Advertise your brand here -Contact 7603043747 (Call & Whatsapp)

গ্লোবালাইজেশনের শারদ উৎসব।

Table of Contents

Share Our Blog :

Facebook
WhatsApp

চারিদিকে পুজোর গন্ধ। আকাশে শরতের মেঘ। শহুরে মানুষের মনে কাশ ফুলের দোলা। পাড়ায় পাড়ায় সাজো সাজো রব। সাবেকিয়ানা হারিয়ে আজ প্রায় সর্বত্র থিমের ছড়াছড়ি। একদা যে পুজো বারোয়ারী অর্থাৎ বারোজনের ছিল তা আজ আজ পাড়ার বারোজনের নেই। পুজো এখন কর্পোরেট দের হাতে। সাধারণ মানুষের কাছে শারদ উৎসব অক্টোবর বা আশ্বিন মাস নাগাদ হলেও এখন পুজোর প্রস্তুতি শুর হয় এপ্রিল বা বৈশাখের শুরুতেই। এই সময় থেকেই পুজো উদ্যোগতারা নির্বাচন করেন থিমের বিষয় বস্তু এবং তার পরেই একজন প্রফেশনাল উপস্থাপক কে দিয়ে তৈরী করান একটি বিশেষ প্রেজেন্টেশন। যাতে থাকে এবছরের থিমের বিষয় বস্তু কি, এই থিম সমাজে কি বার্তা বহন করতে পারে, কোন বিখ্যাত শিল্পী এই থিমটি বানাবেন, শহরে এই পুজোর প্রচার কবে থেকে কতদিন কোথায় কোথায় কি ভাবে চলবে, কত দর্শনার্থীরা এই মন্ডপে ভীড় করবেন, প্রবেশ পথ ও বাহির পথে কটা বানিজ‍্যিক প্রচারের ব‍্যবাস্থা করা যেতে পারে ইত্যাদি আরো অনেক কিছু। এর পরেই কোন না কোন একটি বা একাধিক বানিজ‍্যিক সংস্থা এই পুজো কমিটির সাথে গাঠছড়া বাধে বলাবাহুল‍্য এই পুজো কমিটি কে কিনে নেয়। অবশ‍্যই এই পুজো কমিটির শীর্ষে থাকে কোন না কোন রাজনৈতিক ব‍্যাক্তিত্ব বা মন্ত্রী। আগের মত পাড়ার বাড়ি বাড়ি ঘুরে চাঁদা আদায় করে পুজোর সংখ্যা গাঠ গুনে খুজতে হবে।

ছ’ মাস আগে থেকেই দিন রাত জেগে শুরু হয় মন্ডপ তৈরীর কাজ। এর পরেই শরতের আকাশ ঢেকে শুরু হয় শহরের সর্বত্র বানিজ‍্যিক প্রতিষ্টানের হোর্ডিং। পুজোর সপ্তাহ খানেক আগে শুরু হয় একটি বস্ত্র বিতরন অনুষ্ঠান। যেখানে পাড়ার ভাবমুর্তি বজায় রাখতে গরীব পরিবার কে নতুন বস্ত্র দিয়ে আনন্দে সামিল করার উদ্যোগ নেওয়া হয় কিন্তু বছরের বাকি দিন গুলি সেই গরিব পরিবারের কোন খোঁজ নেওয়া হয়না। আর নতুন বস্ত্র পেয়েই শেখানো বুলি বলতে হয় ” যায় যদি যাক প্রান, হীরকের রাজা ভগবান “।

আগের মত পুজো মন্ডপের ভীতরে পাড়ার মা বোনেদের বা গুরুজন দের বসার জন‍্য চেয়ার থাকেনা, কারন তাতে থিমের পরিবেশ নষ্ট হতে পারে। পুজো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসেন সমাজের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীরা। তাদের সুরক্ষা প্রদানের জন‍্য থাকে কয়েক সহস্র সুরক্ষা কর্মী বা পার্টি কর্মী, পাড়ার সাধারণ ঘরের মা বোনেরা অনেক দুর থেকে দাঁড়িয়ে দেখেন সেই ফিতে কাটার অনুষ্ঠান। পুজো মন্ডপের থেকে বেশ খানিকটা দুরে বেশ একটু উচ্চতায় করা হয় একটি মঞ্চ যেখানে থাকে বেশ কিছু আসন যা এলাকার ধনী ও কৃতী মানুষদের আপ‍্যায়নের জন‍্য। আর সাজিয়ে রাখা থাকে অজস্র পুরস্কারের ট্রফি যা আগের বছর জিতে ছিলেন।

