বাঙালি মাত্রই ভোজনরসিক। বাঙালিরা আমিষ খেতে পছন্দ করলেও একবারে যে সবজি পছন্দ করে না , এরমটাও নাও। শীতকালে ফুলকপি, বাঁধাকপি থেকে শুরু করে গরমের এচড়, পটল সবই বাঙালির খাদ্যতালিকায় স্থান করে নিয়েছে।
সকাল হলেই বাজারে গিয়ে আলু-পটলের দাম নিয়ে সবজিওয়ালার সঙ্গে দরাদরিও করেনি এরম কাউকে বোধহয় ভু ভারতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু, কখনও কি ভেবে দেখেছেন বিশ্বের সবচেয়ে দামি সবজি কোনটি? তার দাম কত? বস্তুত, বিশ্বের সবথেকে দামি সবজিটি এতটাই দামি যে তার সঙ্গে সোনার দামের তুলনা করা হয়। হ্যাঁ, সোনার মতোই ‘হপ শুট’। হপ শুটকে শুধু ভারতেই নয়, সারা বিশ্বের মধ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে দামি সবজি হিসেবে বিবেচিত। ভারতে এই সবজিটির দাম প্রতি কিলোগ্রাম ৮৫,৬১৪ টাকা! এই দামে সাধারণ মধ্যবিত্তের সোনার গয়না কেনা হয়ে যায়।
তবে, হপ শুটের মানের উপর নির্ভর করে এটির দামের তারতম্য ঘটে। এই সবজির দাম এতটা বেশি হওয়ার কারণ এর ঔষধি গুণ, পাশাপাশি এই সবজি বাজারে সহজে পাওয়াও যায় না। সবজিটি আকারে ছোট এবং স্বাদ বেশ তিতকুটে। হপ শুটের গাছগুলির বৈজ্ঞানিক নাম ” হিউমুলাস লুপুলাস”। হপ শুটের গাছগুলি সারিবদ্ধভাবে বৃদ্ধি পায় না। তাই ফসল তোলাটা অত্যন্ত কঠিন হয়। পর্যাপ্ত আর্দ্রতা এবং সূর্যালোক পেলে এই গাছের শাখাগুলি দিনে ৬ ইঞ্চি পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।
ঔষধি গুণসম্পন্ন এই সবজিটি যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এছাড়া, হপ শুট হজমশক্তি বাড়াতে, শরীরের দুর্গন্ধ দূর করতে, অবসাদ বা উদ্বেগ দূর করতে, ব্যথানাশক হিসেবে এবং নিদ্রাহীনতার চিকিত্সায় সাহায্য করে। এই সবজিটির ফুলকে বলা হয় হপ কোন। এই হপ কোন বিয়ার তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। পাশাপাশি, এই গাছের ডালগুলি কাঁচাও খাওয়া যায়। তাই, স্যালাডে দেওয়া যায়। এছাড়াও, এটি আচার তৈরিতেও ব্যবহার করা হয়। ইউরোপীয় দেশগুলিতে ত্বক উজ্জ্বল রাখতে এবং ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে হপ শ্যুট অত্যন্ত জনপ্রিয়। কারণ এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা ত্বকের গঠন এবং স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করে।
ভারতে এই সবজির চাষ হয় না। হপ শুটের চাষবাস মূলত হয় ইউরোপ,পশ্চিম এশিয়া এবং উত্তর আমেরিকা মহাদেশে।কিন্তু হিমাচল প্রদেশের সিমলায় গুছি নামে একটি সবজি পাওয়া যায়, যা গুণে প্রায় হপ শ্যুটের সমান। তবে, দাম অনেকটাই কম। প্রতি কিলোগ্রাম বিক্রি হয় প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকায়।