গতকাল থেকেই সংবাদ শিরোনামে উঠে আসছে করোনা ও আবারও লকডাউন প্রসঙ্গ। চিনের বৈজ্ঞানিক গবেষণায় আবিস্কৃত এই করোনা বা কোভিড -19 পৃথিবীকে থামিয়ে দিয়েছিল। সংক্রমনের আশঙ্কায় গোটা পৃথিবীবাসী প্রায় দু-বছর ছিলেন গৃহবন্দী। অফিস, আদালত, স্কুল কলেজ সব বন্ধ হয়েছিল। করোনা আক্রান্ত হয়েই মারা গিয়েছেন অগনিত মানুষ। চাকরি থেকে ছাটাই, ব্যাবসা বন্ধ, ঘরের সঞ্চিত অর্থে ঘরে বসে খেয়ে হাতে অর্থের আকাল। সব মিলিয়ে পৃথিবীতে মানুষ ছিল গভীর বিষন্নতায়। স্বাভাবিক ভাবেই বাংলাও তার বাইরে ছিলনা।
দু-বছর পর করোনার প্রভাব কমে এবং গৃহবন্দী মানুষ নতুন উদ্যোগে নতুন জীবন শুরু করেন। কেউ চাকরী, কেউ ব্যাবসা বদল করে জীবনের শেষ সঞ্চয় টুকু দাঁও তে বাজীধরে শুরু করেন নতুন জীবন। কিন্তু হঠাৎ করেই গতকাল থেকে সংবাদ শিরোনামে আবারও উঠে আসে করোনার প্রকোপের সংবাদ সাথে আবারও লকডাউনের আতঙ্ক। স্বাভাবিক ভাবেই সাধারণ মানুষের মধ্যে এবং নেটিজেনদের কাছে এটি নতুন আতঙ্কের মূল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই আতঙ্কে বলে ফেলছেন “এবার আর পারবোনা “।
ঠিক কতোটা বিপদগ্রস্থ আমরা? সেই নিয়েই শুরু হয় আমাদের অন্তঃতদন্ত। আমরা জানতে পারলাম সেই নিয়েই এই বিশেষ প্রতিবেদন।
বছর দুই আগে ভারত তথা বিশ্বের প্রায় প্রতিটি কোনায় ছড়িয়ে পড়ে করোনা বা কোভিড -19 ভাইরাস। যার মূল উৎপত্তিস্থল ছিল চিনের গবেশনাগার। প্রাথমিক ভাবে চিন এই অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরবর্তীকালে পৃথিবীর বেশিরভাগ বৈজ্ঞানিক সহ স্বাস্থ্য সচেতন সংস্থাগুলি চিন কেই দায়ী করেছেন। প্রাথমিক ভাবে করোনা বা কোভিড-19 এর উপসর্গ বুঝতেই পৃথিবীর বৈজ্ঞানিক দের বেশকিছু সময় লেগেযায়। প্রায় এক থেকে দেড় বছরের মাথায় আবিষ্কার হয় করোনার প্রতিষেধক।
এখানে উল্লেখযোগ্য হল, এই প্রতিষেধক আবিষ্কারে অনান্য দেশগুলির তুলনায় ভারত এগিয়ে ছিল এবং সবথেকে বেশি পরিমান প্রতিষেধক উৎপাদন করার শীর্ষে ছিল ভারতেরই স্থান। এমনকি নিজের দেশের নাগরিক দের করোনা প্রতিষেধক দেবার পাশাপাপাশি ভারত অনান্য দেশ গুলিকেও এই প্রতিষেধক দিয়ে সাহায্য করেছিল তথা করোনা অতিমারির সাথে লড়াইয়ে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা জারি করে সংক্রমণরোধেও অনান্য দেশগুলির থেকে এগিয়ে ছিল যা সার্ক সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বার বার উল্লেখ হয়েছে।
তাহলে এই আতঙ্ক কেন?
বিগত বছরে পৃথিবীর বিখ্যাত গবেশক ও চিকিৎসকরা করোনা ভাইরাস সম্পর্কে বলেছেন – যে কোন ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সময় তার শক্তি যে পরিমান থাকে, পরবর্তীকালে সেই ভাইরাসের সেই শক্তি থাকেনা অন্য দিকে মানব শরীর সেই ভাইরাসের সাথে লড়াইয়ে প্রথম দিকে পরাজিত হলেও ধীরে ধীরে সেই ভাইরাস প্রতিরোধ শক্তি গঢ়ে তুলতে পারে।
তাহলে এই আতঙ্ক কেন?
কেন্দ্রীয় সরকার দেশের অধিকাংশ নাগরিকদের করোনা প্রতিষেধক দেবার দাবী করেছেন। যদিও নবজাতক, শিশু ও কিশোর কিশোরীদের প্রতিষেধক দেওয়া সম্পূর্ন হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি অনুযায়ী দেশের বেশিরভাগ নাগরিক যদি প্রতিষেধক নিয়ে থাকেন তাহলে সংক্রমন এর আশঙ্কা অনেক কম। তাহলে কেন এই লকডাউন প্রসঙ্গ?
তাহলে এই আতঙ্ক কেন?
চিন ছাড়া আর অন্য কোন দেশে করোনা নিয়ে নতুন কোন আশঙ্কা করছেন না। শুধুমাত্র ভারতেই এই আতঙ্ক। চিনে সংক্রমণ বাড়ার অন্যতম কারন সেই দেশে প্রতিষেধক সরকারি ভাবে ৭০% এর কম। অন্যদিকে অনান্য সংবাদ মাধ্যমে প্রচার, চিনা সেনাবাহিনীও এই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বা হতে পারেন। তাহলে তারা এখন কি অসুস্থ অবস্থায় ভারতের সাথে যুদ্ধে আগ্রহী হবে? নাকি চিনের সাথে যুদ্ধের আশঙ্কাটা নির্বাচনী প্রচার?
বর্তমানে বাংলার একটি বিশেষ বেসরকারি টিভি চ্যানেল বিগত বছরের একটি ভিডিও ফুটেজ, চিৎকার করে বার বার দেখিয়ে চলেছেন। তাতে বিগত বছরে মাননীয়া মূখ্যমন্ত্রী জানুয়ারির ৩ তারিখে লকডাউন ঘোষনা করার ফুটেজ রয়েছে যা দেখে সাধারণ মানুষ ( যাদের স্মৃতিশক্তি কম ) তারা বিভ্রান্ত ও আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন।
এদিকে রাজ্য সরকারের কিছু নেতৃবৃন্দ ও কংগ্রসের কিছু সমর্থক দের দাবী, কেন্দ্রীয় সরকার অর্থাৎ বিজেপি রাজ্যের অনান্য প্রদেশের নির্বাচনে ভালো ফল না করতে পেরে, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো পদযাত্রা যা ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সেই পদযাত্রা কে করোনা আতঙ্কে বন্ধ করার এই অভিনব প্রয়াস।
জনগনের কাছে আমাদের আবেদন, আতঙ্কগ্রস্ত হবেন না। করোনা এখনো যায়নি, যাবেও না। ঠিক যেভাবে কলেরা, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি মহামারি এসেছিল। এখন আমরা এই সব রোগের মত করোনার সাথেও অভ্যস্ত হব। বিচার করবেন আপনারা। তবে মাস্ক, স্যানিটাইজার ব্যাবহার করুন। ভীড় এড়িয়ে চলুন।