একটা সময় ছিল যখন পুজোর সময় দেশের প্রখ‍্যাত গায়ক গায়িকারা গানের এলবাম প্রকাশ করতেন, বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা প্রকাশ করতো বিশেষ পুজো সংখ্যা বা পুজা বার্ষিকী, যে সবের জন‍্য আবাল বৃদ্ধ বনিতা অপেক্ষা করে থাকতো আজ সেও অতীত। এখন আর গানের এলবাম বেরোয় না। পুজা বার্ষিকী ম‍্যাগাজিন প্রকাশিত হলেও তার ক্রেতা স্বয়ং লেখক লেখিকা নিজে ও তার স্তাবকরা।

বাকি পড়ে রইলো সেই সব শঙ্কর মুদিদের কথা। যারা সারাটা বছর আমাদের জন‍্য অপেক্ষা করে থাকতেন। তাদেরও সেই হাসিমুখ আজ কোথাও ম্লান হয়েগেছে। আগে বাঙালির কেনা কাটা ছিল প্রধানত দুবার। চৈত্র সেল- এ আর এই পুজোর সময়। কিন্তু এখন বাঙালি প্রায় সারাবছর কেনা কাটি করেন। পুজোর সময় কেনাকাটায় শ্রেষ্ঠ আকর্শন ছিল ফ্রি গিফট। কোথাও দিত পেন, কোথাও চাবির রিং, কোথাও পুজোর কেনাকাটির জন‍্য ভালো ব‍্যাগ আর বাচ্চাদের দেওয়া হত বেলুন। আজ এসব অতীত। আজ বাঙালি নামী মলের দামী শোরুমে, ক্রেডিট কার্ডে ঋনের বোঝা বাড়িয়ে কেনাকাটি করে যে খানে ফ্রি গীফট তো দুর একটা পলিথিনের ব‍্যাগের ও দাম ধরা হয় আর শোরুমে প্রবেশ ও বাহির হবার সময় সুরক্ষা কর্মী বার বার পরীক্ষা করে দেখে কিছু চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে কিনা। অর্থাৎ সানন্দে অপমানিত হয়ে আজ বাঙালি বেজায় খুশি।

হয়তো ক্রমবর্ধমান যুগে আমাদের বাঙালি সংস্কৃতি আরও পরিবর্তন হবে। বদলে যাবে আগমনীর সুর। বদলে যাবে আগমনীর আনন্দ। কারন আমরাই বদল চেয়েছিলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More Related Articles

ভারতীয় রাজনীতি
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিস্ফোরক মন্তব্য: “রিগিং মাস্টার অমিত শাহ”, পহেলগাঁও হামলা নিয়ে উঠল প্রশ্ন

TMC সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দেগে অমিত শাহকে “রিগিং মাস্টার” আখ্যা দিলেন। পহেলগাঁও হামলার প্রসঙ্গ টেনে তুললেন নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন।

Read More »
বিশেষ খবর
সুখোই যুদ্ধবিমানের টায়ারে চলবে জগন্নাথদেবের রথ—৪৮ বছরে ঐতিহ্যের সঙ্গে প্রযুক্তির যুগলবন্দি কলকাতায়

৪৮ বছর পর কলকাতার ইসকন রথযাত্রায় আসছে অভিনব পরিবর্তন—জগন্নাথদেবের রথ চলবে রুশ সুখোই যুদ্ধবিমানের টায়ারে। প্রযুক্তি ও ঐতিহ্যের এই যুগলবন্দি এবার ধর্মীয় উৎসবকে দেবে নতুন মাত্রা।

Read More »
error: Content is protected !!