আবারও ক্ষুদ্র ঋন প্রদানকারী সংস্থার চাপে আত্মঘাতী হলেন এক দম্পতি।
বিগত বেশ কিছু বছর ধরেই শহরতলী ও গ্রামাঞ্চলে বেশ কিছু ঋন প্রদানকারী সংস্থা নিম্নবিত্ত শ্রেনীর মানুষদের সাবলম্বি করার সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে ঋন প্রদান করে আসছে। তাদের মধ্যে সব থেকে বেশী উল্লেখযোগ্য নাম হল বন্ধন ফাইনান্স যা বর্তমানে ব্যাঙ্কে পরিনত হয়েছে। ঋনপ্রদানকারী এই ক্ষুদ্র সংস্থাই এখন মহীরুহ হয়ে উঠেছে। নিম্নবিত্ত মানুষের পাশে ক্ষুদ্র ঋন দিয়ে আর্থিক সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে এই বন্ধন ব্যাঙ্ক এখন শহরাঞ্চলেও তাদের ব্যাঙ্কের শাখা গুলিতে মোটা অঙ্কের টাকা গচ্ছিত না রাখলে সামান্য একাউন্ট খুলতেও দেন না। আসল রুপ বেরোতে শুরু করেছে বন্ধনের। এই বন্ধনের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েই ঠিক যত মানুষের উন্নতি হয়েছিল এবার ঠিক তত মানুষের জীবনে নেমে আসছে চরম দূর্গতি।
অন্যদিকে বিত্তশালী ব্যাবসায়ীরা সরকারী ও বেসরকারী ব্যাঙ্ক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋন খেলাপি করে বিদেশে পালিয়ে বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আর সেই ঋনের বোঝা রাজনৈতিক ভাবে ঘুরপথে চাপানো হচ্ছে সেই সাধারন নাগরিকদের ওপরেই।
আসলে নিম্নবিত্ত বা সাধারন মানুষ প্রয়োজনে ঋণে জড়িয়ে পড়লেও তারা ঋন শোধ না করতে পারলে, ঋন প্রদানকারী সংস্থার বেআইনি ও মানসিক অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে, তাদের জন্য কি আইনি সমাধান আছে তার সম্পর্কে কোন ধারনা রাখেন না। ফলত শেষ পর্যন্ত তাদের জীবনে নেমে আসে বিপর্যয়। এই ঘটনা ক্রমে বেড়েই চলেছে।
এবার ঋণের দায় আত্মঘাতী এক দম্পতি, পূর্ব বর্ধমানের বর্ধমান ২ নম্বর ব্লকের বড়সুলের গোপালপুর
এলাকার ঘটনা। মৃত ওই দম্পতির নাম হেমন্ত মালিক ও রেখা মালিক। জানা যায় প্রায় সাতটি মাইক্রোফাইনান্স ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়েছিলেন ওই দম্পতি। সেই টাকা তার ছোট ছেলেকে ব্যবসা করার জন্য দিয়েছিলেন। পরে ছোট ছেলে বাড়ি থেকে অন্য কোথাও চলে যাওয়ায় আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। বেশ কয়েকদিন এরপর বারংবার ব্যাংক থেকে চাপ আসে ওই দম্পতির কাছে ফলে সেই চাপ সহ্য করতে না পেরেই আত্মঘাতী হয়েছেন বলে জানিয়েছেন পরিবারের লোকজন। রাত্রে বেলা খাওয়া-দাওয়া পর শুতে যান ওই দম্পতি তারপরেই তারা গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন এমনটাই দাবি পরিবারের লোকজন। বৃহস্পতিবার সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে সারা না পাওয়ায় দরজা ভেঙ্গে ওই দম্পতির ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে । ঘটনাস্থলে শক্তিগড় থানা পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে বড়শুল প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা তাদের মৃত বলে ঘোষণা করে দেহ ময়না তদন্তের জন্য বর্ধমান মেডিকেল কলেজের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর সোমবার মৃত হেমন্ত বাবু ও তার স্ত্রী রেখা দেবীকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি জামালপুর থানার জামুদহ গ্রামে যান এবং ১৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার মাইক্রো ফাইন্সাস এর লোকেরা গিয়ে হেমন্ত বাবুর স্ত্রী কে হাত ধরে টানাটানি করে বাইরে বার করে এবং অপদস্থ করে সকলের সামনে। স্বামী স্ত্রী দুজনেই নিজের বাড়ি অর্থাৎ গোপালপুর গ্রামে ফেরেন গত কাল অর্থাৎ ২০ সেপ্টেম্বর বুধবার। পরিবারের লোকজন মনে করছে মাইক্রো ফাইন্সাস এর লোকেদের দ্বারা এই অপমান সহ্য করতে না পেরে গভীর রাতে আত্মহত্যা করছে দম্পতি।
জানা যায় বন্ধন ফাইন্সাস ও ইউনিটি ফাইন্সাস থেকে রেখা মালিকের নামে আনুমানিক দেড় লক্ষ টাকার লোন ও হেমন্ত বাবুর নামে এক লক্ষ টাকার লোন দেওয়া হয়েছিল। মৃতদের বড় ছেলে – মনেশ মালিক , ছোট ছেলে – রমেশ মালিক।