পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ এ বছরের পঞ্চায়েত ভোটের প্রহসন আগেই মিটে গেছিল। গতকাল জয়ী পরাজয়ী তাও জানা হয়ে গেছে। ভোটের গণনা এবং ফলাফলের সঙ্গে সঙ্গেই বন্ধ হয়ে যাবে সমস্ত আলোচনা। একটা ভোটে জয়ী হয়ে যাওয়ার পর আসে পরবর্তী ভোটে জয়ের পরিকল্পনা। শুধু পঞ্চায়েতে আটকে থাকলে হবে? পুরসভা, লোকসভা, বিধানসভা সব ভোটই আছে। একটা ভোটে জিতে থেমে গেলে তো হবে না সবেতে জিততে হবে। যে দলই জিতুক বা সরকার গঠন করুক এই ভোটের নামে রাজনীতির খেলায় যারা প্রাণ দিল তাদের কী হবে?
তারা যে দলেরই লোক হোক না কেন খালি হল তো কতগুলো মায়ের কোল, স্বামী হারাল কিছু স্ত্রী আর অনাথ হল কিছু শিশু। যদি বেঁচেই না থাকে তাহলে দলাদলির কী অবশিষ্ট থাকে? একদল ছাপ্পা মারছে একদল আটকাচ্ছে তারা যে দলেরই হোক মারা গেল যারা তারা তো শুধু মানুষ। গতকাল বিভিন্ন জায়গায় বিজয় মিছিল হয়েছে, আবীর উড়ে আকাশ রঙিন হয়েছে তাতে কি রক্তের রং টা ঢাকা পড়ে গেল? দলে তো হাজার মানুষ আছে একজন চলে গেলে দলের কী ক্ষতি হবে? কিন্তু সেই পরিবারগুলোর তো ক্ষতি হবেই।
কয়েকদিনের মধ্যেই হয়তো জানা যাবে এদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। মানুষের বিকল্প কী? টাকা? টাকা যদি তারা পায়ও মানুষের অভাবটা টাকা মিটিয়ে দেবে? ক্ষতিপূরণ ঘোষণা হয় কিন্তু সেই ক্ষতিপূরণ মৃতের পরিবার পায় কিনা তা কতজন খোঁজ রাখে? কতজন জানতে পারে তারা টাকা পাচ্ছে কিনা? মারা যায় অনেক মানুষ, দেশের জন্য ফৌজরা রোজই কত প্রাণ দিচ্ছে, তারা শহীদ। আর ভোটের সময় মরে গেল যারা তারা কী?
দলের হয়ে কাজ করতে গিয়ে ওপর দলের হাতে বা ওপর দলের কাজ রুখতে গিয়ে তাদের হাতে খুন হল যে মানুষগুলো তারা কোন দলের মানুষ? আর যারা কোন কারণ ছাড়াই গণতন্ত্রের অধিকার পালনের জন্য ভোট দিতে গিয়ে প্রাণ হারাল, তাদেরও তো দল নেই। গণতন্ত্রের অধিকার! এটার নাম গণতন্ত্র? ছাপ্পা ভোট হচ্ছে, ব্যলট বাক্স নদীর জলে চলে যাচ্ছে, প্রিসাইদিং অফিসার মার খাচ্ছে আর সাধারণ মানুষ তো ভোট কেন্দ্রে যেতেই ভয় পাচ্ছে। এটারই মানে বোধহয় গণতন্ত্র। ভারতবর্ষ গণতান্ত্রিক দেশ। সেই গণতন্ত্রই তো প্রাণ নিচ্ছে। আসলে তো মানুষ গুলো মারা যায়নি খুন হয়েছে, মারা গেছে তো গণতন্ত্র নামক ব্যঙ্গাত্মক শব্দটি।