উত্তর প্রদেশের রাজধানী লখনউ শহরে কিছু দিন আগেই একটি ঘটনা সামনে আসে । মোবাইলে PUB-G গেম খেলতে বাধা দেওয়ায় বা বারন করায় ১৬ বছরের কিশোর তার মাকে গুলি করে হত্যা করে । এবং বারিতেই ৩ দিন ধরে লাশ রেখে দেয়। লাশ থেকে পচা দুর্গন্ধ ঢাকার জন্য সে রুম ফ্রেশনার ব্যাবহার করছিল কিন্তু ৩ দিন পর সেই দুর্গন্ধ এতটাই বেড়ে যায় যে তখন সে তার বাবা কে ( আসানসোলে সেনা বাহিনীতে কর্মরত ) ভিডিও কল করে তার মায়ের লাশ দেখায় এবং পুরো বিষয় টি প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে জানায় ।
PUB-G গেম খেলতে বাধা দেওয়ায় খুন হয়েছে – এটা ছিল পুলিশের প্রাথমিক ধারনা কিন্তু এর পরে যখন ওই ১৬ বছরের কিশোরের ৮ বছরের বোনের বয়ান নেওয়া হয় তখন পুলিশের চোখ মাথায় ওঠে। তদন্তের স্বার্থে এবং যেহেতু এটি জুভেনাইল অপরাধ মামলার আওতায় পড়ে তাই এই কিশোরের নাম মিডিয়ায় কোথাও উল্লেখ করা হচ্ছে না । ১৬ বছরের ওই কিশোর কে এখন একটি জুভেনাইল সেন্টারে রাখা হয়েছে । এবং তাকে মাঝে মাঝেই মনস্তাত্বিক ব্যাক্তি দ্বারা জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে ।
তার ৮ বছরের বোন পুলিশ কে জানায় ঃ ৪ঠা জুন রাতে সে তার মায়ের খাটেই শুয়ে ঘুমাচ্ছিল, হঠাৎ করেই একটা বিকট শব্দে তার ঘুম ভেঙ্গে যায় । সে দেখে তার মা বিছানায় উপুড় হয়ে পড়ে আছে আর রক্ত বয়ে যাচ্ছে । সে মায়ের কাছে যাবার চেষ্টা করতেই তার দাদা তাকে কোলে তুলে পাশের ঘরে নিয়ে যায় এবং ধমক দিয়ে বলে মায়ের আঘাত লেগেছে তাই একটু রক্ত বেরিয়েছে, এখন মা বিশ্রাম নিচ্ছে তাই সে মায়ের কাছে যেন না যায় বলে তাকে ওই ঘরে বন্ধ করে রাখে। তারপরেই তাদের বাড়ির পোষা কুকুর ম্যাক্সি চিৎকার করার কারনে তার দাদা ম্যাক্সি কেও তার সাথে ওই ঘরে বন্ধ করে রাখে । এর পর সে বাড়ির বাইরে তার মায়ের স্কুটার স্টার্ট করার আওয়াজ পায় এবং কিছুক্ষণ পড়ে সেই স্কুটার ফিরে আসার ও আওয়াজ পায়। পরের দিন সকাল থেকে সে যতবার তার দাদা কে খিদে পাবার কথা জানিয়েছে তার দাদা তাকে ম্যাগি করে খাইয়েছে এবং যখনই সে তার দাদা কে পচা দুর্গন্ধের কথা জানিয়েছে তার দাদা ঘরে রুম ফ্রেশনার স্প্রে করে দিয়ে গেছে। আপাতত এই মেয়েটি তার দিদিমার কাছে রয়েছে।
অন্যদিকে ১৬ বছরের ওই কিশোর কে মনস্তাত্বিকরা জেরা করে জানতে পেরেছে – তার বাবার চাকরি স্থল অয় জায়গায় হবার কারনে তাদের বাড়িতে দুই ব্যাক্তি আসত তার মায়ের সাথে দেখা করার জন্য যা তার একদম পছন্দ হত না। এ বিষয়ে সে তার বাবা কেও জানিয়েছিল তার বাবা এই সব কিছু খুব ভালো করেই জানে। এই দুই ব্যাক্তির মধ্যে একজন ছিলেন বিল্ডার ও অন্যজন ছিল একজন ইলেক্ট্রিসিয়ান। এই দুই ব্যাক্তির নাম জানালেও তদন্তের খাতিরে এদের নাম এখনই সামনে আনতে চাইছেন না তদন্তকারী দল। সে এও জানিয়েছে – তার মা ফোনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলতো এবং সে সেই সব কথা তার নিজের স্মার্ট ফোনে রেকর্ড করে তার বাবা কে পাঠাতো , তার বাবা তার মায়ের রেকর্ডিং শুনে বেশ কয়েক বার বলেছিল ” আমি ওখানে থাকলে গুলি করে মারতাম” । বাবা কে রেকর্ডিং করে পাঠানোর ফলে তার মায়ের