Home » শোভাবাজারে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে লাল মন্দির – কেন?

শোভাবাজারে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে লাল মন্দির – কেন?

পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ কলকাতা শহরের অন্যতম ব্যস্ততম রাস্তা সেন্ট্রাল এভিনিউ। সেই রাস্তার ঠিক মাঝখানে শোভাবাজার মেট্রো ষ্টেশনের বাইরেই অবস্থিত লাল মন্দির। পথে চলতে ফিরতে সকলেই কমবেশি দেখেছে সেই মন্দির। কিন্তু প্রশ্ন এসেছে কি কখনও মনে যে রাস্তার মাঝখানে কেন? রাস্তা তৈরির সময় কেন ভাঙ্গা হয়নি এই মন্দির?

শোভাবাজারে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে লাল মন্দির - কেন?

শোভাবাজার রাজবাড়ীর দেব বংশের নাম সকলেই জানি আমরা। এই দেব বংশের জমি ছিল এই পুরো শোভাবাজার চত্বর। আজ থেকে আনুমানিক প্রায় ২৫০ বছর আগে দেব বাড়ীর তৎকালীন রাজা ছিলেন রাজা নব কৃষ্ণ দেব। এই নব কৃষ্ণ দেবের আমলে সেই বাড়িতে চণ্ডীপাঠ করতেন পুরোহিত অমরকৃষ্ণ ঠাকুর চক্রবর্তী। বর্তমান লাল মন্দির ছিল তার কুঁড়ে ঘর এবং সাধনস্থল। শোনা যায় একবার রঘু ডাকাত হাটখোলা থেকে ডাকাতি করে ফেরার সময় যোগমায়া মায়ের মূর্তি রাজবাড়ীর পুকুরে ফেলে দেয় পুলিশের ভয়ে। তারপরই মা যোগমায়া স্বপ্নাদেশ দেন পুরোহিতকে। তখন পুরোহিত মায়ের মূর্তি নিয়ে গিয়ে সেই কুঁড়ে ঘরে প্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকেই মা যোগমায়া পূজিতা হয়ে আসছেন ওই লাল মন্দিরের স্থানে সেই কুঁড়ে ঘরে।

শোভাবাজারে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে লাল মন্দির - কেন?

সেই সময় তো বড় রাস্তা তৈরি হয়নি, তাই মন্দির নিজ স্থানেই ছিল। তারপর ইংরেজরা যখন রাস্তা নির্মাণ শুরু করেন তখন পুরোহিত মশাইকে মূর্তি হয় কুঁড়ে ঘর ছেড়ে দিতে বলেন। পুরোহিত রাজী হননি। ইংরেজরা জোর করে ঘর ভাঙতে যায়। যতবার ঘর ভাঙ্গার চেষ্টা হয়েছে শ্রমিকরা গুরুতর আহত হয়েছে। শোনা যায় বেশ কিছু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এই মন্দির ভাঙতে গিয়ে। শেষে ইংরেজরা হাল ছেড়ে দিয়ে রাস্তা বাঁক নিয়ে তৈরি করে। ইংরেজরাই সেই কুঁড়ে ঘরের পরিবর্তে বানিয়ে দেয় মন্দির। মন্দিরের লাল রং ব্রিটিশরাই করে দেয়।

শোভাবাজারে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে লাল মন্দির - কেন?

রাস্তার নামকরণ হয় মহারাজা নবকৃষ্ণ দেব স্ট্রিট। পরে তা পাল্টে রাখা হয় সেন্ট্রাল এভিনিউ। সেই থেকে সেন্ট্রাল এভিনিউর ঠিক মাঝখানে লাল মন্দির রয়েছে। আজও এই মন্দিরে তন্ত্রমতে পূজিতা হন দেবী যোগমায়া। পূর্বে পশুবলি হলেও এখন অবশ্য লাউ বলি হয়। প্রতিবছর কালী পুজোর আগে এই মন্দিরে নতুন করে লাল রং করা হয়। এই মন্দিরের বর্তমান পুরোহিত সম্পর্কে পুরোহিত অমরকৃষ্ণ চক্রবর্তীর পৌত্র হন। অর্থাৎ পুরোহিতরা বংশ পরম্পরায় এই মন্দিরের সেবার দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Click to Go Up
error: Content is protected !!