দেশের ২৮ টি রাজ্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ ভারতীয় ইতিহাসের পাতায় সংস্কৃতি ও সর্বোধর্ম সমন্বয়ের পীঠস্থান হিসাবেই পরিচিত। যেখানে আদি অনন্তকাল ধরে সব ধার্মিক অনুষ্ঠানেই জাতি ধর্ম নির্বিশেষে পশ্চিমবঙ্গ বাসী সামিল হন ও আনন্দে মেতে ওঠেন। যা সহজেই দেখা যায় বড় দিনে অর্থাৎ ২৫শে ডিসেম্বর প্রভু যীশুর আবির্ভাব দিবসে, যখন আমরা সবাই শহরের বিভিন্ন চার্চ এ জমায়েত হই। আবার রোজার মাসে সারাদিন উপবাস থাকার পরে সূর্যাস্তের পর একসাথে সবাই ইফতারে মিলিত হই অন্যদিকে বাংলার সব থেকে বড় উৎসব দূর্গা পুজোতেও জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাই আনন্দে মেতে উঠি।। কিন্তু এতো কিছুর পরেও রাজ্যের প্রথম নাগরিক হিসাবে অভিসিক্ত কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের পুর পৌর মন্ত্রী ফিরাদ হাকিম এক জনসভায় বললেন “যারা ইসলাম ধর্মনিয়ে জন্মগ্রহণ করেননি তারা নাকি দুর্ভাগ্য নিয়ে জন্মগ্রহণ করছেন” ভাইরাল ভিডিও তে সেরকম তাই দেখা যাচ্ছে।।
মাননীয় পুর মন্ত্রী ফিরাদ ববি হাকিম, দক্ষিণ কলকাতার চেতলার বাসিন্দা।। ছোটবেলা থেকেই সেখানে তার বেড়ে ওঠা এবং রাজনৈতিক জীবনের উত্থান।। চেতলা অঞ্চল ইসলাম ধর্মালম্বী মানুষের তুলনায় অন্য ধর্মালম্বী মানুষের সংখ্যা অনেক বেশী এবং তারা সকলেই ফিরাদ ববি হাকিম কে অত্যন্ত পছন্দ করেন।। চেতলা অঞ্চলে তিনি আবাল বৃদ্ধ বনিতার কাছে ববিদা হিসাবেই পরিচিত। এমনকি স্বয়ং ফিরাদ ববি হাকিম তার বাড়ির থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্ববে “চেতলা অগ্রণী” নামে পরিচিত একটি ক্লাবে বেশ ঘটা করে দূর্গা পুজো করেন যার বাজেট নেহাত কম থাকে না।। প্রতিবছর এই পুজোর প্রতিমার চক্ষুদান করেন স্বয়ং মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় নিজে। এবছরও সেই পুজোর আয়োজন হচ্ছে।। তাহলে এই আয়োজন কি মাননীয় মেয়র ফিরাদ ববি হাকিমের কাছে দুর্ভাগ্যজনক???
মাননীয় মেয়র, রাজ্যের প্রথম নাগরিক ফিরাদ ববি হাকিম, তিনি যে আসনে এখন রয়েছেন তাতে সমর্থন যারা করছেন (অর্থাৎ নাগরিকরা) ভোট দিয়ে, তারা বেশিরভাগই ইসলাম ধর্মের বাইরের, তাহলে তারা কি ফিরাদ ববি হাকিম কে সমর্থন করে তাদের দুর্ভাগ্যর পরিচয় দিয়েছেন??
মাননীয় মেয়র, রাজ্যের পুর মন্ত্রী ফিরাদ ববি হাকিম যে আসনে রয়েছেন সেই আসনে একই দায়িত্বে অতীতে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, ডাঃ বিধান চন্দ্র রায় থেকে শুরু করে বহু বিখ্যাত মানুষ অভিসিক্ত ছিলেন যারা কেউই ইসলাম ধর্মালম্বী ছিলেননা।। তাহলে কি রাজ্যের পুর প্রধান মাননীয় মেয়র নিজের পদের ইতিহাস জানেন না?? এর আগেও অতীতে মাননীয় মেয়র ফিরাদ হাকিম কলকাতার একটি অঞ্চল কে “মিনি পাকিস্তান” বলে দেশের শত্রু রাষ্ট্রের সাথে তুলনা করে বিতর্কে এসেছিলেন।। তারপরেও আবার এই বেফাঁস মন্তব্য।
ভাইরাল হওয়া ভিডিও টির সত্যতা আমরা দ্যা ইন্ডিয়ান ক্রনিকেলস যাচাই করিনি তবে আমরা সর্বদা আশাবাদী আমাদের রাজ্যের মেয়র বা পুর প্রধান তার ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ্যে এই ভাবে ঘোষণা করে অন্য ধর্মালম্বী মানুষদের মানসিক আঘাত করবেন না এবং একই সাথে রাজ্যের সকল ধর্মালম্বী নাগরিকদের নিয়ে রাজ্যের তথা কলকাতার সংকৃতি ও সর্বোধর্ম সমন্বয়ের ঐতিহ্য বজায় রাখবেন।।