শোভন মল্লিক, কলকাতা: এই মুহূর্তে চলচ্চিত্র জগতে আসছে পরপর বিভিন্ন বিতর্কিত ছবি । “দ্য কাশ্মীর ফাইলস”, “দ্য কেরালা স্টোরির” পর এবার আসছে সনোজ মিশ্রের পরিচালনায় “দ্য ডায়েরি অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল”। এই ছবির ২ মিনিট ১২ সেকেন্ডের ট্রেলার আসা মাত্রই রাজ্যের হাওয়া গরম হতে শুরু করেছে। যেখানে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গে “দ্য কেরালা স্টোরি” বন্ধের ঘোষণা করেন। সেখানে এই ছবি নিয়ে যে মুখ্যমন্ত্রী স্বরব হবেন তা নতুন করে বলবার কোনো জায়গাই থাকে না।
এই ছবি ট্রেইলারে ফুটে উঠেছে রাজ্যের অরাজকতা । বাংলায় হিন্দুদের দুরবস্থা এবং মুসলিম শ্রেণীকে কদর করবার চিত্র ফুটে উঠেছে সেখানে। হানাহানি, দাঙ্গা,খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি চলছে পশ্চিমবঙ্গে। এমন বিভিন্ন দৃশ্য ও সংলাপের মাধ্যমেই রাজ্যের দুরবস্থা ফুটে উঠেছে সেই ২ মিনিট ১২ সেকেন্ডের ট্রেইলারে। এমনকি সেই ট্রেইলারে কাশ্মীরের সঙ্গেও তুলনা টানা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের । ছবির ট্রেলার মুক্তি পেতেই পরিচালকের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগ করা হয়।
সনোজ মিশ্রকে জিজ্ঞাসাবাদ করবার জন্য কলকাতা পুলিশ তাকে ৩০ শে মে সিটি পুলিশ স্টেশনে ডেকেছেন। এই মামলার তদন্তের জন্যই নাকি তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজিরা দেওয়ার কথা বলেছেন কলকাতা পুলিশ।কিন্তু পরিচালক জানাচ্ছে, এটা তাকে হেনস্থা করা ছাড়া আর কিছুই না। এই সিনেমা তৈরি করাই যদি তার দোষের হয় । তবে তিনি সেই দোষের ভাগীদার হতে ডরায় না। সঙ্গে তিনি এও বলেন, তিনি আইনের উপর সর্বদা ভরসা রেখেছেন এবং আজও রাখছেন। আইন সর্বদা সত্যের পথে ছিল আর সত্যের পথেই থাকবে।
তিনি আরও বলেন, তিনি সর্বদা সত্যকে সকলের সামনে নিয়ে আসতে চান, এবং আজও তিনি সেটাই চাইছেন। অন্যান্য পরিচালকদের মতো পৃষ্ঠপোষকতা করে । তিনি তুষ্ট রাখতে পারবেন না কাউকে। এই সিনেমা তৈরির জন্য মমতা ব্যানার্জির চোখে বড় মারাত্মক অপরাধ করছেন তিনি । সেই কারণে জেলে তাকে আটক করতেই পারে রাজ্য সরকার । কিন্তু সেটা হবে শুধুমাত্র মুখ বন্ধ করাবার প্রচেষ্টা । তিনি এটাও মনে করেন, জেলে গেলে হয়তো সে আর ফিরবে না। তাকে হয়তো সেখানেই শেষ করে দেওয়া হতে পারে । কিন্তু তিনি তার শিল্পকেই অস্ত্র করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চান। পশ্চিমবঙ্গের এহেন বিশৃঙ্খলতা ,অরাজকতা প্রতিটা মানুষের চোখের সামনে তুলে ধরতে চান । কিভাবে একদল সম্প্রদায়কে তুষ্ট রেখে । অসৎ পথ নির্বাচন করে, ভোট পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে । সেটাও ফুটে উঠবে তার “দ্য ডায়েরি অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল” সিনেমাতে।
তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কে আর্জি জানিয়েছেন এদিকে লক্ষ্য দেওয়ার জন্য। শিল্পকে দমিয়ে কিভাবে এই রাজ্যে রাজনীতিকে উপরে তোলা হচ্ছে । সেটাই নজর দিয়ে বিচার করা হোক। সত্যিটা চেপে রাখবার চেষ্টা করা হচ্ছে বিভিন্নভাবে। কিন্তু যাই হয়ে যাক, তিনি ন্যায়ের পথে থেকে সত্যিটা সকলের সামনে আনবেন। সেটাই এখন তার মূল বক্তব্য।
কলকাতা পুলিশ তথা মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, সিনেমার মাধ্যমে বাংলার ইমেজ নষ্টের চেষ্টা করা হচ্ছে। বিজেপির উস্কানিতেই তৈরি হচ্ছে এই সিনেমা। এটা লোকসভার আগে বিরোধী পক্ষের এক বৃহৎ চক্রান্ত । সেই উত্তরে সনোজ মিশ্র জানিয়েছেন, বাংলার কোনো ইমেজ আদেও রয়েছে? যেটা আবার নতুন করে নষ্ট করা যেতে পারে। সনোজ জানিয়েছেন, ছবির ৬০শতাংশ শুটিং হয়ে গিয়েছে। আর চল্লিশ শতাংশ বাকি । সেটাও খুব শীঘ্রই তিনি শেষ করে দেবেন। আগামী মাসে সেন্সর বোর্ডের কাছে পাঠানো হবে সিনেমাটিকে। আগস্টেই এই সিনেমা যাতে রিলিজ করে সেটারই চেষ্টা করবেন তিনি । কিন্তু তাকে সামনে যে বিপুল বাধার সম্মুখীন হতে হবে। সেটা সম্পর্কে ধারণা রেখেই লড়াইয়ে নেমেছেন তিনি।