ইতিহাস পড়লে কেরিয়ার হয় না, এমন একটা ধারণা ধীরে ধীরে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে গিয়েছে। বহু অভিভাবক মনে করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিষয় নিয়ে পড়াশোনা না করলে সন্তানের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। যদিও সারা বিশ্বজুড়ে যত অশান্তি, যুদ্ধ, মনোমালিন্য অতীতে হয়েছে বা বর্তমানে হচ্ছে তার বেশিরভাগই এই অপাংক্তেয় ‘ইতিহাস’ নামক বিষয়টিকে ঘিরেই। ভবিষ্যতেও এর অন্যথা হবে তার সম্ভাবনা খুব কম। এই যে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ চলছে, তার পিছনেও কিন্তু ইতিহাসের এক বড় অবদান আছে। রাশিয়ানরা মনে করে, ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চল ঐতিহাসিকভাবেই রুশ এলাকা। এমনকি ইউক্রেনের সংস্কৃতির জন্ম রুশ সংস্কৃতি থেকেই হয়েছে বলে উগ্র রুশ জাতীয়তাবাদীদের ধারণা। সেই সঙ্গে সাম্প্রতিক কিছু বিষয় যোগ হয়েই এই ভয়ঙ্কর যুদ্ধ চলছে গত এক বছর ধরে।
তবে এখন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ নয়, বরং নিজেদের ঘরেতে একটু মন দেওয়া যাক। ‘ইতিহাস’ নামক বিষয়টার মূল উদ্দেশ্যই হল অতীত সম্পর্কে আমাদের ওয়াকিবহাল করা এবং তা থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামীর সঠিক পথ নির্ধারণে সাহায্য করা। সেই সঙ্গে কোন পথ ধরে আজকের সমাজ, সভ্যতা, সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে সেই বিষয়গুলি চিনিয়ে দেওয়া।
কিন্তু এই ইতিহাসকে অজুহাত হিসেবে খাড়া করার উদাহরণ খুব একটা কম নেই। বাবরি মসজিদ কাণ্ডের কথা আমরা সকলেই জানি। আদালতের রায়ে ভেঙে ফেলা সেই বাবরি মসজিদ এলাকাতেই এখন তৈরি হচ্ছে রাম মন্দির। কিন্তু এক্ষেত্রে ইতিহাসের ব্যবহার কি সঠিক হয়েছিল? এই প্রশ্নটা থেকেই যাবে। ৫০০ বছর আগের ঘটনাকে যদি আজ শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করা হয় তবে তার ফলাফল কখনই সকলের পক্ষে মঙ্গলজনক হতে পারে না। সভ্যতার স্বাভাবিক গতিতেই গোটা সময়কালটাই বদলে যায়, পরিবেশ পাল্টায়, প্রেক্ষিত বদলে থাকে। সবচেয়ে বড় কথা ৫০০-৬০০ বছর আগের ঘটনার সময় যারা ছিলেন তাঁদের অস্তিত্ব তো দূরের কথা, বংশধররাও প্রায় কেউ আজ আর নেই। কিন্তু সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই রক্তক্ষয়ী দাঙ্গার সাক্ষী থেকেছে এই দেশ।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে রাম মন্দির তৈরি নিয়ে হিন্দুত্ববাদীদের পক্ষে রায় আসার রেশ মেলাতে না মেলাতেই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে বেনারসের জ্ঞানব্যাপী মসজিদ বিতর্ক। কাশি বিশ্বনাথ মন্দিরের একেবারে গায়ে অবস্থিত এই জ্ঞানব্যাপী মসজিদ। হিন্দুত্ববাদীদের দাবি, কাশি বিশ্বনাথ মন্দির আগে ওই জ্ঞানব্যাপী মসজিদ চত্বরেই ছিল। বারবার তার উপর মুসলিম শাসকরা আক্রমণ করেছে। সর্বশেষ ঔরঙ্গজেবের নেতৃত্বে বিশ্বনাথ মন্দির পুরো ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। সেই জায়গায় গড়ে ওঠে জ্ঞানব্যাপী মসজিদ। পরবর্তীতে ১৭৭৭ সালে ইন্দোরের তৎকালীন শাসক রানি অহল্যাবাঈ হোলকার বর্তমান কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরটি নির্মাণ করেন।
সাম্প্রতিক সময়ে হিন্দুত্ববাদীরা দাবি করে, জ্ঞানব্যাপী মসজিদের কুয়োতে বিশাল বড় একটি শিবলিঙ্গ পাওয়া গিয়েছে। তাঁদের দাবি, এতেই প্রমাণ হয় এটি অতীতে হিন্দু মন্দির ছিল। তাই বাবরি মসজিদের জায়গায় যেমন রাম মন্দির তৈরি হচ্ছে, তেমনই জ্ঞানব্যাপী মসজিদও বিশ্বনাথ মন্দির কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিতে হবে।
