একে তো মেয়ে তার ওপর গায়ের রঙ কালো, পরিবারে একমাত্র বাবা ছাড়া কারোর কোন উৎসাহ ছিল না, এই মেয়ে কে নিয়ে । ঠিক এরকম একটা পরিবেশ বা বলা ভালো অন্ধকার শৈশব থেকে বর্তমানে বাংলার সীমা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক গ্ল্যামার জগতের মহীরুহদের সাথে কাজ করার যুদ্ধটা সত্যিই অনুপ্রাণিত হবার মতোই।
বারাসাতের এক অতি সাধারণ পরিবার থেকে আকাশ ছোয়ায় যাত্রাপথ টা কেমন ছিল সিলভিয়ার ?
আজ থেকে 20-22 বছর আগে বারাসাতে একঠি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম সিলভিয়ার। বাড়িতে মেয়ে হল তাও কালো, এই কটাক্ষ বাড়ির অন্য আত্মীয় ও পাড়ার প্রতিবেশীদের থেকে পেয়েই হাতে খড়ি। যে খানে আজ দেশের অন্যতম সুপারষ্টার মিঠুন চক্রবর্তী কেও তার কেরিয়ারের শুরুতে শুনতে হয়েছে এবং বহু জায়গায় প্রত্যাখ্যাত হতে হয়েছিল। না খেয়ে রাত কাটাতে হয়েছে দিনের পর দিন। নিজের কাছে নিজেই কেদেঁছেন। সে সব কথা তিনি আজ মনে করতেও চাননা বলেই জানিয়েছেন একটি সাক্ষাতকারে। আজ মানুষ মুখে যাই বলুক না কেন, মনের মধ্যে বর্ন বিদ্বেষ থেকেই গেছে আর ঠিক সেই কারনেই আমাদের দেশে বিনোদন জগত ও গ্ল্যামার জগতে শ্যামবর্না মানুষকে তার প্রতিভা না দেখেই বিদায় করে দেওয়া হয়। এ নিয়ে বহু তর্ক রয়েছে, থাকবেও। কিন্তু সত্যিটা হল আন্তর্জাতিক ফ্যাশন জগতে শ্যামবর্না দের চাহিদা সব থেকে বেশী।
ছোট সিলভিয়া তখন এতো কিছু জানতো না। পরিবারের কারোর সাথেই গ্ল্যামার জগতের সাথে কোনভাবে কোনদিন যোগাযোগ ছিলনা। শুধুমাত্র একবুক কটাক্ষ নিয়ে দুচোখে স্বপ্ন ছিল নিজেকে গ্ল্যামার জগতে প্রতিষ্ঠা করার। ইচ্ছে টা ছোট থেকে হলেও, যুদ্ধ টা শুরু হয়েছিল কয়েক বছর আগে। গ্রাজুয়েশন শেষ করে মাস্টার্সের প্রস্তুতির সাথে সাথে ফ্যাশন জগতে কাছ করা শুরু। কিন্তু কে কাজ দেবে? কেই বা ছবি তুলে দেবে? সেখানেও কম তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়নি। তবুও সেই সময় দাতে দাত চেপে প্রায় বিনা পারিশ্রমিকে বেশ কিছু মডেলিং করতে হয়েছিল। পরিবার থেকে কোন রকম অর্থনৈতিক সাহায্য ছাড়া, যাদবপুরে থেকে সব কিছু একাই চালিয়ে নিয়ে যাওয়া টা নেহাত গল্প কথা নয়।
সিলভিয়া আমাদের জানালো, আজকাল সব মেয়েরাই নিজেদের মডেল ভাবে আর ছেলেরা নিজেদের ভাবে ফটোগ্রাফার। এরা কেউ এটাই বোঝে না যে অভিনয় আর মডেলিং এ পার্থক্য টা কোথায়। সবাই ভাবে দুটোই এক। এখন বেশীর ভাগ মেয়েরাই খুব সহজলভ্য কিছু ফটোগ্রাফার ও মেকাপ আর্টিষ্টের সাথে সামান্য কিছু ব্রাইডাল শুট করেই নিজেদের কে প্রফেশনাল মডেল ঘোষনা করে দিচ্ছে, ফ্যাশন জগত সম্পর্কে কোন ধারনাই নেই সাথে শেখার বা জানার ইচ্ছাও নেই। কলকাতায় এসব শেখানোর সঠিক কোন শিক্ষা প্রতিষ্টান না থাকলেও ইন্টারনেটে অনেক কিছু পড়ে জানা বা শেখা যায় সেটাও কেউ করেনা। এরা পোর্টফোলিও কি সেটাই জানে না।
সিলভিয়া জানায় সে কোন ফটোগ্রাফারের সাথে বা মেকাপ আর্টিষ্টের সাথে কাজ করার আগে ভালো করে তার আগে করা কাজ আর সেই বিষয়ে তার কতটা ধ্যন ধারনা সেটা জাচাই করার পরেই ঠিক করতেন কাজ টা করাটা ঠিক না ভূল।
সিলভিয়া কে সব থেকে বেশী যিনি অনুপ্রাণিত করেছেন তার নাম জানলে হয়তো আপনারা অবাক হবেন। তিনি বাংলার অন্যতম জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত সঙ্গীত শিল্পী ইমন চক্রবর্তী। সিলভিয়ার মা সঙ্গীত চর্চা করতেন, সেই সুত্রে তার মায়ের সঙ্গীত গুরুর আরেক শিষ্যা ছিলেন এই ইমন চক্রবর্তী, সেখান থেকেই আলাপ। তবে তখনও তার আকাশ ছোঁয়া পরিচিতি হয়নি। তখন থেকেই ইমন চক্রবর্তী কে নিজের দিদি মনে করে সব কিছুই শেয়ার করতেন সিলভিয়া। ইমন বলেছিলেন “তোর মধ্যে একটা স্পার্ক আছে। তুই পারবি। তবে শর্টকাট পথে না। লড়াই করে যা। ” এটাই সিলভিয়া কে লড়াই করতে ভীষন অনুপ্রাণিত করে।
আজ এই সিলভিয়া কলকতা তথা মুম্বাই সহ আন্তর্জাতিক ফ্যাশন জগতের প্রতিষ্ঠিত ব্যাক্তিত্বদের সাথে কাজ করছেন। সুযোগ আসছে একের পর এক নামী বিজ্ঞাপন সংস্থা থেকে। যারা এই সিলভিয়া কে একদিন গায়ের রঙ নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন তারা আজ নিস্তব্ধে সিলভিয়ার সাথে নিজস্বী তোলার কথা ভাবেন।
বাবা কে হারিয়েছেন বছর দুই আগে। সিলভিয়া চান আগামীতে “সিলভিয়া” নাম টি ফ্যাশন জগতে সর্বজনবিদীত হোক। স্বর্গীয় বাবা কেই উৎসর্গ করতে চান তার যাবতীয় সাফল্য।
আমরাও চাই সিলভিয়ার এই যুদ্ধে সিলভিয়া কে সব রকম ভাবে সাহায্য করতে। আমাদের তরফ থেকে রইলো আন্তরিক শুভেচ্ছা।