
এপ্রিলের ২২ তারিখে জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওর বৈসারণ উপত্যকায় পর্যটকদের উপর হওয়া বর্বর সন্ত্রাসবাদী হামলাটি ফের একবার মনে করিয়ে দিল, কাশ্মীর উপত্যকা এখনও কতটা অস্থির এবং অনিরাপদ। এই হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ২৬ জন—তাদের মধ্যে ছিলেন সাধারণ পর্যটক, স্থানীয় বাসিন্দা, এমনকি দুজন বিদেশিও। চরমপন্থীরা শুধু হামলা চালিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তারা পরিচয় যাচাই করে এবং ধর্মীয় প্রশ্ন করে বেছে বেছে মানুষ খুন করেছে। এমন নিষ্ঠুরতা কাশ্মীরে নতুন নয়, কিন্তু এর পুনরাবৃত্তি এক গভীর প্রশ্ন তোলে—এই দীর্ঘ ইতিহাস থেকে কি আমরা কিছুই শিখিনি?

সরকারি তথ্য বলছে, ২০১৪ থেকে এপ্রিল ২০২৫ পর্যন্ত কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী হামলার সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩,০০০-এরও বেশি। ২০১8 সালে সর্বোচ্চ ৬১৪টি হামলা নথিভুক্ত হয়েছিল। ২০১৯-এ ৫৯৪টি, ২০১৭-এ ৩৪২টি। যদিও সাম্প্রতিক বছরে সংখ্যা কিছুটা কমেছে, তবু এটি কোনও শান্তির চিত্র নয়, বরং সন্ত্রাসের ধরনে পরিবর্তনের ইঙ্গিত। আগে যেখানে বড় সেনাঘাঁটি কিংবা নিরাপত্তা বাহিনী লক্ষ্য থাকত, সেখানে এখন লক্ষ্য নিরীহ বেসামরিক মানুষ—পর্যটক, সংখ্যালঘু, অভিবাসী শিক্ষক বা শ্রমিক।

পহেলগাঁওর সাম্প্রতিক হামলায় যেমন দেখা গেছে, জঙ্গিরা আধাসামরিক পোশাক পরে এসেছিল, অস্ত্রধারী ছিল, এবং তারা এমন এক পর্যটনস্থানে হামলা চালিয়েছে যেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক ছিল না, ফলে দ্রুত সাহায্যের অনুরোধও পৌঁছায়নি। এটা প্রমাণ করে যে হামলার আগে যথেষ্ট পর্যবেক্ষণ এবং পরিকল্পনা ছিল। প্রশ্ন উঠছে—এই পরিকল্পনা গোয়েন্দা নজরদারির বাইরে কীভাবে রয়ে গেল?
ভারতের কাশ্মীর নীতিতে দৃঢ় অবস্থান থাকলেও, প্রশ্ন উঠছে গোয়েন্দা ও মাটির নিরাপত্তার সমন্বয় নিয়ে। প্রতিবারই পরে প্রতিক্রিয়া, আগে প্রতিরোধ নয় – ২০০২ সালে কলকাতার আমেরিকান সেন্টারে যখন হামলা হয়, তখন সেই ঘটনার পর পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলি চূড়ান্ত নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছিল। আজও সেই ভবনের সামনে চব্বিশ ঘণ্টা সশস্ত্র পাহারা, সিসিটিভি, ব্যারিকেড, প্রবেশে নিয়মকানুন—সবকিছুই বলছে, সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়া হয়েছিল। অথচ কাশ্মীরের মতো দীর্ঘকালীন হাই-রিস্ক এলাকায়, যেখানে প্রতি বছরই বড় হামলার ঘটনা ঘটছে, সেখানে পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে এই রকম সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বলয় তৈরি হয়নি কেন?প্রতি বছরই দেখা যাচ্ছে জঙ্গিরা পাক সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকছে। ২০১৬-র পাঠানকোট বা ২০২৩-এর পুঞ্চ হামলা তার উদাহরণ। কিছু হামলায় স্থানীয় বাসিন্দাদের যোগসূত্র সামনে আসছে।

