Home » শীতকালীন উইকেন্ড ট‍্যুরের কয়েকটি ঠিকানা, চাইলেই ঘুরে আসতে পারেন।

শীতকালীন উইকেন্ড ট‍্যুরের কয়েকটি ঠিকানা, চাইলেই ঘুরে আসতে পারেন।

‘আরো দূরে চলো যাই, ঘুরে আসি’ সপ্তাহান্তে আমাদের সকলের মনেই এই লাইনটি ঘুরে ফিরে আসে। এই ছোট ট্রিপগুলো অনেকটা গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহের পরে প্রথম বৃষ্টিস্নাত দিনের মতো। রুক্ষ্ম এবং শুষ্ক দিনের অনাগত বৃষ্টিপাত যেমন হঠাৎ করে সব ক্লান্তি দূর করে মনের মধ্যে অদ্ভুত আনন্দ এনে দেয়, উইকএন্ড ট্রিপগুলো অনেকটা সেই রকম আভাস এনে দেয়।
সপ্তাহান্তের ছুটিতে কাছে পিঠের জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার ট্রেন্ড ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। সময় সুযোগ পেলেই ঘরের কাছের কোনও জায়গা বেড়িয়ে আসতে চান সকলে। কলকাতার কাছে এমনই কয়েকটা সপ্তাহান্তের কয়েকটা সেরা ঠিকানা রয়েছে যা কংক্রিটের জঙ্গল এবং একই সঙ্গে দীর্ঘদিনের একঘেয়েমি থেকে চটজলদি মুক্তি দিতে পারে।

মহিষাদল রাজবাড়ি

একাধিক রাজবাড়ি এখন পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ইটাচুনা রাজবাড়ি, বাওয়ালি রাজবাড়ি থেকে শুরু করে মহিষাদল রাজবাড়ি। সবই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এখানে রাজকীয় মেজাজে পর্যটকদের থাকার সব বন্দোবস্ত করা হয়েছে। প্রাচীন আমলের দোরদালান থেকে শুরু করে রাজার পালঙ্ক সেই আদলেই সাজানো হয়েছে পর্যটকদের ঘরগুলি। তার সঙ্গে খাবারের আয়োজন তো রয়েইছে। শ্বেতপাথরের টেবিলে কাঁসার থালা বাসনে খেতে মন্দ লাগবে না।

ইটাচুনা রাজবাড়ি

যানজট, অসহ্য গরম, ঘর্মাক্ত কলকাতা। পিচ গলা রোদ্দুর, তপ্ত, পুড়ে যাওয়া কলকাতা। এক পা এগোলেই লোকের সঙ্গে ঠোকাঠুকি, জনসমুদ্র, দমবন্ধ কলকাতা। এই বৃষ্টি, হঠাৎ বৃষ্টি, প্যাচপ্যাচে কাদা আর জল জমার কলকাতা। সত্যি, মাঝে মাঝে পাগলের মতো ভিড়, দমবন্ধ ইটকাঠ, পাথর আর কংক্রিটের শহর থেকে মন পাড়ি দেয় অন্য কোথাও। অপেক্ষা শুধু সপ্তাহশেষে যৎসামান্য তল্পিতল্পা নিয়ে কোনওক্রমে পালিয়ে যাওয়ার। তখন প্রতি দিনের ছাপোষা জীবন আর তুচ্ছতাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে যদি এক ছুট্টে চলে যাওয়া যায় ইতিহাসমাখা কোনও রাজবাড়িতে? যদি যান্ত্রিক আধুনিকতাকে সটান ছুড়ে ফেলে কাটানো যায় কিছু রাজকীয় দিনরাত? তা হলে তো কথাই নেই! জনঅরণ্য থেকে খানিক দূরেই হুগলির ইটাচুনা রাজবাড়ি প্রস্তুত আভিজাত্যের চাদরে মোড়া মেদুর কিছু মুহূর্ত উপহার দিতে।