যদিও মুসলমান সম্প্রদায়ের দাবি, হিন্দুত্ববাদীরা যেটিকে শিবলিঙ্গ বলছেন সেটি আসলে ফোয়ারার ভাঙা অংশ! এই নিয়ে প্রাথমিকভাবে আদালত জ্ঞানব্যাপী মসজিদের উপর কিছু নিষেধাজ্ঞা চাপালেও পরবর্তীতে তা তুলে নেওয়া হয়েছে।
কিন্তু বিষয়টা আইন-আদালতের থেকেও বেশি করে সংখ্যাগুরুর অসহিষ্ণু আধিপত্যের হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এঁরা কেউ মনে রাখতেন চাইছেন না যে, ১৫৮৫ সালে মুঘল সম্রাট আকবর নিজে উদ্যোগ নিয়ে কাশি বিশ্বনাথ মন্দির পুনঃনির্মিত করেছিলেন। তবে এর থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ২০-৫০ বছর আগের নয়, ৫০০-৬০০ বছর আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার উপর ভিত্তি করে বর্তমানে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া মানে সাম্প্রতিক সময়টাকে অস্বীকার করা। বহু অতীতের ভুল শুধরোতে গিয়ে বর্তমানের বহু মানুষকে অবহেলিত, বঞ্চিত করা।
এতদিন বাঙালির একাংশ নাক সিঁটকে বলত, উত্তর ভারতের মানুষ এমনই, যা তা কাজকর্ম করে বেড়ায়। ওদের চোখের উপর ধর্মের মোটা পট্টি লাগানো আছে। তবে সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ যেদিকে এগোচ্ছে তাতে বাঙালি বোধহয় আর এই নিয়ে আত্মশ্লাঘায় ভুগবে না। কারণ হিন্দুত্ববাদীরা এবার বাংলার মসজিদগুলোরও উৎপত্তি ছানবিন করতে আসরে নেমে পড়েছে। আর এক্ষেত্রে তাদের প্রথম টার্গেট হল বিখ্যাত আদিনা মসজিদ।
বাংলার বিখ্যাত ইসলামিক শাসক ইলিয়াস শা’র বংশধর সিকান্দার শাহ মালদহের আজকের পান্ডুয়ায় নিজের রাজধানী স্থাপন করেছিলেন। তিনি খলিফা উপাধি গ্রহণ করে এক সালতানাত গড়ে তোলেন। তাঁর আমলেই ১৩৬৪ সালে পান্ডুয়ায় আদিনা মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ইসলামিক ঐতিহাসিকদের মতে, সিরিয়ার বিখ্যাত উমাইয়া মসজিদের আদলে এই আদিনা মসজিদ গড়ে তোলা হয়েছিল। সেই সময় ভারতীয় উপমহাদেশ সহ সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় সর্ববৃহৎ মসজিদ ছিল এটি। এখানে ১০ হাজার মানুষ একসঙ্গে বসে নমাজ আদায় করত। বর্তমানেও পশ্চিমবঙ্গের সর্ববৃহৎ মসজিদ এটাই। অনেকে দাবি করেন ভারতের মধ্যে দিল্লির জামা মসজিদের পর আদিনা মসজিদই দ্বিতীয় বৃহত্তম। ১৩৭৩ সালে এটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। কিন্তু ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায় বা অরাজনৈতিক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বঙ্গীয় হিন্দু সেনার দাবি, ভগবান আদিনাথের মন্দির ভেঙে সিকান্দার শাহ’র আমলে এই মসজিদ গড়ে তোলা হয়েছিল!
আদিনা মসজিদ নিয়ে এই বিতর্কে রসদ অবশ্য যথেষ্ট মাত্রাতেই আছে। এই মসজিদে ঢুকতে গেলে প্রধান প্রবেশপথের মাথার উপরের খিলানে একটা বিষ্ণু মূর্তি দেখা যাবে। এছাড়াও অন্য খিলানের মাথায় গণেশের মূর্তি, মহাদেবের মূর্তি, নৃত্যরত দেবদাসীর মূর্তিও আছে। যদিও কালের নিয়মে বা পরিকল্পিতভাবে এই মূর্তিগুলি বর্তমানে বিকৃত অবস্থাতেই দেখা যায়। এছাড়াও মসজিদের বহির্ভাগ ও অভ্যন্তর ভাগের বেশকিছু জায়গায় পদ্মফুল, সাপের মত প্যাঁচানো অলঙ্করণ, একটি জায়গায় মন্দিরের মত থাক থাক সিঁড়ির উপস্থিতি এইগুলি তুলে ধরেই হিন্দুত্ববাদীদের দাবি, আজ থেকে প্রায় সাড়ে ৬০০ বছর আগে আদিনাথ অর্থাৎ ভগবান শিবের মন্দির ভেঙে গড়ে উঠেছিল আদিনা মসজিদ। একে আবার পুরনো মন্দির রূপে ফিরিয়ে দিতে হবে!
