পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ ‘’দেখি মুকুটটা তো পড়েই আছে, রাজাই শুধু নেই।‘’ আজ স্বর্ণ যুগের সুরের নায়ক মান্না দের জন্মদিন। মুকুট ফেলে রাজা বিদায় নিয়েছেন ২০১৩ সালে কিন্তু মানুষের মনের সিংহাসনে আজও সেই রাজারই বাস। আজ তার ১০৪ তম জন্মদিন। তার জন্মদিনে তাকে প্রণাম ও অনেক অনেক শ্রদ্ধা।
সঙ্গীতাচার্য্য কৃষ্ণ চন্দ্র দে র ভাতুস্পুত্র প্রবোধ চন্দ্র দে এই তার আসল পরিচয়। কাকার আদরের মানা কোটি কোটি ভারতের কাছে মান্না নামেই পরিচিতি পেল, পেল নিরলস ভালবাসা। তিনি ছিলেন একাধারে গায়ক, নেপথ্য গায়ক, সঙ্গীত পরিচালক, সঙ্গীতজ্ঞ। তিনি ‘ভিন্দি বাজার ঘরানার’ একজন উল্লেখযোগ্য শাস্ত্রীয় কণ্ঠশিল্পী। একজন সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে তিনি ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে পপ মিউজিকের সাথে সংযোজন করার জন্য বিখাত ছিলেন, যা থেকেই হিন্দি সিনেমায় সুবর্ণ যুগের সুচনা হয়েছিল।
৫০ দশক ধরে তিনি বিরাজ করেছেন সুরের আকাশে। এই দীর্ঘ সময়কালে তিনি মোট ৩০৪৭ টি গান রেকর্ড করেছেন। তিনি মুলত বাংলা এবং হিন্দি গানের জন্যই জনপ্রিয় ছিলেন। এছাড়াও ভোজপুরী, পাঞ্জাবী, অসমীয়া, গুজরাতি, মালায়ালম সহ মোট ১৪ টি ভারতীয় ভাষায় গান করেছেন। ৫০-৭০ এর দশক ছিল তার সঙ্গীত ক্যারিয়ার ছিল শিখরচূড়ায়।
সঙ্গীত জীবনের তিনি বহু পুরষ্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তিনি ‘বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন’ এর পক্ষ থেকে বিভিন্ন গানের জন্য ৮ বার সেরা গায়কের সম্মান পেয়েছেন। দেশের বেশ কিছু রাজ্য থেকে তিনি পুরস্কৃত হয়েছেন। ভারত সরকারের থেকে ১৯৭১ সালে ‘পদ্মশ্রী’ এবং ২০০৫ সালে ‘পদ্ম ভূষণ’ উপাধি লাভ করেন। ২০০৭ সালে ‘দাদা সাহেব ফালকে’ পুরষ্কার পান। এছাড়াও বহু জায়গা থেকে চিরজীবন সম্মাননা পেয়েছেন। ২০০৮ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিলিট উপাধি লাভ করেন। ২০১৫ সালে কেমব্রিজ বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে ডিলিট উপাধি পান।
২০০৫ সালে আনন্দ পাবলিশার্স থেকে তার আত্মজীবনী ‘জীবনের জলসাঘরে’ প্রকাশিত হয়। পরে এই বই ইংরেজি ও হিন্দিতে অনুবাদ করা হয় যথাক্রমে ‘Memory comes alive’ এবং ‘Yaden jee uthi’ নামে। ২০০৮ সালে জীবনের জলসাঘরে নামে তাকে নিয়ে তৈরি হয়েছে একটি তথ্যচিত্র।
এ হেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী মানুষকে ভুলে যাওয়া কখনই সম্ভব নয়। যতদিন গান থাকবে আর যতদিন মানুষের মনে গানের প্রতি ভালোবাসা থাকবে ততদিন বেঁচে থাকবেন মান্না দে। ততদিন তিনি অমর হয়ে থাকবেন