গতকাল কলকাতার বিভিন্ন অংশে রাজ্যের শাসক গোষ্ঠীর বা তৃনমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে বেরিয়েছিল ”প্রতিবাদ” মিছিল। স্বাভাবিক ভাবেই রাস্তায় বেশ কিছুক্ষণের জন্য যান চলাচলে এসেছিল ধীর গতি। প্রথমত বুঝতে সময় লাগছিল এটা কি পথ অবরোধ নাকি মিছিল ? আশে পাশের লোকজন কে জিজ্ঞাসা করতে বুঝতে পারলাম এটা মিছিলের জমায়েত ,একটু পরেই এখন থেকেও মিছিল বেরোবে । প্রায় হাজার খানেক বা তার ও বেশি লোকের জমায়েত হয়েগেছে। আমাকে আমার গন্তব্যে যেতে হবে কিন্তু অটোর লাইনে একধিক অটো ফাকা দাড়িয়ে আছে কিন্তু তারা যাবে না কারন তারা অটো নিয়েই মিছিলে সামিল হবেন ।
মিছিলে জমায়েতের মূল বক্তা মাইকে চিৎকার করে কিছু বলে জাচ্ছিলেন কিন্তু সেটাও পরিস্কার শুনতে পাচ্ছিলাম না ভিড়ের মধ্যেয় একটা গুন গুন শব্দের জন্য। সবাই কি যেন একটা নিয়ে আলোচনা করেই চলেছে। কিন্তু অদ্ভুত ব্যপার এই হাজার মানুষের ভীড়ের মধ্যেয় সব রকম কাজ , ব্যবসা বন্ধ থাকলেও ঐ ভীড়ে একজন চা ওয়ালা কিন্তু ঠিক তার চা বিক্রি করে চলেছে , তার চায়ের খরিদ্দারের এখানে অভাব নেই । তিনি মণের আনন্দে চা পরিবেশন করে চলছেন।
যাইহোক, আমারও চায়ের একটু নেশা আছে তা অনেকেই জানেন। ফলত ও ভীড়ে চা ওয়ালা কে আমিও হাঁক দিলাম। চা ওয়ালা আমার কাছে এগিয়ে এসে আমাকে চা দিচ্ছেন ঠিক সেই সময়েই আমার পাশে দাড়িয়ে থাকা একজন ঘর্মাক্ত মলিন পোষাক পরিহিত লোক তিনিও চা ওয়ালা কে চা দিতে বলে তার পকেট থেকে মোবাইল ফোন বার করে কাঊকে ফোন করতে শুরু করলেন। চা- এ চুমুক দিতে দিতে আমি আমার গন্তব্যে কি ভাবে পৌছাব সেই চিন্তা করছি …. হঠাত করেই পাশের লোকটির বার্তালাপ আমার কানে এলো।
– দাদা, মিছিল শুরু হতে এখনও বেশ দেরী আছে । দুটো আড়াইটে বেজে যাবে। এদিকে তো স্কুল ছুটির টাইম হয়ে জাচ্ছে , ডিউটি টা মেরে আসবো ? হ্যাঁ আমরা সবাই এসেছি এখানে। ………… ঠিক আছে দাদা।
এর পরেই হাতে ধরে রাখা চা টা এক চুমুকে খেয়ে চায়ের কাপ টা ফেলেই কেমন যেন আশপাশ একবার চোখ টা ঘুরিয়ে নিয়ে প্যান্টের পকেট থেকে গাড়ীর চাবি বার করলেন। ততোক্ষণে আমি বুঝে গেছি ইনি একজন ওটো চালক।
চারপাশ দেখেই তিনি নিজেকে ভীড় থেকে পিছিয়ে নিয়ে , গলির মধ্যে রাখা ওটো-র দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করলেন। আমিও আমার গন্তব্যে যাবার একটা আশা নিয়ে ওনার পিছু নিলাম। ওনার কাছে একটু এগিয়েই জিজ্ঞাসা করলাম
-ঘোষপাড়া যাবেন নাকি ?
-আমার দিকে না তাকিয়েই অটোর ড্রাইভিং সীটে বসতে বসতে জানালেন, ঝুলনতলা নামিয়ে দেব, ওখাণ থেকে একটু খানি হেটে নেবেন। ঝপ করে বসুন।
আমিও ওনার কথা মত চুপচাপ ওনার ওটো তে বোশে পোড়লাম আর উনি ক্ষিপ্রগতি তে ওটো টা লাইন থেকে বের করে চালাতে শুরু করলেন। আমি প্রায় পিছনে গড়াগড়ি খেতে খেতে যখন একটু সামলে ঊঠলাম তখন আমরা মিছিলের জমায়েত থেকে অনেক টা দূরে চলে এসেছি। অটোর গতিও কমে এসেছে । ফাকা ওটো তে চা খাবার পর আর বদ অভ্যাস অনুযায়ী ধূমপান করার সুযোগ পাইনি তাই এবার সেই সুযোগে সেটার সদ ব্যাবহার করতে করতে ওটো ওয়ালা কে জিজ্ঞাসা করলাম …..
-আচ্ছা, দাদা , এই প্রতিবাদ মিছিলের কি আদৌ কোন যুক্তি আছে ? পার্থ বা কেষ্ট বাবুর গ্রেফতারী কি কেন্দ্রীয় সরকারের ষড়যন্ত্র ? আপনার কি মনে হয় ? উত্তরে জানালেন
-দাদা, আমি চোখে অন্ধ এবং মূক ও বোধির। সব কিছু দেখেও কিছু দেখিনা, শূনেও কিছু শূনতে পাইনা । রাস্তায় গাড়ী চালিয়ে সংসার টা যাহোক করে চালাচ্ছি । মূখে কিছু বললে এটাও বন্ধ হবে। আপনার জায়গা এসে গেছে । নামুন।
আমি ওটো থেকে নেমে ১০ টাকা দিলাম । ওটো টা দ্রুত বেগে চলে মিলিয়ে গেল পথেই ।
আশাকরি আপনারা রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি বুঝতে পাড়লেন ।