চিকিৎসকের মতে, অনেক ক্ষেত্রে মানুষ খুব বেশি এক্সারসাইজ করলে হতে পারে অ্যারিদমিয়া। তখন খুব বাড়ে বা কমে যায় হার্ট রেট। এর থেকেই সমস্যা হয়। জিমের সময় এই লক্ষণগুলি দেখলে বসে পড়ুন:-
১) চোখে অন্ধকার দেখছেন।
২) মাথা ঘুরছে।
৩) শ্বাসকষ্ট শুরু হলে। মনে হবে যেন দম আটকে গিয়েছে।
৪) বুকে ব্যথা হলে। বিশেষত বুকে চাপ চাপ ব্যথা।
চিকিৎসকদের মতে, জিম করতে গেলে নিতে হবে সঠিক ট্রেনার ও চিকিৎসকের পরামর্শ। তবেই জিম করা উচিত, ট্রেডমিলে দৌড়ানো উচিত। কারণ আপনার শরীর এসবের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবেন কিনা, তা আপনি বুঝতে পারবেন না। তাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। একটা মস্ত সমস্যা। এক্ষেত্রে শরীর আপনার জিমের গতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছে না। সাধারণ হাঁটা, জগিং বা ফ্রি হ্যান্ডে এমন হয় না। বরং কিছু কঠিন ব্যায়ামে এই সমস্যা হচ্ছে। আসলে জিমে মানুষ কঠিন ব্যায়াম করে। ভারী ওজন তোলেন, ট্রেডমিল করেন। এতে সমস্যা তৈরি হয়ে যায় অনেকের। তবে জিম করা শরীরের জন্য ভালো। মানুষ এখন ফ্যাট জাতীয় খাবার খান। এছাড়া মাথায় রাখতে হবে যে ওজন অনেকের বেশি। পাশাপাশি মদ্যপান, ধূমপানও কিন্তু হার্টের ক্ষতি করছে।এগুলি কমাতে পারলেই হার্টের রোগের আশঙ্কা কমবে। মাথায় রাখতে হবে যে ডায়েট ঠিকমতো রাখা দরকার। এছাড়া জিম করতে হবে ভালো জায়গায়। এমনকী মাঝেমাঝেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা দরকার। বিশেষত বয়স বাড়লে আপনাকে বছরে একবার ইকো বা ইসিজি করতেই হবে। তবেই সুস্থ থাকতে পারবেন।
মাঝ বয়সীদের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার নেপথ্যে একাধিক ফ্যাক্টর কার্যকরী হতে পারে। যেমন ওবেসিটি, যার সঙ্গে সম্পর্কিত রয়েছে টাইপ টু ডায়াবেটিস। এছাড়াও রয়েছে হৃদরোগ নিয়ে পরিবারের ইতিহাস। ধূমপান ও কোলেস্টেরলের উচ্চমাত্রা। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের একটি রিপোর্ট বলছে, ২০১১ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ১.৫ শতাংশ হৃদরোগ দেখা গিয়েছে ৪৫ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের মধ্যে। দেখে নেওয়া যাক, কোন কোন কারণে হৃদরোগের সমস্যা মাঝবয়সীদের মধ্যে হতে শুরু করেছে?
১)পারিবারিক ইতিহাস- যদি পরিবারে কারোর হৃদরোগের সমস্যা থাকে,তাহলে একজন ব্যক্তির হৃদরোগ সম্পর্কে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। চিকিৎসকরা বলছেন, কেউ সুস্বাস্থ্যবান ও অ্যাক্টিভ হলেই যে তিনি এই রোগে আক্রান্ত হবেন না তা নয়। Familial hypercholesterolemia এমন একটি অবস্থা, যার ফলে জিনগতভাবেও হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা থাকে।
২) ডায়াবেটিস- ডায়াবেটিস কখনও বাংশগত সমস্যা হয়ে থাকে, আবার কখনও তা বংশগত নাও হতে পারে। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, হৃদরোগের সমস্যা বাড়ানোর ক্ষেত্রে টাইপ টু ডায়াবেটিস অন্যতম ফ্যাক্টর।
৩) মেদ- এছাড়াও অতিরিক্ত মেদ হৃদযন্ত্রের পক্ষে খুবই খারাপ। ওবেসিটির সমস্যা থেকে অনেকেই হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারেন। ওবেসিটি সঙ্গে নিয়ে আসে ডায়াবেটিস টাইপ টু, উচ্চ কলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ।
৪) রক্তচাপ- রক্তনালিকার ওজন বেড়ে গেলে সমস্যা বাড়তে থাকে। ফলে রক্তচাপ হৃদরোগের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। হাইপারটেনশন হৃদরোগের ক্ষেত্রে অন্যতম বড় কারণ। ফলে রক্তচাপ যাতে না বাড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৫) জীবনযাত্রা- অনেক সময় প্রভাব ফেলে হৃদরোগে। ধূমপানের বাড়বাড়ন্ত, ব্যায়াম না করার মতো ঘটনা বহু সময়ই সমস্যা তৈরি করে হৃদরোগের ক্ষেত্রে। এছাড়াও কোলেস্টেরল থাকা সত্ত্বেও অনেকেই তেল মশলাদার খাবারে অনেকেই কবজি ডুবিয়ে বসেন। এরফলে শুরু হয় সমস্যা। শুরু হয় হৃদরোগ।
৬) কোলেস্টেরল- কোলেস্টেরলের ফলে হৃদরোগের সমস্যা অনেক ক্ষেত্রেই বেড়ে যায়। উচ্চমাত্রায় শরীরে কোলেস্টেরল থাকলে হৃদরোগের ঝুঁকি প্রভূত বাড়তে পারে। বিভিন্ন থেরাপি ও ওষুধে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় কোলেস্টেরলকে।
৪০-এর পর শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো কার্যক্ষমতা হারাতে শুরু করে এবং শরীরে পুষ্টির অভাব দেখা দেয়। অথবা শরীর খাবার থেকে পুষ্টি সম্পূর্ণরূপে শোষণ করতে সক্ষম হয় না। এই পরিস্থিতিতে এই সাপ্লিমেন্টগুলি পুষ্টির অভাব পূরণের কাজ করে। তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক ৪০-এর পর মহিলাদের কোন সাপ্লিমেন্টগুলি নিয়মিত গ্রহণ করা উচিত।
ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড
ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আপনার শরীরের জন্য একাধিক উপকার নিয়ে আসে। বয়সের পর হার্ট ও হাড়ের যত্ন নেয় এই ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। শুধু তাই নয়, অনেক গবেষণায় দেখা গেছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের মাধ্যমে খারাপ কোলেস্টেরল যেমন কমানো যায়, তেমনি এটি আপনাকে স্ট্রোকের ঝুঁকি থেকেও দূরে রাখে। সামগ্রিকভাবে, ৪০ বছর বয়সের পরে সম্পূর্ণ সুস্থ থাকার জন্য ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা আপনার উচিত।
ভিটামিন বি-১২
ভিটামিন বি-১২ হল একটি ভিটামিন যা আপনার হৃদপিণ্ড, হাড়, ত্বক এবং আপনার চোখকে সুস্থ রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এটি শুধু আপনাকে অনেক রোগ থেকে দূরে রাখে না, বরং এটি আপনার হৃদয়, চোখ এবং ত্বককে সুস্থ রাখে। সাধারণত, ফ্যাট-ফ্রি মাংস, ডিম, মাছ, দুগ্ধজাত দ্রব্য ইত্যাদির মতো অনেক খাবার থেকে এই ভিটামিন বি-১২ পাওয়া যায়।
কিন্তু ৪০ বছর বয়সের পর পাকস্থলীর ভিতরে উপস্থিত অ্যাসিডের মাত্রা কমে যায়। যার ফলে শরীর খাবারের মাধ্যমে ভিটামিন বি-১২ শোষণ করতে পারে না। এই পরিস্থিতিতে, ভিটামিন বি-১২ সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা অপরিহার্য হয়ে ওঠে। শুধু তাই নয়, সাম্প্রতিক এক গবেষণার মাধ্যমে আরও জানা গেছে, যেসব মহিলারা ভিটামিন বি-১২ ও বি-৬ এবং ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করেন, তাঁদের মধ্যে ম্যাকুলার ডিজেনারেশনের ঝুঁকি ৩৪ শতাংশ কম।
প্রোয়োবায়োটিক্স
প্রোবায়োটিক্সে যতই ভিটামিন বা মিনারেল না’ই থাকুক, কিন্তু ৪০-এর পর সুস্থ থাকার জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বয়স বৃদ্ধির পাশাপাশি আপনিও চান আপনার হার্ট সুস্থ থাকুক, আপনার পেটের সমস্যা না হোক- এর জন্য প্রোবায়োটিক্স দরকার। প্রোবায়োটিক্সের উৎস হল দুধ, দই এবং সোয়া জাতীয় পণ্য। কিন্তু অনেক সময় এই দুগ্ধজাত পণ্য সহ্য হয় না অনেকের। এই ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক্স সাপ্লিমেন্ট শরীরের সেই সব পুষ্টির চাহিদাকে পূরণ করে।
ভিটামিন ডি
বয়সের সঙ্গে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে। ভিটামিন ডি-এর অভাব শরীরে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্তন ক্যান্সার এবং কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ায়। এমতাবস্থায় ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পূরণ করলেই আপনি অনেক স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে রক্ষা পাবেন না। ভিটামিন ডি এর জন্য অনেক খাবার রয়েছে। কিন্তু এক বয়সের পর খাবার থেকে এগুলো পাওয়া একটু কঠিন। এমন পরিস্থিতিতে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি মেটাতে ভিটামিন ডি-৩ সাপ্লিমেন্ট নিতে পারেন।
ক্যালসিয়াম
ক্যালসিয়াম আমাদের শরীরের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। এটি শুধু হাড়কে মজবুত রাখে না। বরং এটি পেশী, স্নায়ু এবং হার্টেরও যত্ন নেয়। এমন অবস্থায় বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয়। যার কারণে হাড় ভাঙার ভয় তো থাকেই, সেই সঙ্গে হাড় সংক্রান্ত অন্যান্য সমস্যাও দেখা দিতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে, আপনি যদি আপনার প্রতিদিনের খাবার থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম না পান তবে আপনি এর জন্য ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট নিতে পারেন।
ম্যাগনেশিয়াম
যদি বয়সের পর রক্তচাপের সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি থাকে, তাহলে ম্যাগনেশিয়াম আপনার জন্য অমৃতের চেয়ে কম কিছু নয়। ম্যাগনেশিয়াম এমনই একটি মিনারেল, যার মাধ্যমে শুধু আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে না, বরং এটি ভিটামিন ডি-এর সাহায্যে হাড়ে ক্যালসিয়াম পরিবহনের কাজ করে। কিন্তু আমাদের খাবারে ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ খুবই কম। এমন পরিস্থিতিতে ম্যাগনেসিয়াম সাপ্লিমেন্টেশনের মাধ্যমে নিজেকে সম্পূর্ণ সুস্থ রাখতে পারেন। তবে মনে রাখবেন যে আপনি আপনার খাদ্যের জায়গায় এগুলি বেছে নেবেন না। বরং খাদ্যের সঙ্গে এগুলো সেবন করতে হবে।