পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ আজ থেকে ঠিক ১৫০ বছর আগে আজকের দিনেই আলিপুর জেলা হাসপাতালে মারা যান বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শক্তিশালী লেখক মাইকেল মধুসূদন দত্ত। মাইকেল মধুসূদন দত্ত মৃত্যুর আগের মুহূর্তেই জানতে পেরেছিলেন কলকাতার কোনও কবরখানায় তাকে সমাধি দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি এবং কোন শ্মশানে তাকে দাহ করার অনুমতি দেয়নি। হ্যাঁ বাংলা সাহিত্যের বর্গের এটাই ছিল পরিণতি। হাসপাতালের মর্গে তার দেহ পচতে শুরু করেছিল।
অ্যাংলিকান চার্চের সিনিয়ার চ্যাপেলেইন রেভারেন্ড জন জার্বো বিশপের অনুমতি ছাড়াই শবদেহ সমাধিস্থ করার উদ্যোগ নেন। লোয়ার সার্কুলার রোডের খ্রিষ্টান কবরখানায় মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টা অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পর তার সমাধি দেওয়া হয়। সেখানে মাত্র ৪ দিন আগে তার ফরাসি স্ত্রী হেনরিয়েটা কে করব দেওয়া হয়েছিল তার ঠিক পাশেই কবর দেওয়া হয় তাকে।
শুধুমাত্র নিজের পছন্দমত ধর্ম বেছে নেওয়ার অপরাধে এই নির্মম পরিণতি এই প্রতিভাবান মানুষটার। যার কলম না আসলে বাংলা সাহিত্য শুরুই হত না বোধহয়। আজ এত বাংলা নাটক লেখা হয় অভিনয় করা হয়, কিন্তু সেসব কার হাত ধরে সৃষ্টি?
‘‘অলীক কুনাট্য রঙ্গে মজে লোক রাঢ়ে বঙ্গে। নিরখীয়া প্রাণে নাহি সয়।।‘’
বলে নাটক লেখা শুরু করেন তিনি। বাংলা সাহিত্যে নাটকের জন্মদাতা তিনি। শুধু কি নাটক? না তাতো নয়। বাংলা সাহিত্যে তার আরও অনেক অবদান। চতুর্দশ পদি পয়ার ছন্দ বাংলা ভাষায় তিনিই তো এনেছিলেন। তার লেখনী থেকে মেঘনাদবধ কাব্য না বেরোলে রামায়ণকে অন্য ভাবে দেখতে পারত না মানুষ। পুরাণের নায়িকাদের কথাও গলা তুলে উচ্চকণ্ঠে বলে গেছেন তিনি। ‘বীরাঙ্গনা কাব্য’ তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
সেদিন শেষ যাত্রায় তার ভক্ত অনুরাগী মিলে হাজার খানেকেরও বেশি লোক জড়ো হয়েছিল। কিন্তু সমাজের বিশিষ্টবর্গ মানুষ বা লেখক কাউকেই সেই শেষ যাত্রায় দেখা যায়নি। যে সমস্ত মানুষকে নিজের বই উৎসর্গ করে গেছেন তিনি তারা কেউই পা মেলায় শেষ যাত্রায়। ধর্ম পরিবর্তনের অপরাধে সবাই তাকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন তাই দূর থেকে অপরাধীর মতই চলে গেছেন তিনি। কিন্তু তিনি আছেন বাংলা সাহিত্যপ্রেমিদের মনে আছেন এবং থেকে যাবেন আজীবন।