Advertise your brand here -Contact 7603043747 (Call & Whatsapp)

মজিলপুরের জাগ্রত মা ধন্বন্তরী কালী – একটি বিশেষ প্রতিবেদন

Table of Contents

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share Our Blog :

Facebook
WhatsApp

বৈশালী মণ্ডল ঃ ষোড়শ-সপ্তদশ শতক। সে সময় আদিগঙ্গা বা ভাগীরথী নদীর তীরবর্তী স্থানগুলি ছিল গভীর জঙ্গলে ভরা এবং নিরিবিলি। তন্ত্রসাধকরা গড়ে তুলছিলেন শক্তিসাধনার ক্ষেত্র। লোকালয় থেকে বেশ খানিকটা দূরে গড়ে উঠছিল এই শক্তিসাধনার ক্ষেত্রগুলি। এরকমই একটি ক্ষেত্র হল দক্ষিণ ২৪ পরগনার মজিলপুরের ধন্বন্তরী কালী মন্দির। যাঁর প্রসিদ্ধি এখন সারা বাংলা জুড়ে।

 

রেল লাইনের পূর্বদিকে মজিলপুর গ্রাম। পশ্চিমে মোয়ার জন্য বিখ্যাত জয়নগর। মনে হয় আদিগঙ্গার মজে যাওয়া গর্ভে স্থানটির সৃষ্টি বলে নাম হয়েছে মজিলপুর। মজিলপুর পদ্মপুকুর নামেও খ্যাত।

 

মজিলপুরের ধন্বন্তরী মাকে দর্শন করতে হলে ট্রেনে করে আসাই ভাল। শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় গিয়ে নামখানা বা লক্ষ্মীকান্তপুর লোকাল ধরতে হবে। নামতে হবে জয়নগর-মজিলপুর স্টেশনে। ট্রেন লাইন বরাবর মিনিট পাঁচেক হাঁটলেই পড়বে পিচ রাস্তা। সেই রাস্তা ধরে কয়েক পা এগোলেই চোখে পড়বে ধন্বন্তরী মায়ের মন্দির। স্টেশনে নেমে ভ্যানে করেও যাওয়া যায় মায়ের মন্দিরে।

 

মজিলপুরের ঠাকুরবাড়ির আদিপুরুষ ছিলেন রাজেন্দ্রলাল চক্রবর্তী। পরিব্রাজকরূপে ভ্রমণকালে ভৈরবানন্দ নামে এক তন্ত্রসাধকের সাহচর্য লাভ ও শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন তিনি। সময়টা ছিল সপ্তদশ শতকের মধ্যভাগ। জনশ্রুতি আছে, ভৈরবানন্দ স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে পদ্মপুকুর নামে জলাশয় থেকে ৩০০ বছরের প্রাচীন একটি বিগ্রহ পান। বিগ্রহটিকে প্রতিষ্ঠা করেন তাঁরই নির্মিত একটি ছোট্ট কুটিরে। ইনিই হলেন মা ধন্বন্তরী কালী।

 

সেই সময়েই একদিন রাজেন্দ্রলাল রায়কে স্বপ্নে দেখা দেন দেবী ধন্বন্তরী। পুকুরের কাছে পড়ে থাকা একটি নিম কাঠ থেকে দেবী বিগ্রহ তৈরির আদেশ দেন মা। পাথর বিগ্রহের স্থলে নির্মিত হয় নিমকাঠের বিগ্রহ। এই নিমকাঠের বিগ্রহ পূজিত হয়ে আসছে আজও। পরবর্তীকালে অবশ্য বড় হয়েছে মন্দির প্রাঙ্গণ।

