পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ সালটা ১৯৬২ তারিখটা আজকের তারিখ ১১ই জুন। আর জি কর হাসপাতালে প্রচণ্ড ভিড়, ঢোকা বেরনোর সব গেট বন্ধ। তাও উপছে পড়ছে ভিড় একবার ভিতরে যাওয়ার চেষ্টা একবার মানুষটাকে শেষ দেখার চেষ্টা। একটাই প্রশ্ন কীভাবে হল এই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা? সেদিন সকালেই বন্ধু ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি তে এসে তার সঙ্গে যাওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। রেডিওতে রিহার্সাল আছে তাই সঙ্গ দিতে পারেননি ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই আপসোস শেষ দিন পর্যন্ত ছিল ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
সেই দিনই পৃথিবী ছেড়ে ছবিতে বসবাস শুরু করেন বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী ছবি বিশ্বাস। নিজেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন গন্তব্য অজানা। মধ্যমগ্রামের কাছে গঙ্গানগরে ওল্ড যশোর রোডে উল্টো দিক থেকে আসা একটা ভ্যানের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ। তারপরের দৃশ্য আর জি কর হাসপাতাল। মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধান চন্দ্র রায় বলে দিলেন পোস্টমর্টেম হবে না। এই মহান মানুষের নিথর শরীরের ওপর ছুড়ি কাচি চালানোর প্রয়োজন নেই। কতটা গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা থেকে এত বড় একটা কথা কেউ বলতে পারে তা বোঝাই যাচ্ছে।
তার ২৫ বছরের কর্মজীবনে তিনি প্রায় ২৫০ টির বেশি সিনেমায় কাজ করেছেন। শুধু চলচ্চিত্র কেন? মঞ্চে তিনি রাজ করেছেন বহু বছর। অসম্ভব ভালো আবৃত্তি করতেন তিনি। আকাশবাণীতে তার আবৃত্তির অনুষ্ঠান হয়েছে অনেকবার। এই অসম্ভব প্রতিভাবান মানুষটার আর একটি দিক ছিল যা হয়তো অনেকেরই অজানা। মনের দিক থেকে তিনি যে কত বড় মানুষ ছিলেন তা বোধহয় জানেনা কেউ। ছোট জাগুলিয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য ১০ বিঘা জমি দান করেছিলেন তিনি। ১৯৪২-৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের সময় জাগুলিয়া গ্রামের মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে খাবার চাল ডাল পৌঁছে দিয়ে এসেছেন। যে খানে কোন গরীবের কথা শুনেছেন তাদের জন্য প্রাণ কেঁদে উঠেছে তার। নিজের সামর্থ্যের সব টুকু দিয়ে সাহায্য করেছেন তিনি।
কথায় বলে শিল্পীর মৃত্যু হয়না, তিনি বেঁচে থাকেন তার শিল্পের মধ্যে দিয়ে। তাই আজ ৬১ বছর হয়ে গেলেও তিনি সমান সমাদৃত রয়েছেন বাংলা সিনেমা প্রেমীর মনে। প্রয়াণ দিবসে তাকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জ্ঞাপন করছে দ্য ইন্ডিয়ান ক্রনিক্লস।