পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ ফুচকা শব্দটা কানে আসলেই মনটা কেমন হয়ে যায়। যতক্ষণ না ফুচকা খাওয়া হচ্ছে সেই মন কেমনটা ঠিক হয় না। শুধু বাঙালি না সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে ফুচকার জনপ্রিয়তা তুঙ্গে।
বিভিন্ন রাজ্যে নাম বিভিন্ন হলেও জনপ্রিয়তা আর মানুষের ভালোবাসাটা একই। ‘পানি পুরী’, ‘পানি পাতাসি’, ‘পানি কে পাকোরে’, ‘ফুলকি’, ‘গুপছুপ’ ‘গোল গাপ্পা’ আরও কত নাম। কীভাবে তৈরি হল এই ফুচকা কে তৈরি করল?
ফুচকা তৈরির পিছনে রয়েছে এক পৌরাণিক গল্প। শোনা যায় মহাভারতে নির্বাসন কালে কুন্তী দ্রৌপদীর রান্নার পরীক্ষা নেওয়ার জন্য তাকে কিছুটা ময়দা ও আলু দিয়ে বলেন এমন কিছু বানাতে যেটা খেয়ে পঞ্চপাণ্ডব খুশি হবেন। সেই পরীক্ষার ফলাফলই এই ফুচকা। দ্রৌপদীর বানানো এই খাবার খেয়ে পঞ্চপাণ্ডবের পাশাপাশি কুন্তীও খুব খুশি হয়েছিলেন। দ্রৌপদীর হাতের সেই খাবার আজও সমান জনপ্রিয় হয়ে রয়েছে।
ফুচকার ইতিহাস নিয়ে রয়েছে আরও অনেক রকম মতামত। শোনা যায় প্রাচীন মগধের রাজধানী পাটলিপুত্রে প্রথম শুরু হয় এই ফুচকা। পাটলিপুত্রের রাজা রানীর খুব প্রিয় মুখরোচক পদ ছিল এটি। কিছু মতামত আবার বলছে ফুচকা ছিল হিন্দু মন্দিরের প্রসাদ। হিন্দু মন্দিরে দেবদেবীকে ভোগ হিসেবে নিবেদন করা হত এই ফুচকা। রন্ধন সম্পর্কিত নৃবিজ্ঞানী(culinary anthropologist) কুরুশ দালালের মতে ফুচকা তৈরি হয়েছে উত্তর ভারতের একধরনের ‘চাট’ থেকে। তিনি আরও বলেন রাজ কচুরি বানানোর সময় সেটি ছোট করে বানানো হয়। তখনই ফুচকার উৎপত্তি আর নামকরণ হয় পানি পুরী।
ফুচকা বিক্রি এখনকার দিনের বহু দরিদ্র মানুষের রুজিরুটি। ফুচকা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ।
পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণা জেলায় ফুচকা গ্রাম বলে একটি গ্রাম রয়েছে, যে গ্রামের প্রতিটি মানুষের জীবিকা নির্বাহ হয় ফুচকা বিক্রির মাধ্যমে। বিভিন্ন জায়গা থেকে বহু মানুষ রোজ সেখানে ভীর করে ফুচকা খাওয়ার জন্য। ভারতীয়দের মনে ফুচকার চাহিদা ও ভালোবাসা যতদিন থাকবে ততদিন এক শ্রেণীর দরিদ্র মানুষদের জীবিকা নির্বাহ করাও বেশ সুবিধার হবে।