ল্যাংচা এক রকমের রসের মিষ্টি। এর রঙ হয় কালচে বাদামী। পশ্চিমবঙ্গের শক্তিগড়ের ল্যাংচা বিখ্যাত। গঠনে ও স্বাদে এটি অনেকটা বাংলাদেশের কালজামের মতো।
ল্যাংচার উৎপত্তি ও নামকরণ নিয়ে মতভেদ আছে। বিশিষ্ট সাহিত্যিক নারায়ণ সান্যালের রূপমঞ্জরী উপন্যাসে বর্ণিত কাহিনীকে প্রামাণ্য ধরে সাংবাদিক গৌতম ধনী কৃষ্ণনগর ও বর্ধমানের রাজ পরিবারের বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে ল্যাংচার উৎপত্তির ইতিহাস খোঁজার চেষ্টা করেছেন।
একজন মহারাজা/জমিদার বর্ধমানের কোনো মিষ্টান্ন কারিগর কে বলেন যে তিনি ভাজা মিষ্টি খেতে চান, আর তখন সেই তাড়াতাড়ি করে সেই কারিগর ওনাকে একরকম ভাজা মিষ্টি বানিয়ে দেন এবং সেটি খুবই সুস্বাদু হয়,যিনি ওই ভাজা মিষ্টি তৈরি করে ছিলেন তিনি ল্যাংড়া ছিলেন, ওনার নাম অনুসারে ওই মিষ্টির নাম হয় ল্যাংচা ।
কৃষ্ণনগরের রাজকন্যার বিয়ে হয়েছে বর্ধমানে রাজকুমারের সঙ্গে। অন্ত:সত্ত্বা হলেন রাজকুমারী। খুশির হাওয়া রাজবাড়িতে। কিন্তু শুরু হল অন্য এক বিপত্তি। কোনও খাবারেই রুচি নেই রাজকন্যার। একদিন যায়, দু-দিন যায়, রাজবৈদ্য, কবিরাজদের পথ্য বদল হয়, কিন্তু রুচি ফেরে না। চিন্তা বাড়তে থাকে রাজা রানি সহ সকলেরএকদিন দেখা দিল আশার আলো।
রানিমাকে রাজকন্যা একদিন বললেন, কৃষ্ণনগরে রসে ডোবানো এক ধরনের ভাজা কালো রংয়ের মিষ্টি খেয়েছিলো সে। সেই মিষ্টি মিললে মুখের অরুচি কাটতে পারে। কিন্তু কি সেই মিষ্টি, কে তার কারিগর কিছুই জানে না সে। তবে যে ময়রার কাছে সে ওই মিষ্টি খেয়েছিল সেই ময়রার একটি পা খোঁড়া, তাই সে একটু খুঁড়িয়ে হাঁটে। রাজকন্যার মুখে এই কথা শোনামাত্র রাজা তখনই কৃষ্ণনগরের লোক পাঠালেন। অবশেষে খোঁজ মিলল সেই ময়রার। খুঁড়িয়ে বা লেংচে হাঁটার জন্য তাকে সবাই ডাকতো ল্যাংচা ময়রা বলে। রাজার আদেশে সেই ময়রা তখন রাজকন্যাকে ঘিয়ে ভাজা রসে ডোবানো কালো রংয়ের একটু লম্বাটে অপূর্ব স্বাদের সেই মিষ্টি খাওয়ালো। সেই মিষ্টি খেয়ে রাজকন্যার এতদিনের অরুচি দূর হলো।
রাজবাড়ির সবার মুখে হাসি ফুটলো। ল্যাংচা ময়রার নামেই সেই মিষ্টির নাম রাখা হল ল্যাংচা। ময়রাকে প্রচুর ভূসম্পত্তি ও উপহার দিলেন মহারাজ। সেই ময়রা বর্ধমানের শক্তিগড়ে নতুন বসতি গড়ে তুললেন। ল্যাংচা ময়রার তৈরি লাংচার সুনাম তখন ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে। দিনে দিনে বিখ্যাত হল শক্তিগড়ের ল্যাংচা।
ছানার সঙ্গে চালগুড়ি মিশিয়ে তা নোড়ার মতো আকার দেওয়া হয়। এরপর তা তেল বা গাওয়া ঘিয়ে ভাজা হয়। তারপর ফেলা হয় চিনির রসে। পাঁচ টাকা বা দশ টাকা পিস হিসেবে বিক্রি হয়। আগে শক্তিগড়ের ছিল এই ল্যাংচার পসার। দু নম্বর জাতীয় সড়ক তৈরির পর ব্যাবসার বেশিরভাগটাই গাংপুরের কাছে আমড়া এলাকার উঠে আসে। এখানে এখন শতাধিক ল্যাংচার দোকান রয়েছে। মূলত জাতীয় সড়ক ব্যবহারকারীরাই এখানের ক্রেতা।