প্রতিবেদন – সন্দীপচক্রবর্ত্তী
বাংলার খাদ্য সংস্কৃতিতে পান্তা খাওয়ার ইতিহাস অতি প্রাচীন। বাঙালির প্রবচনে উল্লেখ পাওয়া যায়, ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’, বাংলার লোককথায় শোনা যায় ‘পান্তা বুড়ি’র গল্প। বাংলার সাহিত্যের ইতিহাসেও বার বার পাওয়া যায় পান্তাভাতের উল্লেখ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনস্মৃতিতেও আমরা পাই, ‘ইসকুল থেকে ফিরে এলেই রবির জন্য থাকে নতুন বউঠানের আপন হাতের প্রসাদ। আর যে দিন চিংড়ি মাছের চচ্চড়ির সঙ্গে নতুন বউঠান নিজে মেখে মেখে দেয় পান্তাভাত, অল্প একটু লঙ্কার আভাস দিয়ে সে দিন আর কথা থাকে না’।
কালের বিবর্তনে একাধিক সংস্কৃতির বহু কিছু গ্রহণ বর্জনে আমাদের খাদ্য সস্কৃতিরও বেশ কিছু রদ-বদল ঘটেছে। ফাস্টফূড প্রজন্মে জন্মগ্রহণ করা বাঙালিদের অনেকের কাছেই পান্তা ভাত খাবারটি অপরিচিত এখন। তবুও গরীব কৃষকের গামছায় বাধা মাটির সানকির পান্তা ভাত একবিংশ শতাব্দীতে এসে পয়লা বৈশাখে আধুনিক বাঙালির জীবনে যে কৌলীন্য অর্জণ করেছে, তার সাম্প্রতিক নিদর্শন বাংলা নববর্ষের প্রাক্কালে খড়দহ আর্টিস্ট গ্রুপ আয়োজিত অভিনব পান্তা উৎসব।
খড়দহ হরিসভা মন্দিরের পিছনে মুক্ত মঞ্চাঙ্গনে প্রায় ২৫০ জন সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষ মিলিত হয়েছিলেন এই উৎসবে। সাথে ছিল বৈঠকী আড্ডা, গান, নাটক, শ্রুতিনাটক, কবিতা নিয়ে মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান। খাবার পদে ছিল পান্তাভাতের সাথে কচুর শাক, কাসুন্দি, ডালের বড়া, আলুভাজা, চাটনি, পাঁপড় মিষ্টি আর আন্তরিকতার ছোঁয়া।
খড়দহ আর্টিস্ট গ্রুপের কর্ণধার শ্রী প্রসেনজিত ঘটক জানালেন –
অনুষ্ঠানে পাওয়া গেল বিশিষ্ট কবি শ্রী পরাশর বন্দোপাধ্যায়ের। তাঁর মুখেই শোনা গেল তাঁরই উদ্যোগের একটি অমূল্য ফসল “শত কণ্ঠে শত কবি” অনুষ্ঠানের সাফল্যের রূপ ও পান্তা উৎসবের কিছু কথা।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলা লিটল ম্যাগাজিনের বিশিষ্ট সম্পাদক কবি পত্রালি গুহ, কবি অর্নব স্যান্যাল, কবি জিতা লাহিড়ী, কবি চন্দনা দাশবর্মণ, কবি ও সমাজসেবী শহেলী সাহা, বিশিষ্ট গীতিকার ও সুরকার শ্রী পার্থ রাণা প্রমুখ।
ইন্ডিয়ান ক্রনিকেলস পরিবার এই তাৎপর্যপূর্ণ অনুষ্ঠানের বছর বছর সাফল্য কামনা করে।