সাথে বাবার ফোনে অনেক ঝগড়াও হয়েছিল এবং ৩ তারিখে বাবা কে অভিযোগ করার কারনে তার মা তাকে সারাদিন খেতে দেয়নি। সেই সিন তাকে না খেয়েই শুতে হয়েছিল এবং সে খিদের জ্বালায় বদলা নেবে বলে ঠিক করে ছিল, কিন্তু এত তাড়াতাড়ি সে এটা করবে ভাবেনি। বাবা সেনা বাহিনী তে কাজ করার সুবাদে বাড়িতে তার বাবার একটি লাইসেন্স পিস্তল ছিল এবং বেশ কয়েক বার সে তার বাবার কাছেই পিস্তল চালানো শিখেছিল। আর ৪ঠা জুন রাতে সেই পিস্তল টি দিয়েই সে তার মাকে পয়েন্ট ব্লাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে মাথায়। গুলি মাথার একদিক থেকে ঢুকে অন্যদিকে বেরিয়ে যায় । তার মা তৎক্ষণাৎ বিছানায় উপুড় হয়ে পড়ে যায় এবং রক্ত স্রোত বইতে থাকে কিন্তু তার পরেও তার মা পরের দিন অবধি প্রায় ৮ ঘণ্টা জীবিত ছিল। সে বারং বার তার মায়ের কাছে গিয়ে হাতের পালস দেখেছে আবার কখনো নাকের কাছে হাত নিয়ে পরিক্ষা করে দেখেছিল স্বাস চলছে কিনা । একটি গুলি তে তার মাতের তৎক্ষণাৎ মৃত্যু না হবার পর সে ভেবেছিল অ্যারো একটি গুলি করবে কিন্তু যদি শব্দে বাড়ির আশে পাশের লকজনের ঘুম ভেঙ্গে যায় সেই কারনে সে আর সেই সাহস করেনি। পরের দিন সকালে সে তার বন্ধুদের সাথে ক্রিকেট খেলতে গিয়েছিল এবং ফেরার সময় সাথে তার দুই বন্ধু কেও সাথে করে বাড়িতে এনেছিল। তারা তিনজনে ল্যাপটপে সিনেমা দেখে এবং তার দুই বন্ধু তাকে জিজ্ঞাসা করে তার মাকে কেন দেখা যাচ্ছে না। সে অবলিলাক্রমে আদের জানায় সে তার মা কে গুলি করে মেরে ফেলেছে। প্রথম দিকে তার বন্ধুরা সেটা বিশ্বাস না করলেও পড়ে তাদের কে পিস্তল ও তার মায়ের মৃত দেহ দেখায় । সে তার বন্ধুদের প্রস্তাব দেয় তারা যদি তার সাথে তার মায়ের মৃত দেহ গায়েব করতে সাহায্য করে তাহলে সে ৫০০০ টাকা দেবে কিন্তু তার বন্ধুরা ঘাবড়ে গিয়ে তার প্রস্তাবে না করে দেয়। বন্ধুরা না করে দেওয়ায় সে আর বন্ধুদেরও পিস্তল উচিয়ে ধমকি দেয় , যদি তারা এই কথা কাউ কে জানায় তাহলে তাদের কেও গুলি করে মারবে । ফলত বন্ধুরাও এই সব কথা ভয়ে গোপন করে।
পুলিশ এই দুই বন্ধু কেই জেরা করে এর সত্যতা জাচাই করছে। অন্যদিকে মনস্তাত্বিকরা জানিয়েছে – ছেলেটি জুভেনাইল সেন্টারে ভীষণ রকম স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে। অন্য কিশোর অপরাধী দের সে নাটক করে দেখাচ্ছে সে কি ভাবে তার মা কে গুলি করে মেরেছে । তার মধ্যে এই নিয়ে কোন আফসোস নেই বরং সে তার পছন্দের খাবারের দেবার হুকুম করছে । সে জানিয়েছে এই হত্যার যদি সঠিক আইনি পদ্দক্ষেপ নেয়া হয় তাহলে সে খুব বেশি ৩ বছর জেলে থাকবে তার পর সে বেরিয়ে যাবে আর নয়তো তার ফাঁসি হবে যার জন্য সে প্রস্তুত আছে । মনস্তাত্বিকরা তার কাছে যখন জানতে চায় তুমি ৩ বছর পরে বেরিয়ে বড় হয়ে কি হবে ? সে উত্তরে জানিয়েছে – সে একজন বড় নেতা হতে চায় ।
এই সব কিছু দেখে তদন্তকারী দলের মাথায় হাত হবার উপক্রম। এখন তদন্ত চলছে ওই দুই ব্যাক্তি যারা মায়ের সাথে দেখা করতে আসত তাদের নিয়ে এবং ফোনের কল ডিটেলস এর । পুলিশ আশাবাদি খুব তাড়াতাড়ি এই রহস্য উন্মোচিত হবে তবে এখন তারা এই খুন কে PUB-G নিয়ে খুন আর মানতে চাইছেন না ।