সৌমেন দাসঃ কথায় আছে মা ছাড়া কেউ প্রসব যন্ত্রণা বোঝেনা! এখানে কিন্তু মা এক অর্থে শিল্পী দেরও বোঝানো হয়। একটা চলচ্চিত্র যখন তৈরী হয় তখন কাহিনীকার, পরিচালক, অভিনেতা অভিনেত্রী ছাড়াও সেখানে অবদান থাকে বহু মানুষের।
শুটিংয়ের সময় যে মানুষ টা সকলের জন্য চা পৌঁছে দেয় তারও অবদান কে অগ্রাহ্য করা যায় না। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, নিদ্রাহীন ভাবে শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম করে তখন সকলের চোখে থাকে একটাই দিবা স্বপ্ন – ছবি টাকে হিট করা। কিন্তু 30/40 জনের এই টিমের এত পরিশ্রমের পরেও থেকে যায় অনেক বিষয় যা একটি ভালো ছবি কে দর্শকের চোখের আড়ালে পাঠিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট।
এই 30/40 জনের টিম কিন্তু আর কোন কাজেই পারদর্শী নন। এদের অন্য কোন জীবীকা নেই। পরিচালক থেকে স্পটবয় এরা একটা নেশার টানে ছবি তৈরীতে হাত লাগান। উদ্দেশ্য একটাই ছবি টাকে হিট করানো আর একটু হাততালি কুড়োনো। এটাই এদের প্রসব যন্ত্রণা।
আর আমিও এই টিমের অন্যতম সদস্য। আমি ছিলাম এই ছবির BTS অর্থাৎ Behind the sceane এর দায়িত্বে। তাই এই ছবিতে কি অমানবিক প্ররিশ্রম সবাই করেছেন তা বোধহয় আমার থেকে ভালো কেউ জানে না। তাই বিশ্বাস করুন এই লেখাটা এক প্যকেট বিরিয়ানির বদলে নয় বরং অনেক টা আবেগ প্রবন হয়েই লিখছি।
একটু অনাড়ম্বর ভাবেই দক্ষিন কলকাতায় প্রিয়া-তে হয়েগেল “রিষ” এর প্রিমিয়ার। একেবারেই নিজেদের পারিবারিক অনুষ্ঠানের মত। না, বাংলা চলচ্চিত্র জগতের অনান্য মহিরুহরা কেউ উপস্থিত ছিলেন না। উপস্থিত ছিলেন রিষ এর কাহিনীকার দেবারতি ভৌমিক, পরিচালক প্রীতম মুখোপাধ্যায় সহ মুখ্য অভিনেতা সৌরভ দাস অভিনেত্রী দর্শনা বনিক সহ অনান্য পাশ্ব অভিনেতা অভিনেত্রীরা। প্রথম পর্দা ওঠানোর শুভক্ষনের কেক কাটলো শিশু শিল্পী কিয়ানা মুখোপাধ্যায় যাকে ঘিরেই রিষ গল্পের রোমাঞ্চ।
প্রমোশনের বাজেট শূন্য এই প্রিমিয়ারে উজ্জ্বলতা একটু বাড়াতে উপস্থিত ছিলেন হিডকো ম্যানেজিং ডিরেক্টর দেবাসিস সেন ভার প্রাপ্ত আধীকারিক আই পি এস দুতিমান ভট্টাচার্য্য (ডি সি হাওড়া পুলিশ ) ও প্রিয়া এন্টারটেইনমেন্টের কর্নধার অরিজিৎ দত্ত।
ধন্যবাদ জানাই প্রযোজক রুপক চট্টোপাধ্যায় কে যিনি বিদেশে থেকেও বাংলা ছবি তৈরী করে বিশ্বের দরবারে পৌছে দেবার স্বপ্ন দেখেন তাও নতুন পরিচালকদের নিয়ে। ভরসা রেখে ছিলেন দেবারতি ভৌমিকের লেখা গল্প ও পরিচালক প্রীতম মুখোপাধ্যায়ের ওপর আর সেই সম্মান রেখেছেন পরিচালক।
ঘটা করে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রমোশন করার বাজেট নেই বলেই রিষ সম্পর্কে দর্শককূল অজ্ঞাত। কিন্তু বাংলা ছবির জগতে রিষ একেবারেই অন্যরকম ভৌতিক গল্প। এই প্রথমবার একটি 6 বছরের শিশু শিল্পীর ওপর ব্যবহার করা হয়েছে প্রস্থেটিক মেকাপ। ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে মেকাপ চলার সময় কতবার ঘুমিয়ে পড়েছে, মেকাপ তুলতে গিয়ে শিশু ত্বকে এতটাই জ্বালা হয়েছে যে শিশু নয়নে নেমে এসেছে বারি ধারা। কিন্তু এসবের খবর কেই বা রাখে।
অবাক করা বিষয় হল যে সব মুল-ধারার পত্রিকা গোষ্ঠী প্রথম থেকে এই ছবির পাশে ছিল তারাই কোন এক অজ্ঞাত কারনে এই ছবির প্রিমিয়ার ও প্রচার অভিযান থেকে বিরত থেকে গেলেন।
তবে এটা বলা যেতেই পারে দর্শক যদি “রিষ” মিস করেন তাহলে এর বাংলা চলচ্চিত্র জগতে থেকে বড় অবিচার আর কিছু হবে না। কারন যদি আপনি ভয় পেতে ভালোবাসেন তাহলে আপনাকে দেখতেই হবে “রিষ” যা চলছে আপনার কাছের মাল্টিপ্লেক্স গুলিতে।