পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ আচ্ছা ছোটবেলায় সবথেকে বেশি রাগ কার ওপর হত বলুন তো? যদি সকলের রাগের কারণ একটি মানুষ হতে হয় তবে সেই মানুষটা নিঃসন্দেহে কে সি নাগ। সেই লোকটা যে চৌবাচ্চায় দুটো ফুটো রাখতেন বা বাঁদরকে তেলমাখা বাঁশে উঠতে দিতেন বা দোকানীকে দিয়ে চালে কাঁকড় মেশাতেন, বা লোককে দিয়ে দেখাতেন ট্রেন কত সেকেন্ডে পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে।
সেই লোকটার ওপর অল্পবিস্তর রাগ করেননি এমন ছেলেবেলা বোধহয় নেই। তবে আবার কিছু অঙ্ক প্রেমী ছেলে মেয়ে তাকে ভালোওবাসতেন। আজ সেই লোকটার ১২৯ তম জন্মদিন। যতদিন ক্লাসে অঙ্ক করানো হবে যতদিন পাটীগণিত নামক বিষয়টি স্কুলের পাঠ্যবইতে থাকবে ততদিন তিনি থাকবেন প্রত্যেকটা ছাত্র ছাত্রীর মনে ভয়ে এবং ভালোবাসায়।
ছাত্রদের অঙ্কে ভীতি দূর করিয়ে তাদের অঙ্কের প্রতি ভালোবাসা তৈরি করাই ছিল তার একমাত্র উদ্দেশ্য। তার বাড়ীর আড্ডায় বসে তাকে প্রথম বই লেখার পরামর্শ দেন কথা সাহিত্যিক শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তিনের দশকে প্রকাশিত হল ‘নব পাটীগণিত’ বইটি। মুহূর্তে জনপ্রিয় হয়ে উঠল বইটি। এরপর প্রকাশক তাকে অনুরোধ করলেন গাইড বুক প্রকাশ করার জন্য। কিন্তু অঙ্কের মানে বই বের করতে তিনি রাজী হননি।
তাকে বোঝানো শিক্ষকদের প্রয়োজনে সেই বই লিখতে। ১৯৪২ সালে তিনি প্রকাশ করলেন ‘ম্যাট্রিক ম্যাথেমেটিক্স’। এর চাহিদাও হল আশানুরূপ। বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত হতে লাগল তার বইদুটি। আজ এত বছর পরেও সেই বইয়ের জনপ্রিয়তায় একটুও ধুলো পড়েনি।
তার নিজের শিক্ষক জীবনের তার বহু ছাত্র ছিলেন যারা আজকের দিনেও বেশ পরিচিত নাম। সুভাষ মুখোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, বিকাস রায়, রঞ্জিত মল্লিক প্রমুখ। শিক্ষক এবং গণিতপ্রেমী ছাড়াও তার আর এক দিক ও ছিল যা মানুষের অজানা। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রত্যক্ষ ভাবেই যুক্ত ছিলেন তিনি। গান্ধীজীর সঙ্গে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। যার ফল স্বরূপ কারাবাসও হয়েছে তার। নিঃস্বার্থ ভাবে দেশের লোকের কথা ভাবতেন তিনি। এখনও তার বই বিক্রির পুরো রয়্যালটির পুরো টাকাটাই চলে যায় চ্যারিটি ফাণ্ডে।