বীর স্বাধীনতা সংগ্রামী ক্ষুদিরাম বোস কে বাঙালির মনে পড়ে শুধুমাত্র অন্যকে ইর্শান্বিত হয়ে কটাক্ষ করার সময়। কাউকে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে কোন কিছু করতে এগিয়ে গেলেই তাকে শুনতে হয় ” বাড় খেয়ে ক্ষুদিরাম”। নির্লজ্জ বাঙালি ক্ষুদিরামের দেশহিতে আত্মত্যাগ কে এই ভাবেই বর্নণা করেন।
পরাধীন ভারতবর্ষে বাংলার দামাল ছেলে ক্ষুদিরাম তখনও কৈশোর পেরিয়ে সাবালক হননি। তখন থেকেই তিনি, দেশ কে বটিশমুক্ত করতে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন। বাংলায় অত্যাচারী বড়লাট কে বোমা নিক্ষেপ করতে গিয়ে ভূল করে অন্য এক বৃটিশ নাগরিক কে বোমা নিক্ষেপ করে হত্যা করার দায়ে তার হাজতবাস হয়েছিল কিন্তু তখন তার বয়স সাবালক না হওয়ায় তাকে এক বছর পর ফাসি দেওয়া হয়। কিন্তু তার এই পরাক্রমশালী মানসিকতা কে বাঙালী চিরকাল “বাড় খেয়ে ক্ষুদিরাম” বলে মস্করা করে এসেছে। শুধুমাত্র তার জন্ম বা মৃত্যু দিনে তার মূর্তিতে মাল্যদান ছাড়া তাকে চিরকাল অসম্মান করে এসেছে বাঙালি সমাজ।
চলচ্চিত্র জগতে বলিউড থেকে টলিউডে নেতাজী সুভাষচন্দ্র কে নিয়ে বায়োপিক হলেও ক্ষুদিরাম বোস কে নিয়ে ভাবার সময় হয়ে ওঠেনি কোন প্রযোজক বা পরিচালকের। বাংলায় একটি প্রবাদ আছে -“গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না” অর্থাৎ যদি নিজের গ্রামের যোগী বা সন্ন্যাসী স্বভাব বশত ভাবে আমাদের কাছে ভিক্ষা চাইতে আসে তাকে আমরা ফিরিয়ে দিই ফেক বা ভূয়ো বলে কিন্তু যদি অন্য গ্রাম বা রাজ্য থেকে কোন সন্ন্যাসী আসেন তাহলে তাকে আমরা ভিক্ষা দিয়ে থাকি।
এরকম টাই ঘটলো স্বর্গীয় ক্ষুদিরাম বোসের সাথেও। বাংলা থেকে কোন প্রযোজক বা পরিচালক, ক্ষুদিরামের জীবনী নিয়ে কাজ করার আগ্রহ না দেখালেও কেরালায় পরিচালক বিদ্যাসাগর রাজু বানালেন ক্ষুদিরাম বসুর বায়োপিক, নাম – ক্ষুদিরাম বোস।
খূব তাড়াতাড়ি বাঙলা সহ ৭ টি ভাষায় এই সিনেমাটি মুক্তি পেতে চলেছে ।
পরিচালক এর আগে ২০১৮ সালে “রচয়িতা” ও ২০২১ এ “ফাদার চিট্টি উমা কার্তিক” দুটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করে যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছেন। বিখ্যাত বলিউড অভিনেতা বিবেক ওবেরয়, অতুল কুলকার্নি সহ এক ঝাঁক অভিনেতা অভিনেত্রী দের নিয়ে এই ছবি আগামী ডিসেম্বর মাসে এই ছবি ভারতের পার্লামেন্টে বিশেষ স্ক্রীনীং হতে চলেছে, আজাদি কা অমৃত মহোৎসব উপলক্ষে।
পরিচালক বিদ্যাসাগর রাজু এই চলচ্চিত্রে ক্ষুদিরাম বসুর ব্যাক্তিগত জীবন, আত্মত্যাগ ও সেই সময়ে স্বামী বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সমসাময়িক মনিষীদের ক্ষুদিরাম সম্পর্কে মনোভাব আন্তর্জাতিক সিনেমাপ্রেমী দের কাছে তুলে ধরতে চেষ্টা করেছেন। তিনি আশাবাদী, আন্তর্জাতিক সিনেমাপ্রেমীরা যে ভাবে আঞ্চলিক গল্প গুলি কে পছন্দ করছেন ঠিক সেই ভাবেই ইতিহাসের পাতা থেকে প্রায় হারিয়ে যাওয়া এই কিশোর বিপ্লবীর আত্মত্যাগের কাহিনী তাদের মন জয় করবে।