সমতল ছাদবিশিষ্ট কালীমন্দিরটি দক্ষিণমুখী। গর্ভমন্দিরে বেদির উপরে রয়েছে একটি কারুকার্যখচিত কাঠের রথসিংহাসন। তাতে পদ্মের উপরে শুয়ে আছেন মহাদেব। তাঁরই বক্ষস্থলে দাঁড়িয়ে অপরূপা দীপ্তিময়ী দেবী কালিকা। মহাদেবের মাথাটি দেবীর সামনের দিকে। শ্রীচরণে মল, দুটি কান কুণ্ডলশোভিত। বসন পরিহিতা দেবীর এলানো কেশ কোমর ছাড়িয়ে। সালঙ্কারা। ত্রিনয়নী দক্ষিণাকালী। নিকষকালো কষ্টিপাথরে নির্মিত বিগ্রহ। চোখ ও মনের তৃপ্তি দেয় এই মাতৃবিগ্রহ। দেবীমূর্তির পাশে দুটি ঘরে রয়েছে দুটি শিবলিঙ্গ।

 

বর্তমান মন্দিরের সেবায়েত কালিদাস চক্রবর্তী মন্দির প্রসঙ্গে অনেক অজানা তথ্য তুলে ধরেন আমাদের কাছে। তিনি জানান, মন্দিরটি সাড়ে তিনশো থেকে চারশো বছরের প্রাচীন। মজিলপুর নামের উদ্ভব নিয়ে নদীর মজে যাওয়া তত্ত্বে দ্বিমত নেই তাঁর। রেললাইনের ওপারে মা জয়চন্ডী অধিষ্ঠান করছেন বলে জানান তিনি, এই জয়চন্ডী ধন্বন্তরী মায়ের থেকেও ৪০০-৫০০ বছরের প্রাচীন। তিনি আরও জানান নদী-সংলগ্ন স্থানেই একটি বিরাট শ্মশান ছিল। সেখানে বসবাস করতেন এক সন্ন্যাসী। তিনিই সেবা করতেন মা ধন্বন্তরীকে। নদী মজে যাওয়ার আগে নদীপথেই বাণিজ্য করতেন দেশ-বিদেশের বহু জমিদার। একদিন রাত হয়ে যাওয়াতে কোনও এক জমিদার ডাকাতের ভয়ে এগোতে পারেননি নদীবক্ষে। নোঙর রেখে আশ্রয় নেন সন্ন্যাসীর কুটিরে। মাকে দেখে ভক্তি জন্মায় তাঁর অন্তরে। তারপর যাতায়াতের পথে মাঝে মাঝেই আসতেন সন্ন্যাসীর কাছে। একদিন সন্ন্যাসী অনুরোধ করেন ওই জমিদারকে। মা-কে প্রতিষ্ঠা করার অনুরোধ। অনুরোধ ফেলতে পারেননি জমিদার। মাকে নিয়ে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন তিনিই। সেই জমিদারই পরবর্তীকালে মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে দারু মূর্তি গড়ান। মূর্তিটি এককাঠের।

 

সেবায়েত আরও জানান, ধন্বন্তরী নামটি পরবর্তী কালের। ধন্বন্তরী হলেন দেবতাদের কবিরাজ। যিনি মরা মানুষকেও বাঁচিয়ে তুলতেন। ধন্বন্তরী মা নন, তিনি বাবা। মায়ের একটা স্বপ্নাদিষ্ট ওষুধ আছে, অব্যর্থ ওষুধ। গ্যাস, অম্বল জাতীয় রোগে এটি কাজ করে। সেই ওষুধ খেয়েই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠত রোগীরা। ওষুধটা ধন্বন্তরীর মত কাজ দিত বলে সবাই মাকে ধন্বন্তরী বলেই ডাকত। সেই থেকেই মায়ের নাম ধন্বন্তরী।
সেই সপ্তদশ শতাব্দী থেকে দেবীর নিত্যসেবাপুজো আজও চলে আসছে অপ্রতিহত গতিতে। কালীপুজো, অমাবস্যা, শনি-মঙ্গলবার এই দিনগুলি বাদ দিলেও প্রতিদিনই হাজারো পুণ্যার্থী ভিড় জমান মন্দির প্রাঙ্গণে। তবে বার্ষিক পুজো হয় বৈশাখ মাসে। সেই সময়ে মন্দির প্রাঙ্গণে ১৫ দিন ধরে চলে মেলা। সবচেয়ে বিস্ময়কর হল, এই ১৫ দিনই পরিবর্তিত হয় দেবীর বেশ। দূর-দূরান্ত থেকে আসেন ভক্তবৃন্দ।

