বাঙলা ও বাঙালীর সেরা উৎসব হল শারদ উৎসব । বাঙলা তথা বিশ্ববাসী সারাটা বছর ওপেক্ষা করে থাকেন এই পাঁচ টা দিনের জন্য। কৈলাস থেকে মা ঊমা আসবে তার বাপের বাড়ী। খুব বেশী দিন আড় বাকীও নেই। তাই বাঙলা ও বাঙালীর প্রতি ঘরে সাজো সাজো রব। পুজো মণ্ডপের কাজ ও প্রায় শেষের দিকে। জাতি ধর্ম বিভেদ ভূলে , ধনী থেকে দরিদ্র সকলের মুখেই ফুটে ঊঠবে আনন্দের হাসি । কিন্তু যাদের কথা কেঊ ভাবে না ? অথচ যাদের কে দেখা যায় মা দুর্গা ও তার সন্তান দের সাথে আলাদা আলাদা রূপে সেই অবলা প্রাণী বা পোষ্য দের নিয়ে কজন -ই বা ভাবেন ? খবরের শিরোনামে থেকে যায় শুধু দেশ জুড়ে অবলা প্রাণীদের ওপর অত্যাচারের কথা । তাই এবার বিধান সরণী এটলাস ক্লাবের দুর্গা পুজোর ভাবনায় ঊঠে এলো এই অবলা প্রাণীদের ভাবনা। কোলকাতায় এই প্রথম বিধান সরণী এটলাস ক্লাব আয়োজোন করতে চলেছেন ”পেট ফ্রেন্ডলি পুজো মণ্ডপ” ।
পুজোয় ঠাকুর দেখতে বেড়িয়ে আমাদের অনেক কেই নয়তো আমাদের পোষ্য দের একলা ঘরে বন্ধ রেখে আসতে হয় আড় নাহলে পরিবারের কোন একজন সদস্য কে তাদের দেখা শোনার জন্য গৃহ বন্দী থাকতে হয়। এছাড়াও আমরা যারা পশু প্রেমী , আমাদেরও অনেকের মনে হয়েছে এই আনন্দ উৎসব থেকে এই অবলা প্রাণীরা কোন না কোন ভাবে ব্রাত্য থেকে যায়। পুজোর কটা দিন তারা সামান্য তাদের প্রাত ভ্রমণ ও হয়ে যায় বন্ধ। এবার সেই অবলা প্রাণীদের কথা ভেবেই বিধান সরণী এটলাস ক্লাবের এই উদ্যোগ, যাকে সাধুবাদ জানাতেই হয়।
বিধান সরণী এটলাস ক্লাবের থিম শিল্পী সায়ক রাজ আমাদের জানালেন, এই ভাবনার শুরু টা হয়েছিল বেশ কিছুদিন আগে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল ও বিতর্কিত হওয়া একটি ছবি কে ঘিরে।
কেদার নাথে একজন তার পোষ্য সারমেয় কে নিয়ে গিয়েছিলেন , এবং মন্দিরে প্রসাদ ও খাইয়েছিলেন। সেই ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হতেই শুরু হয়েছিল বিতর্ক। স্বয়ং পশুপতি নাথের কাছে কেন পশুরা থাকবে ব্রাত্য ? পশুপতি অর্থাৎ যিনি সমস্ত প্রাণী কুলের নাথ বা পিতা, তিনিই আর কেঊ নন স্বয়ং মহাদেব আর তার স্ত্রী হলেন মা দুর্গা। তিনি সকল প্রাণী কুলের মা, জগত জননী । তার সাথে আসেন তার চার সন্তান গণেশ লক্ষ্মী সরস্বতী ও কার্তিক এই পাঁচ জনের পরিবার আসেন তাদের বাহন বা পোষ্য দের নিয়েই অথচ মর্তে সেই প্রাণীদের কেই আমরা ব্রাত্য করে রাখি এই আনন্দ উৎসব থেকে ।
তাই এবার বিধান সরণী এটলাস ক্লাবের থিম ”অনন্ত আশ্রয়” । উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও থাকবে কোন পশু প্রেমী সংস্থা বা তৎসম কোন গুণীজন। প্রতিপদ থেকে তৃতীয়া অবধি যেখানে অন্যান্য পুজো মণ্ডপে থাকে সমাজের বিশিষ্ট গুণীজন বা সেলেব দের আমন্ত্রণ এখাণে থাকবে সমস্ত পশু প্রেমী দের সাথে তাদের সারমেয় দের আমন্ত্রণ। যাতে এই অবলা প্রাণীরাও এই আনন্দ উৎসবে অংশ গ্রহণ করতে পারে। এ ছাড়াও পুজোর বাকি দিন গুলিতে অর্থাৎ চতুর্থী থেকে দশমী অবধি যদি কেঊ তার সারমেয় দের নিয়ে মণ্ডপে দর্শন করতে চান তার জন্যও ঠাকছে বিশেষ প্রবেশ ও বাহির পথ যেখানে যাতে অন্য দর্শনার্থী দের বা সারমেয় প্রেমীদের কারোর কোন অসুবিধা না হয়। তবে চতুর্থী থেকে দশমী তে সারমেয় নিয়ে যেতে গেলে একটি বিশেষ ফোন নম্বরে আধ ঘণ্টা আগে ফোন করে জানিয়ে দিতে হবে। খুব তাড়াতাড়ি সেই ফোন নম্বর ঘোষণা করবেন এই পূজো কমিটির সদস্যরা তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে।
পুজোর এই কটা দিন বিধান সরণী এটলাস ক্লাবের মণ্ডপে সর্বক্ষণ থাকবে বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী (সারমেয় প্রেমী) যাতে সারমেয় দর্শনার্থী দের কোন রকম অসুবিধা না হয় সেই দিকে নজর রাখার জন্য। তাই এবার আমরা সবাই আমাদের দেশী বিদেশী সারমেয় বা পোষ্য দের নিয়ে এই আনন্দ উৎসবে সামিল হব বিধান সরণী এটলাস ক্লাবের পুজো মণ্ডপে।
দ্যা ইণ্ডিয়ান ক্রনিকেলস , বিধান সরণী এটলাস ক্লাব কে তাদের এই ভাবনার জন্য জানায় অভিনন্দন ও কুর্নিশ ।