সদ্য হাইকোর্টের বিচারপতি শিক্ষক নিয়োগ দূর্নীতি মামলায়, রাজ্যের শিক্ষা দফতর কে, OMR Sheet এ জালিয়াতি ও ঘুষের পরিবর্তে পাওয়া গ্রুপ – ডি-র চাকরি পাওয়া ২৮০০ জন শিক্ষক দের চাকরি থেকে বরখাস্তের নির্দেশ দিয়েছেন তার সাথে এতদিন যা বেতন তারা পেয়েছেন সেই সমস্ত বেতনের টাকাও ফেরত দেবারও আদেশ দিয়েছেন । রাজ্যের শিক্ষা দফতরও মেনে নিয়েছে যে OMR Sheet এ জালিয়াতি হয়েছিল। ইতিমধ্যেই ২৮০০ জনের মধ্যে গতপরশু ১৯১১ জনের চাকরি থেকে বরখাস্তের তালিকা প্রকাশ করাও হয়েছে। অযোগ্য এই চাকরি হারানো শিক্ষকরা এই চাকরি পেয়েছিলেন মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ দিয়ে।
বিচারপতি অভিজিত গঙ্গোপাধ্যায়ের এই রায় দানের পর রাজ্যের বিরোধী দল নেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রশ্ন তুলেছেন – এই ১৯১১ জন চাকরি পেতে তাদের জমি বাড়ী বিক্রি করে ঘুষ দিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন, এখন এত দিনের বেতন যদি ফেরত দিতে হয়, তাহলে এবার এরা কি বেচবেন? কিডনি?
সত্যি এবার ভাবার বিষয় এই ২৮০০ জন বা ১৯১১ জন ঠিক কতটা বিপদে পড়লেন। কথায় আছে অন্যায় যে করে, আর অন্যায় যে সহে তারা দুজনেই সমান দোষী।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম বারং বার এটাই দেখাচ্ছে বা তুলে ধরছেন এই ১৯১১ জনের বিপদে পড়ার কথা। আবার কেউ তুলে ধরছেন তাদের বর্তমান “অনুভূতি”-র কথা। কিন্তু এনারা ঠিক কতটা বিপদে আছেন। খেলা কি এখানেই শেষ, নাকি শুরু হল এক নতুন খেলা?
সম্ভবত ঠিক এই বিষয়ে আমরাই প্রথম আলোকপাত করতে চলেছি আপনাদের কাছে এবং অবশ্যই নিরপেক্ষ ভাবে।
যারা বেনিয়ম করে ঘুষের পরিবর্তে চাকরি পেয়ে ছিলেন তাদের “দোষ” নাকি যারা তাদের এই “বেনিয়ম করে, ঘুষের পরিবর্তে” চাকরি পাবার পথ দেখিয়েছেন তাদের “দোষ”?
বিক্ষোভ অবস্থানকারী চাকরী প্রার্থীদের চাকরি দেবার দায় কার? আবার রাজ্যের মাননীয়া বলেছেন – কারোর চাকরি যাবেনা আমরা অন্য পদ তৈরী করবো। এ সব মিলিয়ে ব্যাপার টা বেশ জটিল।
আসুন শুরুর দিক থেকে শুরু করা যাক। এই মুহুর্তে বলা বাহুল্য গোটা শিক্ষা দফতর টাই জেলে বন্দি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দল এক এক করে শিক্ষক দূর্নীতি কান্ডের ষড়যন্ত্রী দের গ্রেফতার করছেন। কিন্তু অযোগ্য চাকরি প্রার্থীরা বেনিয়ম ও ঘুষ দিয়ে চাকরি পেয়ে একটাই সুবিধা নিয়েছিলেন, একটা সরকারি চাকরি যাতে নিজের ও পরিবারের পেট চালানো যায়। যদিও চাকরি পাবার ধরন ও যোগ্য চাকরি প্রার্থীদের বঞ্চিত করাটাও অন্যায় ও অপরাধ। কিন্তু ক্ষুধার্তের রুটি চুরির শাস্তি কি বা কতটা? আন্দোলনরত চাকরি প্রার্থীদেরই বা চাকরী পাবার সম্ভাবনা ঠিক কতটা?
অযোগ্য প্রার্থীদের বেনিয়ম ও ঘুষের বদলে চাকরি পাবার দায়ে, তাদের কে চাকরি থেকে বরখাস্তের রায় দিয়েছেন হাইকোর্টের মহামান্য বিচারপতি অভিজিত গঙ্গোপাধ্যায়। ২৮০০ জনের মধ্যে ইতিমধ্যে ১৯১১ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করেছে শিক্ষা দফতরও কিন্তু এখনো এই তর্ক বাকি। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতির এই রায় কে চ্যালেঞ্জ করে বহিস্কৃত শিক্ষকরা যেতে পারেন দেশের সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়ের কাছে, অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্টে। সেখানে রায়দানে সন্তুষ্ট না হলে সেখানেই রয়েছে উচ্চ ডিভিশন যেখানে আবার পুনর্বিবেচনা করা যাবে। আইনি তর্ক ও জটিলতায় শেষ বিচার হতে লেগে যেতে পারে অনন্ত কাল।
অন্যদিকে শাষক গোষ্ঠীর অর্থাৎ তৃনমূল কংগ্রেসের কিছু অসৎ নেতার ষড়যন্ত্রে, ইতিমধ্যেই জড়িয়েছে শাষক দলের ও রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রীর মান সম্মান। বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দ তথা রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অনেকেই এই ষড়যন্ত্রের মূল ষড়যন্ত্রী হিসাবে রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী তথা তৃনমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো মমতা বন্দোপাধ্যায় কেই দায়ী করছেন। তবে তা তার্কিক ও আইনি প্রমান সাপেক্ষ। তবে নিজের তৃনমুল কংগ্রেসের সম্মান বজায় রাখতে ও নিজের ভাবমূর্তি অক্ষুন্ন রাখতে মাননীয়া সম্পূর্ন চেষ্টা করবেন কারন এই ২৮০০ জনের পরিবার বিপদে পড়লে তার প্রভাব পড়বে ব্যালট বক্সে যা তিনি হতে দেবেন না। তিনি আগেই বলেছেন চাকরি কাউকে হারাতে হবে না, প্রয়োজনে নতুন পদ সৃষ্টি করবেন। অন্যদিকে আন্দোলনরত চাকরী প্রার্থীদের ও নিয়োগ দিবার পথ তৈরী করবেন।
ওদিকে সুপ্রিম কোর্টের অনন্তকালের বিচার প্রক্রিয়া কে কাজে লাগিয়ে নতুন পদের নতুন যোজনা একুল আর ওকুল দুই বাঁচাবেন বলেই আশাকরাই যায় কারন পশ্চিমবঙ্গের মানুষ মমতা বন্দোপাধ্যায় কে দেখেই তৃনমূল কংগ্রেসকে সমর্থন করেন, আগামীতেও করবেন।