সবকিছু সৃষ্টির পেছনে কোনও না কোনও কারণ অবশ্য আছে। গাছ-সাগরের জন্ম না হলে আমরা কীভাবে অক্সিজেন পেতাম তা কি একবার ভেবে দেখেছি? সাপ ব্যাঙ খাচ্ছে, ব্যাঙ ফসলের পোকা-মাকড় খাচ্ছে এভাবেই পরিবেশের ভারসাম্য টিকে থাকছে। আমরা এই পরবেশের জন্যই বেঁচে আছি। তাহলে আমিত্বে এত বড়াই কেন?
আমরা আমাদের প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে মানুষ মারছি, সাপ মারছি, গাছ কাটছি, নদী ভরাট করছি। প্রকৃতির বিরুদ্ধে আচরণ করছি। এটা আমাদের বিপন্নতাকে ত্বরান্বিত করছে।
মানুষকে সংযত হতে হবে। মানুষকে ভালোবাসতে হবে। প্রকৃতিকেও ভালোবাসতে হবে। ধনী-গরিবের বিভেদ ভুলতে হবে। আমিত্বকে নির্বাসনে দিতে হবে। সবার সঙ্গে বাঁচতে হবে। এক হয়ে বাঁচতে হবে। তাই আর নয় দূরত্ব সৃষ্টি, মানুষে মানুষে, মানষে প্রকৃতিতে। আসুন, আমরা এক হয়ে বাঁচি।