পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শক্তিশালী একজন লেখক।তার আসল নাম প্রবোধ চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ তার ১১৫ তম জন্মদিনে দ্য ইন্ডিয়ান ক্রনিকলসের পক্ষ থেকে তাকে জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য। তার জীবনকাল ছিল খুবই সীমিত। তিনি মাত্র ৪৮ বছর বেঁচে ছিলেন। তার দীর্ঘ ২৮ বছরের সাহিত্য জীবনে তিনি ৩৮ টি উপন্যাস, ২০৬ টি ছোটগল্প এবং একটি করে কবিতা, নাটক এবং প্রবন্ধের বই লিখেছেন। বাংলা সাহিত্য তাকে ছাড়া অসম্পূর্ণ।
১৯৩৫ সালে মাত্র ২১ বছর বয়েসে তিনি তার প্রথম উপন্যাস ‘দিনরাত্রির কাব্য’ লেখেন। ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ (১৯৩৬), ‘পদ্মা নদীর মাঝি’(১৯৩৬), ‘শহরতলি’(১৯৪০,১৯৪১), ‘চতুস্কণ’(১৯৪২), ‘চিহ্ন’(১৯৪২), ‘হলুদ নদী সবুজ বন’(১৯৫৬) তার বিখ্যাত উপন্যাস গুলির মধ্যে অন্যতম। তিনি ১৬ টি ছোটগল্পের বই লিখেছেন। তার বিখ্যাত ছোটগল্প গুলি হল ‘শৈলজা শিলা’, ‘প্রাগৈতিহাসিক’, ‘সরীসৃপ’ ‘আত্মহত্যার অধিকার’, ‘আজ কাল পরশুর গল্প’, ‘হলুদপোড়া’, ‘যাত্রী’, ‘উপায়’ ইত্যাদি।
তার উপন্যাস নিয়ে বেশ কিছু চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে। তার বিখ্যাত উপন্যাস ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ নিয়ে পাকিস্তানে ১৯৫৯ সালে তৈরি হয় পাকিস্তানি চলচ্চিত্র ‘The Day Shall Dawn’। ১৯৭০ সালে তার ‘দিবারাত্রির কাব্য’ উপন্যাস নিয়ে তৈরি হয়েছে চলচ্চিত্র। দুই বিখ্যাত বাংলা চলচ্চিত্র ‘কলকাতা ৭১’ এবং ‘শিল্পী’ তারই কলমের সৃষ্টি।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এমন একজন লেখক যার লেখা বিভিন্ন ভারতীয় ভাষা, ইংরেজি এবং বেশ কিছু বিদেশী ভাষাতে অনুবাদ করা হয়েছে। তার সবথেকে বিখ্যাত উপন্যাস ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ ৭ রকম ভারতীয় ভাষায়, তিনবার ইংরেজিতে এবং সুইডিশ, হাঙ্গেরিয়ান, চাইনিজ, বুলগেরিয়ান, রাশিয়ান, স্লোভাক, ডাচ, জার্মান, ফ্রেঞ্চ এবং ২০১৪ সালে ইটালিয়ান ভাষায় অনুদিত হয়েছে। ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ ১১ টা ভারতীয় ভাষায়, ইংরেজি চেক ও হাঙ্গেরিয়ান ভাষায় অনুদিত হয়েছে। ‘চিহ্ন’ অসমীয়া, ইংরেজি এবং চেক ভাষায় এবং ‘দর্পণ’ হিন্দিতে অনুবাদ করা হয়েছে।
১৯৫৬ সালের ৩রা ডিসেম্বর তিনি পরলোক গমন করেন। কিন্তু এমন মানুষের মৃত্যু নেই বোধহয়। তিনি বেঁচে আছেন পদ্মা নদীর মাঝিদের মধ্যে। বাংলা সাহিত্যপ্রেমী মানুষের মনে তিনি অমর হয়েই থাকবেন আজীবন।