আদিনা মসজিদ প্রাঙ্গনে বহু সমান ভাবে ভাঙ্গা পিলার দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এমনকি জমিতে এমন বহু পিলার পরপর আছে যেগুলি দেখলে মনে হবে একেবারে গোড়া থেকে কেউ বুঝি কেটে নিয়েছে! এই বিষয়টিকে তুলে ধরে হিন্দুত্ববাদীদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, এই ক্ষতবিক্ষত পিলারগুলি বুঝিয়ে দিচ্ছে আদিনাথের মন্দিরের উপর আক্রমণ করেছিল সিকান্দার শাহ’র বাহিনী। তারা জোর করে হিন্দু মন্দিরকে মসজিদে রূপান্তরিত করে। যদিও উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে আদিনা মসজিদেরই এখন ভগ্নপ্রায় অবস্থা।আদিনা মসজিদ নিয়ে হিন্দুত্ববাদীদের দাবির সঙ্গে জ্ঞানব্যাপী মসজিদ সংক্রান্ত দাবির মূলগত কোনও ফারাক নেই। তবে এই নিয়ে বিপরীত মতাদর্শীদের যুক্তিগুলিও খুব একটা ফেলে দেওয়ার নয়।
হিন্দুত্ববাদীদের দাবির বিরোধিতা করে ঐতিহাসিকদের একাংশ বলছেন, মোট চারটি ধাপে রূপ পরিবর্তন করে আজকের আদিনা মসজিদ গড়ে উঠেছে। তাঁদের মতে, এটি সর্বপ্রথম জৈন তীর্থঙ্কর আদিনাথের মন্দির ছিল। কিন্তু পাল রাজবংশের হাত ধরে বাংলায় বৌদ্ধ যুগ শুরু হওয়ার পর বহু জৈন ও হিন্দু মন্দির রূপ পরিবর্তন করে তা বৌদ্ধদের উপাসনাস্থল বা বিহারে পরিণত করা হয়। পান্ডুয়ার আজকের আদিনা মসজিদও সেই সময় জৈন তীর্থঙ্কর আদিনাথের মন্দির থেকে বৌদ্ধ বিহারে পরিণত হয়েছিল। পরবর্তীতে লক্ষণ সেনের আমলে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের দাপট শুরু হলে এই বৌদ্ধ বিহার আদিনাথের মন্দির বা ভগবান শিবের মন্দিরে পরিণত হয়। আবার ইলিয়াস শাহি বংশের শাসনামলে সিকান্দার শাহ রাজা হলে এটিকে মসজিদে পরিণত করা হয়।
ইতিহাসবিদদের এই মত যদি সত্যি হয় তবে আদিনা মসজিদের রূপ পরিবর্তন করে তা হিন্দু মন্দিরে পরিণত করার দাবি ধোপে টেকে না। বোঝাই যাচ্ছে শাসক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই ধর্মস্থলের পরিচয় বারবার বদলে গিয়েছে। সেক্ষেত্রে এটিকে যদি পরিবর্তন করতেই হয় তবে জৈন মন্দিরের রূপ ফিরিয়ে দেওয়াটাই বেশি যুক্তিসঙ্গত!
