বহতা নদী সরকার
শংকর মালো। সংসারে মা, স্ত্রী ও দুই ছেলে-মেয়ে। মা অসুস্থ। তাঁর জন্য ওষুধ কিনতে হয়। ছেলেমেয়ে সরকারি স্কুলে পড়ে। তার পরও তাদের কিছু টাকা লাগে। ঘর সামলে অন্য কোনও কাজ করার সময় পায় না স্ত্রী। শংকর প্রতিদিন ভ্যানে রাবিশ, ইট, বালু, পাথর ইত্যাদি আনা-নেওয়া করে। প্রতিদিন পায় চার’শো থেকে পাঁচ’শো টাকা। যদি কোনদিন কাজ না থাকে তাহলে সেদিন বাড়িতে বসে থাকতে হয়। কিন্তু তিনবেলা পেটের খাবার তো লাগেই। দিনে পাঁচশো টাকা রোজগার করে সবজি বাজার চড়া দেখে চোখ-মুখে সে অন্ধকার দেখে। কীভাবে এই কম টাকায় চলবে তার সংসার?
শংকর মালোর মতো দেশের কোটি মানুষের এই একই সমস্যা। নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যাচ্ছে। রেশনে মোটা চাল পাওয়া গেলেও সবজির জন্য বাজারে গেলেই মানুষের মাথা ভনভন করে ঘুরছে সবজির দাম। বর্তমানে আলু ৪০ টাকা কিলো, পেঁয়াজ ৫০ টাকা, টমেটোর দাম বেড়ে হয়েছে ১০০ টাকা। বেগুন, ঝিঙে, উচ্ছের মতো সবজিতে তো হাতই দেওয়ারই উপায় নেই। কুমড়ো, ঢেঁড়স, পেঁপে, চিচিঙ্গা, পটলের দাম তো আকাশছোঁয়া । এই অবস্থায় বাজারে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে শংকর মালোর মতো সাধারণ মানুষের। আলু পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে পকেট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে গরিব মানুষের।
৩ জুলাই, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রক। তাদের দাবি, খুচরো বাজারে সেঞ্চুরি পেরিয়ে গিয়েছে টমেটো। ৯০ টাকায় দাঁড়িয়ে আছে পেঁয়াজ। আর আলুর দাম পৌঁছেছে ৮0 টাকা। এই তথ্য ওয়েবসাইটে আপলোড করেছে ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রক। এই তথ্যই বলে দিচ্ছে মূল্যবৃদ্ধি রুখতে পারেনি কেন্দ্রীয় সরকার। এই বছর সারা দেশ জুড়ে চলেছে তাপপ্রবাহ। তারপর অনেকটা সময় পর শুরু হয়েছে বৃষ্টি। সবজি ফলনের উপর পড়েছে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনার প্রভাব।
এছাড়া অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পেছনে কারণটা কি? আসুন জেনে নেওয়া যাক নেপথ্যের সেই করচা।
বেলগাভি জেলা সবজি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। জেলার অধিকাংশ তালুকে প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন হয় বেগুন, করলা, গাজর, শসা, কাঁচা মরিচ, আলু, বাঁধাকপি, ফুলকপি ও বিটরুটসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি। গ্রীষ্মকালে বোরওয়েল ও নদীর জল ব্যবহার করে সবজি চাষ করা হয়। গত বছর মার্চ ও এপ্রিল মাসে খরার কারণে জেলার অধিকাংশ এলাকায় বোরওয়েল ও নদী শুকিয়ে যায়। এতে ৯ হাজার হেক্টরের মধ্যে মাত্র ৪ থেকে ৫ হাজার হেক্টর সবজি চাষ হয়। স্থানীয়ভাবে সবজির উৎপাদন ছিল অর্ধেকেরও কম, যা উৎপাদন হ্রাস ও মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
বর্তমান ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে বেলগাভি জেলার বাইরে থেকে সবজি আমদানি করা হচ্ছে। যেমন- রানেবেননুর থেকে মরিচ, গদগ জেলার ধনে, টমেটো, চিক্কামগালুরু থেকে মটরশুটি, কুমড়ো, পুনে থেকে বিটরুট, মহারাষ্ট্রের সাতারা, মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর থেকে বাজারে প্রচুর পরিমাণে গাজর সরবরাহ করা হচ্ছে।
পেট্রোল ডিজেলের দাম বেড়েছে। এর কারণে সবজি আনা-নেওয়ারও খরচ বেড়েছে। বর্ষা এলে দাম কমবে সে গুড়ে বালি। তাই মধ্যবিত্তের অল্পতেই তুষ্ঠ থাকা ছাড়া অন্য কোনও উপায় আপাতন দেখা যাচ্ছে না।