পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ সাড়ে চুয়াত্তর শব্দটা আজকের দিনে অতি পরিচিত নাহলেও চিঠির যুগে খুবই পরিচিত একটি শব্দ এটি। প্রেমের চিঠি মানেই সাড়ে চুয়াত্তর চিহ্ন। সাড়ে চুয়াত্তর মানেই গোপনীয়তা। কোন চিঠির ওপর এই চিহ্ন থাকা মানেই সেই চিঠি অন্য কেউ খুলে পড়ার অধিকার নেই।
উত্তম-সুচিত্রা অভিনীত সাড়ে চুয়াত্তর সিনেমাটি নতুন-পুরনো সব প্রজন্মের কাছেই খুব পছন্দের। এই ছবির নাম সাড়ে চুয়াত্তর কেন? কারণ সাড়ে চুয়াত্তর চিহ্ন দেওয়া একটি গোপন চিঠির ওপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে ছবির মূল কাহিনী। গোপন চিঠি হাত বদল হয়ে গিয়েই যত বিপত্তি।
কিন্তু এত শব্দ থাকতে বা এত নম্বর থাকতে সাড়ে চুয়াত্তরই কেন?
না এই সাড়ে চুয়াত্তর এত মজার ঘটনা নয়। এর পিছনে রয়েছে এক করুন কাহিনী এক রক্তাক্ত ইতিহাস। রাজপুতানায় চিতরের যুদ্ধে নির্বিচারে অনেক রাজপুত বীরদের হত্যা করা হয়েছিল। রাজপুতরা বীরত্ব এবং ধর্মাচারণের জন্য বিখ্যাত ছিল। এই মৃত রাজপুত বীরদের সকলের পৈতের মিলিত ওজন ছিল সাড়ে চুয়াত্তর কেজি। সেই থেকেই সাড়ে চুয়াত্তর শব্দটাকে ভয়ানক বলে মনে করা হত। সাড়ে চুয়াত্তরের দিব্যি দেওয়া হত। মানুষের বিশ্বাস সেই দিব্যি ভঙ্গ করলে তেমন ভয়ানক কিছু ঘটবে তাই দিব্যি ভঙ্গ করার সাহস পেত না মানুষ।
সেই থেকেই সাড়ে চুয়াত্তরের দিব্যি দেওয়ার প্রচলন। তারপর থেকে কোন চিঠিতে গোপনীয়তা রক্ষার প্রয়োজন হলে এই সাড়ে চুয়াত্তর শব্দটা ব্যবহার করা হত। বাঙালিরা এই শব্দটিকে আপন করে নেয়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যে চিঠির আদানপ্রদান হত তা যাতে কেউ না পড়ে সেইজন্য এই দিব্যি দেওয়া হত। কালের নিয়মে এই শব্দ গোপনীয়তা থেকে প্রেমের চিহ্নে পরিণত হয়। এক রক্তক্ষয়ী ঘটনার ইতিহাস মানুষ প্রেমের সাথে যুক্ত করে নিয়েছে। কথায় বলে না ‘শেষ ভালো যার সব ভালো তার’ এই মর্মান্তিক ঘটনার পরিণতি এই রকম করেই শেষ হয়েছে। প্রেমের মত একটা শব্দের সাথে এই শব্দ জুড়ে গিয়ে সেই রাজপুত বীরদের সম্মান আরও বেড়ে চলেছে, এবং তাদের আজীবন মনে রাখবে সকলে