 

More Related Articles

অপারেশন সিঁদুর' ট্রেডমার্কের দৌড়ে নামল একাধিক কোম্পানি, সেনা অভিযানের পর বাড়ছে বাণিজ্যিক লড়াই
Featured News

অপারেশন সিঁদুর’ ট্রেডমার্কের দৌড়ে নামল একাধিক কোম্পানি, সেনা অভিযানের পর বাড়ছে বাণিজ্যিক লড়াই

সাম্প্রতিক সামরিক সাফল্যের পর ‘অপারেশন সিঁদুর’ নাম ঘিরে তৈরি হয়েছে জাতীয় আবেগ। সেই আবেগকে পুঁজি করে ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশনের দৌড়ে নেমেছে একাধিক সংস্থা। শুরু হয়েছে আইনি ও বাণিজ্যিক লড়াই।

Read More »
অপারেশন সিঁদুর: মাসুদ আজ়হারের পরিবারের ১০ সদস্য নিহত, ভারতীয় প্রত্যাঘাতে কেঁপে উঠল বহওয়ালপুর!
Breaking News

অপারেশন সিঁদুর: মাসুদ আজ়হারের পরিবারের ১০ সদস্য নিহত, ভারতীয় প্রত্যাঘাতে কেঁপে উঠল বহওয়ালপুর!

ভারতের অপারেশন সিঁদুরে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ২১টি জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস। জইশ প্রধান মাসুদ আজ়হারের পরিবারের ১০ সদস্য নিহত। বহওয়ালপুরে চালানো এই হামলায় আজ়হার বেঁচে আছেন কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা।

Read More »
‘অপারেশন সিঁদুর’: গভীর রাতে পাকিস্তানের ৯টি জঙ্গি ঘাঁটিতে ভারতীয় সেনার প্রত্যাঘাত, সাংবাদিক বৈঠকে জানালেন দুই ‘অগ্নিকন্যা’
Breaking News

‘অপারেশন সিঁদুর’: গভীর রাতে পাকিস্তানের ৯টি জঙ্গি ঘাঁটিতে ভারতীয় সেনার প্রত্যাঘাত, সাংবাদিক বৈঠকে জানালেন দুই ‘অগ্নিকন্যা’

পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার জবাবে ভারত চালালো ‘অপারেশন সিঁদুর’। পাক অধিকৃত কাশ্মীর ও পাকিস্তানের ৯টি জঙ্গি ঘাঁটিতে নিখুঁত স্ট্রাইক। সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করলেন উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংহ ও কর্নেল সোফিয়া কুরেশি।

Read More »
দেশ

ভারতজুড়ে ২৫৯টি স্থানে নিরাপত্তা মহড়া, পশ্চিমবঙ্গেও তৎপরতা চরমে—পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনার প্রেক্ষিতে জোরদার প্রস্তুতি

পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত উত্তেজনার প্রেক্ষিতে দেশজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার, সেনা-আসামরিক যৌথ মহড়া, পশ্চিমবঙ্গের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় চূড়ান্ত সতর্কতা।

Read More »
দেশ

দেশপ্রেমের নতুন সংজ্ঞা: সোশ্যাল মিডিয়াতেই লড়াই, আপনি কি প্রস্তুত ‘ডিজিটাল যোদ্ধা’ হতে?

দেশের বিরুদ্ধে অনলাইনে চলতে থাকা বিদ্বেষমূলক প্রচার আর বরদাস্ত করবে না কেন্দ্র। এবার যে কেউ, যেকোনো জায়গা থেকে দেশের পাশে দাঁড়াতে পারেন—হোক সেটা বাড়ির সোফা, অফিসের ডেস্ক কিংবা মোবাইলের স্ক্রিন। কারণ, ‘ডিজিটাল যুদ্ধ’ এখন শুরু হয়েছে, এবং এই যুদ্ধে সেনা শুধুই সীমান্তে নয়—রাস্তায় নামবেন আপনি, আমিও।

Read More »
error: Content is protected !!