১৯৯৩ সালে মুম্বাই তে ঘটে যায় একটি সিরিয়াল বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা । যাতে সেই সময় গোটা ভারত বর্ষ কেঁপে উঠেছিল। ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন সরকারী সংখ্যায় ৭০০ র বেশী নিরীহ মানুষ। ২৯ টা বছর কেটে গিয়েছে। বদলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু কেঊ কোন দিন কোন ভাবেই ”ডি কোম্পানি” বা অপরাধ জগতের বেতাজ বাদশা দাঊদ ইব্রাহীম কাশকর সহ তার দলের অন্য অভিযুক্ত যারা , যেমন – ছোটা শাকিল, টাইগার মেমন, জাভেদ চিকনা এদের কাঊকেই ভারতে ফিরিয়ে আনতে পারেনি।পাকিস্তানের কাছে বার বার অভিযোগ করা সত্বেও পাকিস্তান বার বার সেই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে পাকিস্তানে দাঊদ বা তার সঙ্গী সাথীরা কেঊ থাকেনা। এদিকে কয়েকদিন আগেই ভারত সরকার মিডিয়া কে জানায় মুম্বাই থেকে গ্রেফতার হওয়া দাঊদের ছোট ভাই ইকবাল কাশকর অপরাধ দমন এজেন্সির কাছে দাঊদ ও তার সঙ্গীদের সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য জানিয়ে দিয়েছে । এর পরেই ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি বা NIA একটি নোটিশ জারি করে জানায় দাউদ ও তার সঙ্গীদের খবর দিতে পারলে বা ধরিয়ে দিতে পারলে ২৫ লক্ষ্য টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে।
এখন প্রশ্ন হল ভারতীয় দের মধ্যে ২৫ লক্ষ্য টাকার জন্য কে এই সাঙ্ঘাতিক মাফিয়ার জন্য কে ঝুঁকি নেবে ? যেখানে দাউদ নিজে আন্তর্জাতিক তোলা বাজি করে মাসে কয়েক হাজার কোটি । অন্যদিকে মার্কিন গয়েন্দা দফতর মস্ত ওয়ান্টেড উগ্রবাদী দের জন্য পুরস্কার ধার্য করেছে ২৫ লক্ষ্য ডলার যা পাকিস্থানী অর্থে প্রায় ২০০ কোটি টাকা, যা এই মুহূর্তে পাকিস্থানের জন্য অনেক বড়।
এই নোটিশ এর পিছনে থাকতে পারে ভারতের কেন্দ্রিয় সরকারের কুট নৈতিক চাল । প্রথমত দাউদ পাকিস্তান করাচীর ক্লিফটন রোড এ একটি বিলাস বহুল বাংলো তে থাকেন তা অনেকেরই জানা বা ভারতের বেশ কিছু মিডিয়া সেই খবর আগে করেছে। কেন্দ্রীয় সরকার চাইলেই ঐ ভবনে সার্জিকাল স্ট্রাইক করে দাউদ কে নিকেশ করতেই পারে ঠিক যেভাবে কিছুদিন আগেই তালিবান প্রধান আল জাওয়াহিরি কে মার্কিন নেভি সিল ড্রোন পরিচালিত মিসাইল দিয়ে নিকেশ করেছিল। কেন্দ্রীয় সরকার সে পথে হাঁটছে না কেন ?
দ্বিতীয়ত তালিবানরা নিশ্চিত তাদের দলের প্রধান লাদেন ও আল জাওয়াহিরির মৃত্যুর পিছনে বিশ্বাস ঘাতকতার হাত রয়েছে পাকিস্থানের। ফলতঃ তালিবান এই মুহূর্তে পাকিস্থানের ওপর বেজায় ক্ষেপে আছে। আফগানিস্থানের সাথে পাকিস্থানের সম্পর্ক ভালো না।
তৃতীয়ত বেশ কয়েক বছর ধরেই পাকিস্থানের রাজনৈতিক তথা অর্থনৈতিক অবস্থা একেবারেই খারাপ। চিনের কাছে নিজেদের প্রায় বিক্রি করে দিয়েছে। নতুন করে চিন ঋণ দিতে রাজী নয়। অন্যদিকে চিনও ভারতের সামরিক শক্তির সামনে এবারে একটু দুর্বল হয়ে আছে । আর পাকিস্থান গোটা পৃথিবীর কাছে অনেক আগেই উগ্রপন্থা কে উৎসাহ দেবার জন্য উগ্রবাদি দেশ হিসাবে পরিচিতি পেয়েগেছে । যার কারনে পাকিস্থানের কোন নাগরিক কেও বিদেশী দেশ সুনজরে দেখে না বা বিশ্বাস করতে পারেনা।
চতুর্থ কারন , পাকিস্থান আগে থেকেই অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও অনান্য পরিকাঠামোর দিকে ভেঙ্গে পড়েছে। সব থেকে কাছের দেশ ভারত আর ভারত পাকিস্থানের সাহে ব্যাবসায়িক চুক্তিও ভঙ্গ করেছে কয়েক বছর হল। ফলত পাকিস্থানের আমদানি রফতানি ব্যাবসাও বন্ধ। কারন পাকিস্থানের বেশির ভাগ রফতানি ছিল ভারতেই।
পঞ্চম কারন, এই মুহূর্তে পাকিস্থান বন্যার কারনে জলের তলায় ডুবে গেছে। সঠিক সামরিক ব্যাবস্থা বা চিকিতসা ব্যাবস্থা না থাকার ফলে ক্রমশ বন্যায় নাগরিক দের মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে । জল নামার সাথে সাথে মহামারির প্রকোপ নিশ্চিত । এই সব কিছু ভেবেই পাকিস্থান ভারতের সাহায্য চেয়েছে এবং নতুন করে বানিজ্যিক প্রস্তাবও রেখেছে। ভারত সরকার পাকিস্থান কে সাহায্য করতে রাজী হয়েছে তার কারন থাকতে পারে কূটনৈতিক শর্ত । এবং সেটা হল একমাত্র ডি কোম্পানি কে শেষ করা। পাকিস্থানের কাছে এই মুহূর্তে এই শর্তে রাজী না হওয়া ছাড়া অন্য কোন পথ দেখা যাচ্ছে না ।
তাহলে এবার কেন দাউদ ?
কারন দাউদ ভারতের ২৯ বছরের পুরানো শত্রু সেটাই শেষ নয়, তাহলে অনেক আগেই নিকেশ হত। এই মুহূর্তে আগামী ২০২৪ এর নির্বাচনের জন্য বিজেপি-র কাছে আর কোন ভালো প্রচারের অস্ত্র নেই। নোট বন্দি থেকে NRC ও কৃষি বিরোধী আইন সব মিলিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থাও দোলাচলে । এছাড়া দাউদ বেচে থাকলেও বহু নেতা ও আমলা দের অসুবিধার কারণ হয়ে থাকবে যা বিখ্যাত আইনজীবী রাম জেঠমালাণী জীবিতকালে ঊল্লেখ করেছিলেন।