পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ মাতৃ দিবস মানে তো মায়ের দিন। মায়ের আবার আলাদা করে দিন হয় নাকি? আচ্ছা ভাবুন তো আপনি বাড়িতে আছেন অথচ মা বাড়িতে নেই! কি ভাবতে কষ্ট হচ্ছে তো? তাহলে ভাবুন যে মানুষটাকে ছাড়া একটা দিন থাকার কথা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে যে সব দিনের মাসের বছরের তার জন্য ধার্য কিনা একটা দিন? গালভরা নাম ‘মাতৃ দিবস’। আসলে রোজ মাতৃ দিবস, সব দিন মায়ের দিন।
মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার পালিত হয় মাতৃ দিবস। ১৯০৭ সালের ১২ই মে ফিলাডেলফিয়ার বাসিন্দা অ্যানা জারভিস তার মৃত মাকে সম্মান জানানোর জন্য ভার্জিনিয়ার একটি চার্চে মাতৃ দিবস পালন করেন। তার ৫ বছর পর থেকে বিভিন্ন দেশ মাতৃ দিবস পালন করা শুরু করে। বর্তমান যুগে মাতৃ দিবস পালন সামাজিক মাধ্যমে মায়ের ছবি পোস্ট করে ভালো ভালো কথা লেখাতেই সীমাবদ্ধ। তার থেকে খুব বেশি কিছু হলে মায়ের জন্য একটা উপহার। ব্যাস! হয়ে গেল? যে মানুষটা জীবনের সব মুহূর্তগুলোকে স্পেশাল করে তুলল তাকে সম্মান জানানোর জন্য শুধু একটা উপহার আর সামাজিক মাধ্যমের একটা ফটো আপলোড।
আচ্ছা আজ থেকে কিছু বছর আগে যখন ইন্টারনেট এবং সামাজিক মাধ্যম মুঠোবন্দী হয়নি তখন জানতেন কবে মাতৃ দিবস? না জানা যেত বলিউডের অনেক সিনেমায় দেখা গেছে বাচ্চাদের স্কুলে মাতৃ দিবস পালন হয়। তখন মাকে ভালোবাসতেন না? আজকে সামাজিক মাধ্যমে একটা ফটো পোস্ট করলেই মাকে ভালোবাসা সম্মান জানানো হয়?
আজ সারাদিন ফেসবুক খুললেই দেখা যাবে সবাই তার মায়ের সাথে ফটো পোস্ট করছে। এখন তো আবার নতুন ট্রেন্ড হয়েছে প্রেমিক-প্রেমিকা বা স্বামী-স্ত্রী র মায়ের ফটোও পোস্ট করছে। এটার অবশ্য একটা ইতিবাচক দিক রয়েছে নিজের পাশাপাশি শাশুড়িকেও মায়ের জায়গায় বসানো। কিন্তু সবাই যদি মা আর শাশুড়িকে এত ভালোবাসে তাহলে এত বৃদ্ধাশ্রমের রমরমা কেন? রাস্তায় রাস্তায় এত বয়স্ক মানুষকে বিভিন্ন কর্মঠ পেশায় দেখা যায় কেন?
সেদিন এক মহিলা হকারকে ট্রেনে দেখলাম বয়স ৮০ পাড় করে গেছে। ছেলে ভালো চাকরি করে আলাদা থাকে বলে এই বয়সে অসমর্থ হাতে তিনি ট্রেনে ঘুরে আঁচার বিক্রি করছেন। ব্লুন তো এইসব মায়ের জন্য মাতৃ দিবস উৎযাপন কে করবে? বৃদ্ধাশ্রমে থাকা মানুষগুলির ছেলে মেয়েরাও কি সামাজিক মাধ্যমে ফটো পোস্ট করছে?
একদিন এই মাতৃ দিবস পালন না করে রোজ মাকে ভালবাসলে মাতৃ দিবসের দরকার হবে না বোধহয়। দিনের শেষে বাড়ি ফিরলে মা হাতের সামনে সবটা এগিয়ে দেয়। চাকুরীজীবী মায়েরাও সারাদিন খাটনি করে বাড়ি ফিরেও বাড়ীর সবার সব দরকার তিনিই মেটান। চাকুরীজীবী মায়েরা সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য ‘ম্যাটারনিটি লিভ’ পায় আর গৃহবধূ মায়েরা তাদের জন্য কোন ‘লিভ’ নেই। তারপর সন্তান জন্ম দেওয়া তো হল, তারপর? সারাজীবন তাদের ‘ম্যাটারনাল রেস্পন্সিবিলিটি’ সেটার দাম শুধু এক দিনের একটা উপহার? কিন্তু এই টুকু একটা উপহারেই তারা খুশি কেন বলুন তো? কারণ মায়ের কখনও মাতৃত্বের উপহার দাবী করেননা। কিন্তু আমাদের তো তাদের প্রতি একটা দায়িত্ব থেকেই যায় ভালোবাসার দায়িত্ব। এই মাতৃ দিবসে সামাজিক মাধ্যমে ফটো পোস্ট না করে একদিন মাকে রান্নাঘর থেকে ছুটি দিয়ে দেখুন তো, তারা কতটা খুশি হয়! যদিও মুখে তারা বলবে “রান্নাঘর কেন নোংরা করলি বা এত পয়সা কেন খরচা করলি?” মায়ের জন্য কিছু করতে হলে বেশি কিছু লাগে না সারাদিন পর বাড়ি ফিরে মাকে ১০ মিনিট সময় দিন রোজ তাতে সে যা খুশি হবে আপনার লক্ষ টাকার উপহারে সেই খুশি হবে না। তাই একদিন নয় সব দিন মাকে ভালোবাসুন সবদিন মাকে সম্মান করুন। শুভ মাতৃ দিবসের শুভেচ্ছা সকল মাকে।