কলকাতা, এপ্রিল ২৯, ২০২৩: ওয়েস্ট বেঙ্গল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ জুরিসডিকাল সায়েন্সেস (WBNUJS)-এর কলকাতা ক্যাম্পাসে শনিবার থেকে শুরু হল দু’দিনের “ডব্লিউবিএনইউজেএস-এর ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি মিট ২০২৩”। প্রতি বছর ২৬ এপ্রিল গোটা পৃথিবী জুড়ে উদযাপিত হয় বিশ্ব আইপি দিবস। সেই অনুযায়ী, এই বছরের থিম হল “আইপিআর (IPR)-এর মাধ্যমে নারীদের ক্ষমতার অন্তর্ভুক্তি – পিরামিডের দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীত প্রতীকীতে”। এই অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্যই হল মেধা সম্পত্তি অধিকার বা ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি মিট (আইপিআর) ও বিশেষ ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই)-এর মাধ্যমে নারী ক্ষমতায়নের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ডব্লিউবিএনইউজেএস (WBNUJS)-এর ভাইস চ্যান্সেলর, ড. এন. কে. চক্রবর্তী। এছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক ও দেশের প্রখ্যাত ব্যক্তিত্বরাও এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং নানা বিষয়ে তাঁরা এদিন বক্তব্য রাখেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভাবে স্থান করে নিয়েছিল আইপি ডোমেইন-এর বিষয়টিও।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে প্রথমেই সারা বিশ্ব জুড়ে নারীদের উদ্ভাবন, নির্মাণ এবং মহিলা উদ্যোক্তাদের সাফল্য উদযাপন করা হয় এবং সেখানে আলোচনার মূল বিষয়বস্তুই ছিল আইপি কাজের সকল ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তি ও বৈচিত্র্যকে উন্নীত করার প্রচেষ্টার ওপর বিশেষ নজর দেওয়া।
এই অনুষ্ঠানটি আইপিআর-এর সুবিধা সম্পর্কে সচেতনতা প্রসারের ওপর জোর দেয় এবং ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টির সুরক্ষা ও আর্থিক নগদীকরণের জন্য মহিলাদের উৎসাহিতও করে যাতে তাঁরা এর সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে পারে।
প্রসঙ্গত, বৌদ্ধিক সম্পত্তি অর্থাৎ ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টির সুরক্ষাকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসাবে বিবেচনা করা হয়, কারণ এটি তাঁদের আর্থিক প্রণোদনা পুনরুদ্ধার করতে এবং তাঁদের মূল সৃষ্টির ওপর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ লাভ করতে সাহায্য করে। যে সমস্ত দেশে আইপি সুরক্ষা আইন সঠিকভাবে কার্যকরী, সেই সব দেশে লিঙ্গ সমতার স্থানও ততটাই উল্লেখযোগ্য। আইপি রাইটস-এর যথাযথ ব্যবহার নারীদের উদ্ভাবনী ধারণাকে সামনে আসার সুযোগ দেয় এবং তাঁদের ব্যবসায়ী সত্ত্বাকে আরও বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি, সমাজের সামগ্রিক অগ্রগতি এবং লিঙ্গ সমতাকেও উন্নীত করতে এটি বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে।
এছাড়াও, এই অনুষ্ঠানে একটি মক কোর্ট পরিবেশনা করা হয় যেখানে আলোচনায় উঠে আসে বিদেশি ও ভারতীয় ফ্যাশন ডিজাইনারদের ঐতিহ্যগত সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তি (টিসিই) এবং ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই-এর অনুমোদন ছাড়াই সেসবের যথেচ্ছ ব্যবহার।
একটি প্রদর্শনী ও ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তির মধ্যে দিয়ে শেষ হয় প্রথম দিনের অনুষ্ঠান।
বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের ঐতিহ্যময় সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে এদিন অনুষ্ঠানে যোগ দেয় পুরুলিয়ার মানভূম লোকনৃত্য ও ছৌ-নাচের দল। এছাড়াও প্রদর্শিত হয় পাতা নাচ, পুতুল নাচ, বাউল ও বহুরূপী।
এছাড়াও সেখানে ছিল হুগলির মনোহরা এবং রাবড়ি, হুগলির জনাই-এর বড় বোঁদে, বীরভূমের বিখ্যাত বেগমপুরী শাড়ি, শান্তিনিকেতনি বাটিক এবং আল্পনা, বর্ধমানের কাঠের পুতুল, বাঁকুড়ার মেচা ও শঙ্খের কারুকাজ, সুন্দরবনের খলসি মধু, উত্তর দিনাজপুরের তুলাই পাঞ্জি চাল ও আরও বহু জিনিসের বিশাল সম্ভার।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে, মূলত প্রায় দু’দশক আগের জিআই এক্সটেনশন এবং বহুপাক্ষিক রেজিস্টারের মতো বৌদ্ধিক সম্পত্তির অধিকার সম্পর্কিত অমীমাংসিত সমস্যাগুলির ওপর আলোকপাত করা হবে।
গোটা অনুষ্ঠানটি বিশেষ করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং নারীর ক্ষমতায়নে মেধা সম্পত্তির অধিকারের গুরুত্ব তুলে ধরে।
ডব্লিউবিএনইউজেএস-এর ডিপিআইআইটি আইপিআর চেয়ার ডক্টর পিনাকী ঘোষ এই প্রসঙ্গে জানান, “এই বৈঠক, মেধা সম্পত্তি অধিকারের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নের গুরুত্বের দিকটিতে আলোকপাত করেছে। কার্যকর আইপি সুরক্ষা আইন এবং সচেতনতা প্রচারণা, নারীদের পূর্ণ সম্ভাবনা উপলব্ধি করতে এবং সমাজের অগ্রগতিতে সাহায্য করে।”