সুন্দরবন

বঙ্গোপসাগরের অনেকগুলি দ্বীপপুঞ্জের সমন্বয়ে গঠিত সুন্দরবন অঞ্চলটি। তাছাড়াও ভারতের ম্যানগ্রোভ অরণ্য গুলির মধ্যে সুন্দরবন অন্যতম। কলকাতার সল্টলেক কিংবা সায়েন্স সিটি অঞ্চল থেকে বাস ধরে পৌঁছে যান গদখালী। সায়েন্স সিটি থেকে গদখালীর দূরত্ব প্রায় ১০০কিমি। সম্পূর্ণ ব-দ্বীপ অঞ্চল ভ্রমণের জন্য গদখালী থেকে একটা মোটরবোট ভাড়া করে নিন। বোটের মধ্যেই দুপুরের লাঞ্চটা সেরে পৌঁছে যান হোটেলে। সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য আপনি প্যাকেজ ট্যুর বুক করে নিতে পারেন। এই প্যাকেজে খাবার, হোটেলে রাত্রিবাস এবং ম্যানগ্রোভ অরণ্য ভ্রমণ, সমস্ত কিছুই অন্তর্ভুক্ত থাকে। শীতকালীন সময়টাই সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য আদর্শ সময়। ভারতের এই ম্যানগ্রোভ অঞ্চলটি একসময় উপেক্ষিত থাকলেও বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দ্বারা সুন্দরবন অঞ্চলটি পর্যটনের নতুন দিশা খুঁজে পেয়েছে। প্রকৃতির রহস্যময়তা, খাদ্য বৈচিত্র্য এবং নৌকাবিহার; সবমিলিয়ে সুন্দরবন সপ্তাহান্তে ভ্রমণের জন্য এক্কেবারে আদর্শ।

দীঘা

পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত সমুদ্র সৈকতগুলির মধ্যে অন্যতম হল দীঘা এবং তাজপুর। তবে একমাত্র দীঘাতেই সারাবছর পর্যটকদের ভিড় লক্ষ করা যায়। অন্যদিকে তাজপুর এখনও সেভাবে পর্যটকদের নজরের আওতাভুক্ত হতে পারেনি, আর সেই কারণেই দীঘার তুলনায় তাজপুর অনেকটাই পরিছন্ন। দীঘা যেমন ঝিনুক দ্বারা নির্মিত সামগ্রীর জন্য বিখ্যাত, ঠিক তেমনি তাজপুর অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস এর জন্য বেশ প্রসিদ্ধ। দীঘা থেকে একটা ছোট গাড়ি ভাড়া করে আপনি অনায়াসেই আধঘণ্টার দূরত্বে তাজপুর ভ্রমণ করে আসতে পারেন। গ্রীষ্মকাল বাদে বছরের যে কোনও সময়েই এখানে ভ্রমণ করে আসতে পারেন। সপ্তাহান্তে সমুদ্র দর্শনের জন্য একমাত্র ঠিকানা হল দীঘা । দীঘা সমুদ্রসৈকত যেটি ওল্ড দীঘা এবং নিউ দীঘা এই দুই অংশে বিভক্ত। বর্তমানে পর্যটকদের ভিড়ে দীঘার প্রকৃত সৌন্দর্যের খানিক বিলুপ্তি ঘটেছে।

তাজপুর

দীঘা থেকে মাত্র ৩০মিনিট দূরত্বে অবস্থিত তাজপুর। বাণিজ্যিকরণের দিক থেকে দীঘার তুলনায় তাজপুর অনেকটাই পিছিয়ে। তাই প্রকৃতিকে উপভোগ করার জন্য তাজপুর আদর্শ। পর্যটনের অগ্রগতির জন্য এখানে কিছু শ্যাকও রয়েছে।

মন্দারমণি

বিলাসিতার সঙ্গে কোনও সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে ছুটি কাটানোর জন্য পৌঁছে যেতে পারেন মন্দারমণি। কলকাতা থেকে রাজ্য পরিবহণ সমিতির বাসে চেপে পৌঁছে যান চাউলখোলা। আপনার বুক করা হোটেল বা রিসোর্ট-এর গাড়ি সহযোগে চাউলখোলা থেকে পৌঁছে যেতে পারেন মন্দারমণি। বিচের তীরে প্রতিটি রিসোর্ট খুব সুন্দর ভাবে সাজানো, তাছাড়াও রিসোর্টগুলোর ব্যবস্থাপনাও বেশ ভাল বলতে হয়। খাবারগুলোও মোটের উপর ভালই। তবে দীঘার রিসোর্টগুলোর তুলনায় মন্দারমণির রিসোর্ট-এ রাত্রিবাসের খরচ অনেকটাই বেশি; আর এই সমুদ্রসৈকতটি বেশ নিলিবিলি এবং নির্জন। বছরের যে কোনও সময় মন্দারমণিতে আপনাকে স্বাগত। এমনকি প্রখর গ্রীষ্মের দিনেও সন্ধের পরে এখানকার পরিবেশটা মনোরম থাকে। প্রকৃতি নির্জনতা এবং সমুদ্রের উন্মাদনাকে উপভোগ করার জন্য মন্দারমণি আদর্শ স্থান হিসেবে পরিচিত। গভীর রাতে একান্তে সমুদ্রের মূর্ছনাকে কান পেতে শুনতে চাইলে আপনাকে মন্দারমণি ভ্রমণের প্ল্যান করতেই হবে।

