পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ সালটা ১৮৪৭ কলকাতার জানবাজারের রানী চলেছেন কাশি দর্শনে। প্রস্তুতি তুঙ্গে, লোকজন, দাসদাসী প্রায় শ খানেক বজরা বিশাল আয়োজন। বজরা ভাসল গঙ্গায়, কিন্তু রানীর আর কাশি যাওয়া হলনা। রানী স্বপ্নাদেশ পেলেন মা কালি তাকে বলছেন গঙ্গার ধারে মন্দির বানিয়ে পুজো দিতে।
মায়ের অমান্য করবেন কি করে তিনি? তাই মন্দির নির্মাণ নিয়ে মেতে উঠলেন তিনি। কিন্তু নিচু জাতের একজন মহিলা শুধুমাত্র টাকা আছে বলেই মন্দির প্রতিষ্ঠা করবেন? এ এবার হয় নাকি বাধা দিলেন গোরা হিন্দু সমাজ। কিন্তু এ রানী যে পিছিয়ে যাওয়ার মানুষ নন। ইনি ইতিহাসের সেই রানী যিনি খাড়া হাতে ইংরেজদের বিরুদ্ধে একা দাঁড়িয়েছে, গঙ্গায় বাঁধ দিয়ে ইংরেজদের ব্যবসা বন্ধ করেছে, হ্যাঁ ইনি রানী রাসমনি।
মন্দির প্রতিষ্ঠা করবেন হালিশহরে তার জন্মভূমিতে। কিন্তু বাধা দিলেন হিন্দু সমাজ। হালিশহরে মন্দির নির্মাণ হল না। কিন্তু মন্দির তো তাকে নির্মাণ করতেই হবে। বালি-উত্তরপাড়ায় কেউ জমি দিল না। অবশেষে অনেক খোঁজাখুঁজির পর দক্ষিণেশ্বরে জমি কেনা হল। সেখানেও বাধা দিল হিন্দু সমাজ।
কিন্তু মা মন্দির বানাতে বলেছেন মন্দির আটকায় কার সাধ্য? মন্দির তৈরি হতে সময় লাগল আট বছর। ১৯৫৫ সালের ৩১ শে মে স্নানযাত্রার দিন প্রাণ প্রতিষ্ঠা হল মা ভবতারিণীর। সেখানকার কোন পুরোহিত আসেননি সেই মন্দিরে। পুরোহিত আসল সুদূর কামারপুকুর থেকে রামকুমার চট্টোপাধ্যায়। মন্দিরের সমস্ত ভার একা হাতে তুলে নিলেন।
মা কালি শ্মশানের দেবী, কিছু তান্ত্রিক আর কাপালিক ছাড়া কেউ মা কালির পুজো করত না। রানী রাসমনি নিজে যখন মাকালির পুজো শুরু করেন তাই নিয়ে অনেক অশান্তি ভোগ করতে হয়েছে তাকে। তার স্বামী বাবু রাজচন্দ্র দাস চরম নাস্তিক হলেও তার পাশে দাঁড়িয়েছেন।
সেই শ্মশান বাসিনী দেবীর পুজো শুরু হল গৃহী মানুষের ঘরে। তারপর দক্ষিণেশ্বরে মা ভবতারিণীর মন্দিরে মা ভবতারিণী সকলের মা হয়ে উঠলেন। দীর্ঘ এত বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও আজও দক্ষিণেশ্বরে মা ভবতারিণী সমান সমাদরে পূজিত হয়ে চলেছেন।