পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ ভারতের প্রথম প্রধান মন্ত্রী বা প্রথম রাষ্ট্রপতি কে প্রথম ভারতীয় অলিম্পিক জয়ীর নাম জিজ্ঞেস করলে অনেকেই বলতে পারবে। কিন্তু প্রথম কোন ভারতীয় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা পাশ করেছিল জিজ্ঞেস করলে তার উত্তর বোধহয় কেউই দিতে পারবেন না। হ্যাঁ একজন বাঙালি প্রথম সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় পাশ করেছিলেন। তিনি জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সুযোগ্য পুত্র রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের মেজদাদা সত্যেন্দ্র নাথ ঠাকুর।
সপ্তদশ শতকে ইংরেজরা ভারতে আসে বাণিজ্য করতে। যদিও ভারত দখল করে নিয়ে তারা রাজত্ব শুরু করে। সেই সময় ব্রিটিশ সরকারের কোন উচ্চ পদে ভারতীয়দের স্থান ছিল না। ১৮৩২ সালে প্রথম তারা সরকারি পদে
ভারতীয়দের প্রবেশের অধিকার দেয়। পড়ে কালেক্টরের পোস্টেও ভারতীয়দের নিয়োগ শুরু হয়। কিন্তু ১৮৬০ সাল পর্যন্ত সিভিল সার্ভিসে ভারতীদের প্রবেশাধিকার ছিল না। ১৮৬১ সালে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস অ্যাক্ট চালু চলে তাতে বলা হয় ভারতীয়রা সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় পাশ করলে তাদের সুযোগ দেওয়া হবে। পরীক্ষার জন্য বয়সসীমা ছিল ২৩ বছর। ইংরেজরা আশা করেছিলেন এত কঠিন একটা পরীক্ষা ভারতীয়দের পক্ষে পাশ করা সম্ভব নয়। কিন্তু ১৮৬৩ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে সত্যেন্দ্র নাথ ঠাকুর সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
আইন চালু হওয়ার পরই সত্যেন্দ্র নাথ ঠাকুর এবং মনোমোহন ঘোষ (প্রথম ভারতীয় ব্যারিস্টার) সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বসবেন ঠিক করেন। ২জনই লন্ডনে যান পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে। ১৮৬৩ সালে সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর পাশ করেন, মনোমোহন ঘোষ উত্তীর্ণ হতে পারেননি। বিদেশে ট্রেনিং ১৮৬৪ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন। ভারতে তার প্রথম পোস্টিং হয় বম্বে প্রেসিডেন্সি তে। পড়ে আমেদাবাদে ম্যাজিস্ট্রেট পদে ভূষিত হন। দীর্ঘ ৩০ বছর মহারাষ্ট্রে বিচারকের ভুমিকা পালন করেছেন এবং ১৮৯৬ সালে অবসর গ্রহণ করেন।
শুধু মাত্র সিভিল সার্ভিসই তার জীবনের একমাত্র কৃতিত্ব নয়। তিনি ব্রাহ্ম সমাজের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। মেয়েদের শিক্ষার প্রসার এবং পর্দা প্রথার বিরুদ্ধে তিনি অনেক কাজ করেছেন। এছাড়াও তিনি লেখক হিসেবেও খুব জনপ্রিয় ছিলেন। তার লেখা সেই সময় মানুষের কাছে খুবই সমাদরের ছিল। তার লেখা দেশাত্মবোধক গান ‘মিলে সবে ভারত সন্তান’- জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে মনোনীত হয়েছিল।
এহেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী একজন মানুষের জন্মদিন আজ। তাদের মত মানুষের সেই সময়ের লড়াইয়ের জন্যই আজকের মানুষ উন্নত। জন্মদিনে তাকে প্রণাম ও শ্রদ্ধা জানাচ্ছে দ্য ইন্ডিয়ান ক্রনিক্লস।