Home » সত্য-সুবর্ণ-বকুলের মধ্যে বেঁচে আছেন আশাপূর্ণা দেবী

সত্য-সুবর্ণ-বকুলের মধ্যে বেঁচে আছেন আশাপূর্ণা দেবী

পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শক্তিশালী লেখিকা সাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবী। তার মত লেখনীর জর তৎকালীন বাঙালি মেয়েদের মধ্যে খুব কমই দেখা গেছে। তিনি সমাজে থেকেও সামাজিক হয়েও সমাজ ভাবনা থেকে অনেক উচ্চে বিরাজ করতেন। তাই বোধহয় তার নায়িকারাও সমাজে অনেক উচ্চমানসিকতার।

প্রথাগত শিক্ষায় শিক্ষিত না হয়ে, পাশ্চাত্য সমাজ সাহিত্য কিচ্ছু না জেনে শুধু মাত্র নিজের লেখনীর জোরে পাঠকের মন ছুঁয়েছেন তিনি। বাংলা ছাড়া দ্বিতীয় কোনও ভাষা তিনি জানতেন না। বিংশ শতাব্দীর বাংলার মেয়েদের জীবনযাপন, সামাজিক অবস্থান, চিন্তাভাবনা ছিল তার গল্প গুলির মূল উপজীব্য। আজ থেকে ২৮ বছর আগে আজকের দিনেই তিনি পরলোক গমন করেছেন। কিন্তু তিনি বেঁচে আছেন সত্য সুবর্ণ বকুলের মধ্যে।

বাঙালি পাঠক তার লেখার ভক্ত। যদিও পাঠিকাদের মন তিনি বেশি করে ছুঁয়ে গেছিলেন। তার গল্পে নারীচরিত্রই আসল। তার বেশির ভাগ লেখাতেই ফুটে উঠেছে নারীর স্বাধীনতার জন্য, শিক্ষার জন্য প্রতিবাদ। প্রায় দেড় হাজার ছোট গল্প এবং আড়াইশো র বেশি উপন্যাস সৃষ্টি করেছেন তিনি।

তার লেখা অসংখ্য উপন্যাস নিয়ে তৈরি হয়েছে সিনেমা, ধারাবাহিক মেগা সিরিয়াল। লেখার জন্য পেয়েছেন অসংখ্য পুরষ্কার। জ্ঞানপীঠ পুরষ্কার পদ্মশ্রী সম্মান সহ অনেক সম্মান অর্জন করেছেন তিনি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেয়েছেন ডিলিট সম্মান। পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরষ্কার রবীন্দ্র পুরষ্কার এবং ভারত সরকারের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরষ্কার সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।

পুরস্কারের নাম যেমন শেষ করা যায় না তেমন তার উপন্যাসগুলির নাম নেওয়া শুরু করলে শেষ খুজে পাওয়া এক দায়। তবে আর কারোর কথা না বললেও সত্য-সুবর্ণ-বকুল দের তিন প্রজন্মের কথা না বললে আশাপূর্ণা দেবী অসম্পূর্ণ থেকে যাবেন। তার সৃষ্ট শ্রেষ্ঠ লেখা এই উপন্যাস ত্রয়ী ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’ ‘সুবর্ণলতা’ এবং ‘বকুল কথা’। সেই যুগে দাঁড়িয়ে এমন তিনটি নারী চরিত্র তৈরি করা মুখের কথা না।

মতের অমিলের জন্য স্বামীকে ত্যাগ করে সত্য, তৎকালীন সমাজে এতবড় সাহসিকতার কাজ করার কথা কোনও মেয়ে ভাবতেও বোধহয় পারত না কোনও মেয়ে। আর শ্বশুর বাড়ীর বিরুদ্ধে যাওয়া সুবর্ণ, বা সারা জীবন বিয়ে না করেই নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাওয়া বকুল এরা তৎকালীন মেয়ে নয়। এরা আজকের যুগের মেয়ে। সেই যুগে দাঁড়িয়ে বোধহয় আশাপূর্ণা দেবী ভবিষ্যৎ দেখতে পেয়েছিলেন। আজকের নারীকে সেই দিনের সত্ত্বায় মুড়ে প্রকাশ করেছিলেন তার কলমে। তিনি ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা ছিলেন বলেই বোধহয় ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাকে বুকের মধ্যে আগলে রাখবেন আজীবন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Click to Go Up
error: Content is protected !!