বাঙালিদের কাছে রাখি মানে শুধু ভাই-বোনের দিন নয়। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের রক্তক্ষয়ী ইতিহাসের আড়ালে রয়েছে রাখী বন্ধনের মত হিন্দু-মুসলমান সম্পর্কে এক পবিত্র বন্ধনের যোগ। ১৯০৫-এর ১৯ জুলাই। তখন ব্রিটিশ অধিকৃত ভারতের ভাইসরয় লর্ড কার্জন। আচমকাই বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব পেশ করলেন। তখন বাংলা মানে বাংলা, বিহার, আসাম, শ্রীহট্ট সবটা এক যোগে। অবিভক্ত বাংলাকে শাসন করা নাকি সমস্যা হয়ে দাড়াচ্ছিল। তাই প্রশাসনিক কারণে ইংরেজরা ঠিক করেন ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত করবেন বাংলা। প্রস্তাব ওঠে, হিন্দু জনসংখ্যার আধিক্যযুক্ত অঞ্চল আলাদা করা হবে মুসলিম অধ্যুষিত বাংলা থেকে।
একসময়ে ব্রিটিশ বিরোধী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের আঁতুড়ঘর হয়ে উঠছিল বাংলা। ইংরেজদের এই বাংলাকে ভেঙে দেওয়ার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল আন্দোলনের গতি মন্থর করা। অতএব পাশ হয় বঙ্গ ভঙ্গের প্রস্তাব। ১৬ আগস্ট। কাকতালীয় ভাবে সেদিনই ছিল রাখি পূর্ণিমা। এদিন হিন্দু ঘরের মেয়েরা তাঁদের ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় হাতে রাখি পরান। রবীন্দ্রনাথের মাথায় এল অন্যরকম এক রাখি বন্ধনের কথা। এদিন রাখি ভাই-বোনের নয়, রাখিবন্ধন হয়ে উঠল হিন্দু-মুসলিমের সম্প্রীতি উৎসব।
এক ধর্মের মানুষ ভালবেসে রাখি পরিয়ে দিচ্ছেন অন্য ধর্মের মানুষের হাতে। এটাই ছিল সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদ। দীর্ঘ ৬ বছর পর ১৯১১ সালে ভাইসরয় তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ রদ করলেন বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব। তিথি মেনে রাখিপূর্ণিমা এলেও, বাঙালির কাছে এদিনের আবেগ অনেক বেশি।