মনভারী করা নবমী নিশি শুরু হবার সাথে সাথেই ভারতীয় ক্রিকেট জগতে নেমে এলো শোকের ছায়া। চলে গেলেন ভারতের প্রাক্তন জাতীয় ক্রিকেটার বিষেন সিং বেদী।
পনের বছর বয়সে উত্তর পাঞ্জাবের পক্ষে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন। এর মাত্র দুই বছর পূর্ব থেকে ক্রিকেটে হাতে খড়ি হয়।[২] পরবর্তীতে ১৯৬৮-৬৯ মৌসুম থেকে রঞ্জি ট্রফিতে দিল্লির পক্ষে খেলতে থাকেন। তন্মধ্যে ১৯৭৪-৭৫ মৌসুমে রেকর্ডসংখ্যক ৬৪ উইকেট লাভ করেন। এছাড়াও ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেটে অনেকগুলো বছর নর্দাম্পটনশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ১৫৬০ উইকেট নিয়ে খেলোয়াড়ী জীবন সমাপ্ত করেন যা যে-কোন ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ।
১৯৬৯-৭০ মৌসুমে কলকাতায় অনুষ্ঠিত সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিনি তার সেরা বোলিং পরিসংখ্যান ৭/৯৮ লাভ করেন। ১৯৭৮-৭৯ মৌসুমে পার্থে একই দলের বিরুদ্ধে টেস্টের সেরা ১০/১৯৪ করেন। ১৯৭৬ সালে কানপুরে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত টেস্টে একমাত্র অর্ধ-শতক ও অপরাজিত ৫০* রান করেন। একই মৌসুমে মনসুর আলি খান পতৌদি’র পরিবর্তে দলের অধিনায়ক মনোনীত হয়। অধিনায়ক হিসেবে ১৯৭৬ সালে পোর্ট-অব-স্পেনে অনুষ্ঠিত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তৃতীয় টেস্টে প্রথম জয় পান। ঐ খেলায় ভারত তৎকালীন ৪র্থ ইনিংসে রেকর্ড ৪০৬ রান সংগ্রহ করে ভারত স্মরণীয় জয় পায়। এরপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিজ দেশে ২-০ সিরিজে জয় পায়। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে ইংল্যন্ডের বিপক্ষে নিজ দেশে ৩-১, বিদেশে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩-২ এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে ২-০ সিরিজ পরাজয়ের ফলে সুনীল গাভাস্কার তার স্থলাভিষিক্ত হন।
ল্যান্স গিবসের প্রতিটেস্টে ১৬.৬২ ওভার মেইডেন ওভার লাভের পর তিনি ১৬.৩৫ ওভার মেইডেন নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছেন। এছাড়াও প্রতি উইকেট প্রাপ্তিতে ৪.২ মেইডেন ওভার দেন।
ইনিংসে আট উইকেট লাভবিহীন অবস্থায় ১৫৬০ উইকেট নিয়ে সর্বাগ্রে অবস্থান করছেন তিনি। ১৫৩৬ উইকেট নিয়ে নিকটতম স্থানে অবস্থান করছেন কেন হিগস। ২০০৮ সালে উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমেনাক ঘোষণা করে যে, বেদী ক্রিকেটের ইতিহাসে সেরা পাঁচ ক্রিকেটারের একজন, যিনি বর্ষসেরা ক্রিকেটারের খেতাব লাভে সক্ষম হননি। তিনি নিজেই পোশাক-আশাক পরিষ্কার করেন যাকে তিনি তার ভাষায় কাঁধ ও আঙ্গুলের সেরা ব্যায়াম হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
অধিনায়ক থাকাকালীন বেদী বেশকিছু বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৭৬ সালের রেকর্ডভাঙ্গা ইনিংস খেলার টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাদের সেরা চারজন ফাস্ট-বোলারকে বোলিং আক্রমণে নামায়। তিনি এ কৌশল বুঝতে পারেন ও দুইজন খেলোয়াড় রিটায়ার্ড হার্ট হলে দ্রুত ইনিংস ঘোষণা করেন। এরফলে দ্বিতীয় ইনিংসে পাঁচজন খেলোয়াড় আঘাতের কারণে মাঠে নামেননি।
আজ কিছুক্ষন আগেই তার বার্ধক্যজনিত রোগের কারনে মৃত্যুর খবর আসে। স্বাভাবিক ভাবেই দেশের জাতীয় ক্রিকেট প্রাক্তনীদের মধ্য ও অন্যদের মধ্যে নেমে আসে শোকের ছায়া।