পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ আষাঢ় মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়া থেকে দশমী তিথির মধ্যে বিপত্তারিণী পুজো আয়োজিত হয় বাংলায়। অর্থাৎ সোজা রথ থেকে উল্টো রথের মধ্যবর্তী ৯ দিনের মধ্যে শনিবার ও মঙ্গলবার বিপত্তারিণী পুজো হয়। আজ মঙ্গলবার বিপত্তারিণী পুজো আয়োজিত হচ্ছে বাংলার ঘরে ঘরে। বিপত্তারিণী পুজো দুই দিন পালিত হলেও এই বছর মুলত একদিনই পালিত হচ্ছে এই পুজো। শনিবার অম্বাবুচির মধ্যে পড়ায় সেই দিন বেশিরভাগ মানুষই পুজো থেকে বিরত থেকেছেন।
বিপত্তারিণী পুজো মুলত গ্রামবাংলার মহিলাদের ব্রত স্বরূপ। ভক্তরা মনে করেন বিপত্তারিণী দেবীর ব্রত পালন করলে সকল বিপদ-আপদ দূর হয়ে যায়। দেবী দুর্গা এবং কালীর অন্য একটি রূপ হচ্ছে এই দেবী বিপত্তারিণী। দেবী কোথাও রক্তবর্ণা আবার কোথাও কৃষ্ণবর্ণা। তবে অনেকের মতে গ্রাম বাংলার লৌকিক দেবী এই বিপত্তারিণী। বাংলার অনেক দেবদেবী তাদের পূজা পদ্ধতিও ভিন্ন। তবে বিপত্তারিণী পুজোর নিয়মকানুন অন্য সমস্ত পুজোর থেকে একটু আলাদা। প্রতিটি নিয়ম কানুন ঘিরে আছে ১৩ সংখ্যা।
১৩ রকম ফল এবং ১৩ রকম ফুল দিয়ে দেবীর পুজো করতে হয়। বিপত্তারিণী দেবীর আশীর্বাদ স্বরূপ একটি লাল ধাগা হাতে বাধে সকলে। এই ধাগায় ১৩ টি সুতো পরপর সাজিয়ে ১৩ টি গিট দিয়ে ১৩ টি দূর্বা বাঁধা হয়। ধাগা হাতে বাঁধার ৩ দিন পর সেই দূর্বা জলে ফেলে দিয়ে ধাগাটি পড়ে থাকতে হয়। যারা এই ব্রত পালন করেন তাদের পুজোর শেষ ১৩ ফল মুখে দিয়ে উপোস ভঙ্গ করতে হয়। তারপর একাসনে বসে ১৩ টি লুচি খেতে হয়। সারাদিন আর কিছু খেতে পারবেন না তারা।
কিন্তু সব কটি নিয়মেই ১৩ সংখ্যা কেন? এর কোন সঠিক ব্যাখ্যা কোথাও পাওয়া যায় না। গ্রাম বাংলার আর পাঁচটা পুজোর মত লোকাচার হিসেবেই এই নিয়ম চলে আসছে বছরের পর বছর। বাংলায় কুসংস্কারের শেষ নেই। আগের দিনের অনেক সংস্কারের মধ্যে একটা ছিল ‘অশুভ তেরো সংখ্যা’। ১৩ সংখ্যাটিকে অশুভ, অমঙ্গল বলে মনে করা হত একসময়। তাই অনেকের মতে দেবী বিপত্তারিণী যেহেতু অশুভকে দূর করে শুভের সূচনা করেন, তাই তার পুজোতে সেই অশুভ সংখ্যা দিয়েই শুভের সূচনা করা হয়। অমঙ্গলকে দূর করতে হলে তো অমঙ্গলের সংখ্যাকেই প্রয়োজন। তাই সমস্ত বিপদ সমস্ত অশুভ সমস্ত অমঙ্গলকে দূর করতে দেবী বিপত্তারিণী পূজিতা হয়ে আসছেন বাংলার ঘরে ঘরে।