দেবী সরস্বতীর বাহন হাঁস হওয়ার পেছনে গভীর প্রতীকী অর্থ রয়েছে। হিন্দু ধর্মে প্রতিটি দেব-দেবীর বাহনের বিশেষ তাৎপর্য থাকে, যা তাঁদের শক্তি ও গুণাবলিকে প্রকাশ করে। হাঁসকে দেবী সরস্বতীর বাহন হিসেবে বেছে নেওয়ার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে:
১. বিবেক ও বিচক্ষণতার প্রতীক
হাঁসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো নীর-ক্ষীর বিবেক বা দুধ-জল পৃথক করার ক্ষমতা। পৌরাণিক বিশ্বাস অনুযায়ী, হাঁস জল ও দুধ মিশ্রিত থাকলে দুধটুকু গ্রহণ করে এবং জল ফেলে দেয়। এটি প্রতীকীভাবে বোঝায় যে, সরস্বতী জ্ঞানের দেবী হিসেবে মানুষকে সত্য-মিথ্যা, শুদ্ধ-অশুদ্ধ, জ্ঞান-অজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য করার শিক্ষা দেন।
২. শুদ্ধতা ও জ্ঞানের প্রতীক
হাঁসকে শুদ্ধতা ও পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়। সরস্বতী দেবী স্বচ্ছতা, বিশুদ্ধ জ্ঞান এবং অলৌকিক জ্ঞানের প্রতীক, যা হাঁসের সাদা রঙের সঙ্গে মিলে যায়।
৩. জ্ঞানের গভীরতা ও মুক্তচিন্তা
হাঁস সাধারণত জলাশয়ে বাস করে, কিন্তু সে আকাশেও উড়তে পারে। এটি প্রতীকীভাবে বোঝায় যে, জ্ঞানী ব্যক্তির শুধু মাটির বাস্তবতা নয়, আধ্যাত্মিক উচ্চতাও বোঝার ক্ষমতা থাকা উচিত। দেবী সরস্বতীর জ্ঞান কেবল পার্থিব নয়, তা আধ্যাত্মিক ও দার্শনিক উচ্চতাও ধারণ করে।
৪. মোক্ষ ও আত্মজ্ঞান
হাঁসকে সংস্কৃত ভাষায় “হংস” বলা হয়, যা “অহংসোহম” বা “আমি ব্রহ্ম” দর্শনের সঙ্গে যুক্ত। এটি মোক্ষ বা আত্মজ্ঞান লাভের প্রতীক, যা সরস্বতীর মূল শক্তির একটি দিক।
৫. ধ্যান ও স্থিরতার প্রতীক
হাঁস জলাশয়ে ধীরে ও শান্তভাবে ভাসতে পারে, যা ধ্যান, মনঃসংযোগ এবং আত্মসংযমের প্রতীক। বিদ্যা অর্জনের জন্য এই গুণগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই প্রতীকগুলোর মাধ্যমে হাঁসকে দেবী সরস্বতীর বাহন হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে, যা তাঁর জ্ঞান, বিচক্ষণতা, শুদ্ধতা ও আধ্যাত্মিকতার শক্তিকে প্রকাশ করে।