কাশ্মীরের সীমান্ত অঞ্চল দিয়ে জঙ্গি অনুপ্রবেশ দীর্ঘদিনের সমস্যা। ২০১৬ সালের উরি হামলা থেকে শুরু করে ২০১৯-এর পুলওয়ামা আত্মঘাতী বিস্ফোরণ, প্রতিবারই ঘটনার পরে ভারত প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে—সার্জিকাল স্ট্রাইক, এয়ার স্ট্রাইক, কিংবা জঙ্গিদের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া। কিন্তু এই প্রতিক্রিয়ামূলক কৌশল সাময়িক হয়তো ফল দিচ্ছে, তবু মূল সমস্যা থেকে যাচ্ছে অপরিবর্তিত—জঙ্গি কার্যকলাপের জন্য অনুকূল পরিবেশ, স্থানীয় স্তরে কিছু সহযোগী, এবং সীমান্তে অনুপ্রবেশের যথেষ্ট সুযোগ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন জঙ্গি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ, যেমন এইবার ‘কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স’ নামক একটি দল দায় স্বীকার করেছে, যদিও প্রমাণ বলছে এর সঙ্গে পাক-সমর্থিত লস্কর-ই-তৈয়বার যোগসূত্র স্পষ্ট।ভারতের কাশ্মীর নীতিতে দৃঢ় অবস্থান থাকলেও, প্রশ্ন উঠছে গোয়েন্দা ও মাটির নিরাপত্তার সমন্বয় নিয়ে। প্রতিবারই পরে প্রতিক্রিয়া, আগে প্রতিরোধ নয় – ২০০২ সালে কলকাতার আমেরিকান সেন্টারে যখন হামলা হয়, তখন সেই ঘটনার পর পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলি চূড়ান্ত নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছিল। আজও সেই ভবনের সামনে চব্বিশ ঘণ্টা সশস্ত্র পাহারা, সিসিটিভি, ব্যারিকেড, প্রবেশে নিয়মকানুন—সবকিছুই বলছে, সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়া হয়েছিল। অথচ কাশ্মীরের মতো দীর্ঘকালীন হাই-রিস্ক এলাকায়, যেখানে প্রতি বছরই বড় হামলার ঘটনা ঘটছে, সেখানে পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে এই রকম সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বলয় তৈরি হয়নি কেন?প্রতি বছরই দেখা যাচ্ছে জঙ্গিরা পাক সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকছে। ২০১৬-র পাঠানকোট বা ২০২৩-এর পুঞ্চ হামলা তার উদাহরণ। কিছু হামলায় স্থানীয় বাসিন্দাদের যোগসূত্র সামনে আসছে।

কাশ্মীরের সীমান্ত অঞ্চল দিয়ে জঙ্গি অনুপ্রবেশ দীর্ঘদিনের সমস্যা। ২০১৬ সালের উরি হামলা থেকে শুরু করে ২০১৯-এর পুলওয়ামা আত্মঘাতী বিস্ফোরণ, প্রতিবারই ঘটনার পরে ভারত প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে—সার্জিকাল স্ট্রাইক, এয়ার স্ট্রাইক, কিংবা জঙ্গিদের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া। কিন্তু এই প্রতিক্রিয়ামূলক কৌশল সাময়িক হয়তো ফল দিচ্ছে, তবু মূল সমস্যা থেকে যাচ্ছে অপরিবর্তিত—জঙ্গি কার্যকলাপের জন্য অনুকূল পরিবেশ, স্থানীয় স্তরে কিছু সহযোগী, এবং সীমান্তে অনুপ্রবেশের যথেষ্ট সুযোগ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন জঙ্গি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ, যেমন এইবার ‘কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স’ নামক একটি দল দায় স্বীকার করেছে, যদিও প্রমাণ বলছে এর সঙ্গে পাক-সমর্থিত লস্কর-ই-তৈয়বার যোগসূত্র স্পষ্ট।
এই প্রেক্ষাপটে ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নীতি ও কৌশলকে নতুন করে ভাবা প্রয়োজন। কেবল বাহিনীর উপস্থিতি বা প্রতিক্রিয়া দিয়ে দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। প্রয়োজন গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের আধুনিকীকরণ, স্থানীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন, পর্যটন অঞ্চলগুলিতে বিশেষ নিরাপত্তা বলয়, এবং সর্বোপরি—রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সাংবিধানিক কৌশলের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা।

পহেলগাঁও হামলার পর দেশজুড়ে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “এই বর্বরতা যারা ঘটিয়েছে, তারা রেহাই পাবে না। ভারত তাদের খুঁজে বার করবে এবং এমন শাস্তি দেবে যা তাদের কল্পনার বাইরে।” এদিকে পাকিস্তান হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং পাল্টা কূটনৈতিক ব্যবস্থা নিয়েছে, যার ফলে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা ফের চরমে উঠেছে।
প্রতিটি রক্তাক্ত দিন, প্রতিটি শহিদের মৃত্যু প্রমাণ করে যে শুধুমাত্র বাহ্যিক প্রতিক্রিয়া যথেষ্ট নয়। সন্ত্রাসবাদ যখন ক্রমাগত রূপ বদলাচ্ছে, তখন নিরাপত্তা কাঠামোকেও বদলাতে হবে। না হলে ২০২৫-এ দাঁড়িয়েও ২০০২-এর পুনরাবৃত্তি হতে থাকবে। আর প্রশ্ন জাগবে—এই ত্রুটির দায়ভার কে নেবে?কাশ্মীরের রক্তপাত থামাতে হলে, চাই গোটা ব্যবস্থার সাহসী এবং কৌশলী পুনর্মূল্যায়ন। ভারতের কাছে সময় এসেছে শুধুমাত্র প্রতিশোধ নয়, প্রতিরোধকেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার। যদি তা না হয় তবে পরবর্তী হামলা আবারও কোনও নিরীহের জীবনের বিনিময়ে আমাদের চোখ খুলবে—আর ততদিনে হয়তো অনেকটাই দেরি হয়ে যাবে।