তবে ঐতিহাসিকদের একটি বড় অংশের দাবি, সিকান্দার শাহ সম্পূর্ণ নতুনরূপেই ফাঁকা জমির উপর আদিনা মসজিদ গড়ে তুলেছিলেন। পদ্মফুলের যে অলঙ্করণ বা সাপ আছে তা একেবারেই মসজিদ নির্মাণের কাজে নিযুক্ত শিল্পীদের নিজস্ব কল্পনা। এগুলি ইসলাম ধর্মের মূল ভাবনার বিরোধী নয় বলে শাসকরাও কোনও প্রতিবাদ জানাননি। উল্টে তাঁদের দাবি, আদিনা মসজিদের উপর হিন্দু রাজাই প্রথম আক্রমণ করেছিলেন। মুঘলদের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে বাংলায় ইলিয়াস শাহি বংশের শাসন লোপ পায়। এরপর গণেশ নামে এক ব্যক্তি গৌড়বঙ্গের শাসনভার হাতে নেন। তিনি উগ্র ইসলাম বিদ্বেষী ছিলেন বলে ঐতিহাসিকদের কেউ কেউ দাবি করেছেন। সেই গণেশই আদিনা মসজিদে হামলা চালিয়ে বেশ কিছু বিকৃতি ঘটান বলে দাবি। খিলানগুলির উপর গণেশ, মহেশ্বর, বিষ্ণুর যে মূর্তিগুলো বসানো আছে সেগুলি পরবর্তীকালে রাজা গনেশের নির্দেশেই বসানো হয়। রাজা গণেশ আদিনা মসজিদে নমাজ আদায় বন্ধ করে দিয়েছিলেন এমনও অভিযোগ ওঠে।
পরবর্তীতে মুসলিম শাসকদের সম্মিলিত আক্রমণে রাজা গণেশ হেরে যান। সেই সময় তাঁর শিশু পুত্র যদুকে সামনে রেখে তিনি নিজের প্রাণ রক্ষা করেন। বিনিময়ে ছেলে যদু হিন্দু থেকে ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়ে জালালউদ্দিন নামে সিংহাসনে বসেন। তিনি একজন নিষ্ঠাবান ইসলামিক শাসক রূপে রাজত্ব করেন বলে কিছু ঐতিহাসিকের দাবি। তাঁর নির্দেশেই আবার আদিনা মসজিদে নমাজ আদায় শুরু হয়।
সবমিলিয়ে একটা বিষয় পরিষ্কার, আদিনা মসজিদ নিয়ে নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছনো খুব সহজ কোনও কাজ নয়। কারণ তিনটি পরস্পর বিরোধী দাবি এখানে উঠে আসছে।
তবে ইতিহাস প্রমাণ করে দিয়েছে উগ্র ইসলামিক শাসকদের হাতে শুধুই হিন্দু মন্দির আক্রান্ত হয়েছে তা নয়। বরং এই বাংলাতেই সেন আমলে উগ্র হিন্দুত্ববাদী শাসকরা বহু বৌদ্ধ বিহার মাটিতে মিশিয়ে দেন। আজও বহু বিখ্যাত হিন্দু মন্দির খুঁটিয়ে লক্ষ্য করলে বোঝা যাবে সেখানে বৌদ্ধ স্থাপত্য রীতির নিদর্শন জ্বলজ্বল করছে।
আসলে আজ থেকে ৫০০-৬০০ বছর আগে ধর্মের উপর আক্রমণ করবে বলে শাসকরা মন্দির, মসজিদ, বৌদ্ধবিহার আক্রমণ করত না। সেই সময় শাসন কাজের বড় অংশ জুড়েই অবস্থান করত ধর্ম। তাই হেরে যাওয়া রাজার আমলে গড়ে তোলা ধর্মস্থানে আঘাত মানে সেই রাজার প্রতিপত্তিকে গুঁড়িয়ে দেওয়া, এমনই ধারণা চালু ছিল। সম্ভবত সেই সময় নিজের আধিপত্য জাহিরের অন্যতম মাধ্যম ছিল অন্য ধর্মের উপাসনাস্থল নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা। তাই বৌদ্ধ শাসককে হারিয়ে ক্ষমতা দখল করা হিন্দু রাজা বৌদ্ধ বিহার ধ্বংস করেছেন। আবার হিন্দু রাজাকে পরাস্ত করে সিংহাসনে বসা মুসলমান শাসক হিন্দু মন্দির ধ্বংস করে হয়ত মসজিদ তৈরি করেছেন। মুসলমান শাসক অপর মুসলমান শাসককে হারিয়ে ক্ষমতা দখল করে মসজিদ ধ্বংস করেছেন এমন নজিরও প্রচুর আছে।
কিন্তু যুক্তি নয়, সংখ্যাগুরুরর আধিপত্যবাদ থেকেই বোধহয় হিন্দুত্ববাদীরা এই দেশ, এই বাংলায় একের পর এক প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী মসজিদ করায়ত্ব করার নেশায় মেতে উঠেছেন। তাঁরা ইতিহাসের গতিপ্রকৃতি, তার চলন মানতে মোটেও রাজি নয়। তাই আদিনা মসজিদের পাশাপাশি ত্রিবেনীর জাফর খাঁ গাজি দরগাকে পরবর্তী লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে বঙ্গীয় হিন্দু সেনা! অরাজনৈতিক হিন্দুত্ববাদী সংগঠনটির সদর্পে ঘোষণা, এটি অতীতে বিষ্ণু মন্দির ছিল। তাকে আবার পুরনো রূপে ফিরিয়ে দেওয়া হবে! উল্লেখ্য এই জাফর খাঁ গাজি দরগা হল অবিভক্ত বাংলার প্রথম মসজিদ। এটি আজ থেকে ৭০০ বছরেরও বেশি সময় আগে গড়ে ওঠে।
অতীতে গিয়ে ইতিহাসের ঘটনাক্রমকে ‘এডিট’ করতে চাওয়ার এই ইচ্ছের চূড়ান্ত পরিণতি কী বা এর শেষ কোথায় তা সত্যিই আমারা জানি না!