শান্তিনিকেতন

পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতির একমাত্র পীঠস্থান হলো শান্তিনিকেতন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একসময় এই জায়গাটিকে নিজের বাসস্থান হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন এবং এখানে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করে তিনি ছাত্রদের পড়াতেন, পরবর্তীকালে যেটি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিতি পায়। বর্তমানে পর্যটনের উদ্দেশ্যে এখানে অনেক হোটেল এবং রিসোর্ট-এর নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতি শনিবার বিকাল ৪ থেকে এখানে হাট বসে। পোড়া মাটির তৈরী জিনিস থেকে কাথা শাড়ী, বিভিন্ন ধরণের স্থানীয় খাদ্য – একই জায়গায় সমস্ত কিছু পেয়ে যাবেন। এই হাটে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সাথে সাথে অনেক বাউল এবং লোক গানের সাথে পরিচিত হতে পারেন।

শান্তিনিকেতন ভ্রমণের জন্য দোল বা হোলির সময়টাই আদর্শ সময় হিসেবে পরিগণিত হয়। এই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং শিক্ষকরা দোল খেলার সাথে সাথেই একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকেন। রংদোলের সময় শান্তিনিকেতনে দেশের বিভিন্ন স্থান এমনকি সারা বিশ্ব থেকেও পর্যটকদের সমাগম হয়। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নির্মিত বিশ্ববিদ্যালয় এবং সেখানকার পরিবেশ তথা সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের সঙ্গে আলাপ করতে পৌঁছে যেতে পারেন শান্তিনিকেতন।

পাখিরালয়

সুন্দরবন ভ্রমণে গিয়ে পাখিরালয় অঞ্চলে রাত্রিবাস করতে পারেন। এখানে বিভিন্ন ধরণের হোটেল এবং রিসর্ট উপলব্ধ আছে। এছাড়াও, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটনের উদ্দেশ্যে নির্মিত বিলাসবহুল নৌকোটিকেও আপনি রাত্রিবাসের জন্য বেছে নিতে পারেন।

দ্য F-ফোর্ট রায়চক

রায়চকে বিলাসবহুল হোটেলে রাত্রিবাসের জন্য F-ফোর্টকে বেছে নিতে পারেন। একসময়ের ডাচদের নির্মিত এই দুর্গটি বর্তমানে একটি হোটেলে পরিণত হয়েছে। রাজকীয়তার সঙ্গে ভ্রমনের দিনগুলো অতিবাহন করার জন্য F-ফোর্ট এক্কেবারে আদর্শ।

রায়চক

গঙ্গার নদীর তীরে অবস্থিত রায়চক অঞ্চলটি। গাড়ি নিয়ে কলকাতা থেকে ডায়মন্ড হারবার রোড ধরে খুব সহজেই পৌঁছে যেতে পারেন রায়চক। IIM কলকাতাকে পিছনে ফেলে একটু এগিয়ে গেলেই দেখা পেয়ে যাবেন অনেকগুলো বিলাসবহুল রিসোর্ট-এর। এখানে ডাচদের নির্মিত ফোর্টটির বিলাসবহুল হোটেলে পরিণত হওয়ার পরই রায়চক জায়গাটি বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। বর্তমানে ফোর্টটি জনসাধারণের দর্শনের জন্য খোলা আছে। ফোর্টের উপর থেকে গঙ্গা নদী দর্শন করতে বেশ রোমাঞ্চকর লাগে। গ্রীষ্মকাল ব্যাতীত বছরের যে কোনও সময় রায়চক ভ্রমণ করে আসতে পারেন। গঙ্গা নদীর তীরে ড্রাইভ করে একদিনের ভ্রমণের জন্য রায়চক আদর্শ ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Click to Go Up
error: Content is protected !!