বেকারত্ব কাজের অভাবে অনিচ্ছাকৃত কর্মহীনতা। বেকার বলতে শ্রমশক্তির সেই অংশকে বোঝানো হয়, যারা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সন্ধান করা সত্ত্বেও কোন কাজ পায় না। পশ্চিমবঙ্গের শ্রমশক্তি সম্পর্কিত জরিপে (২০১১- ২০২১ ) ১৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের এমন ব্যক্তিকে বেকার বিবেচনা করা হয়েছে যে সক্রিয়ভাবে কাজের সন্ধান করা বা কাজের জন্য প্রস্ত্তত থাকা সত্ত্বেও কোন কাজ করেনি। পশ্চিমবঙ্গের বেকারত্বের এই সংজ্ঞা দৃশ্যমান ও অদৃশ্য আংশিক কর্মসংস্থান সম্পর্কিত ধারণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ উৎপাদনের অন্যান্য উপাদানের মধ্যকার মৌলিক ভারসাম্যহীনতাকে প্রতিফলিত করে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন রাজ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ বেকারত্ব কমেছে। বাংলা একাধিক বিষয়ে এক নম্বরে উঠে এসেছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন ।
তথ্য বলছে, ২০১১-১২-তে পশ্চিমবঙ্গে বেকারত্বের হার ছিল গ্রামাঞ্চলে ২.৭ শতাংশ এবং শহরে ৪.৮ শতাংশ। কেন্দ্রের পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০১১-১২-র তুলনায় ২০১৭-১৮ তে রাজ্যে বেকারত্বের হার বেড়েছে। সেটি জাতীয় হারের তুলনায় কম ছিল। রাজ্য সরকারের দাবি, বেশি কর্মসংস্থান হচ্ছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে। যাতে রাজ্য সারা দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে।
২০২০ সালের মার্চ মাসে করোনা মহামারী প্রকোপ শুরু হওয়ায় লকডাউন ঘোষণা করা হয় দেশ জুড়ে। স্বাভাবিকভাবেই কর্মসংস্থানের ছবিটা এক পলকে পাল্টে যায়। সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি-র তথ্য অনুযায়ী, ওই বছরের মার্চ মাসে দেশে বেকারত্বের হার ছিল ৮.৮ শতাংশ, সেটাই মে মাসে একধাক্কায় বেড়ে হয় ২৩.৫ শতাংশ। আর রাজ্যে মার্চ মাসে যে হার ছিল ৬.৯ শতাংশ, সেটা মে মাসে বেড়ে হয় ১৭.৩ শতাংশ।
২০২১ সালে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজে ডোম পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। শূন্যপদ ছিল মাত্র ৬। বেতন মাসে ১৫০০০ টাকা। অষ্টম শ্রেণি পাশ হলেই আবেদন করা যাবে বলে জানানো হয়েছিল। আর সেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর দেখা যায়, আবেদন করেছেন প্রায় আট হাজার জন চাকরিপ্রার্থী। তাঁদের মধ্যে আড়াই হাজারের বেশি স্নাতক, ৫০০-র কাছাকাছি স্নাতকোত্তর, আরও অন্তত ১০০ জন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিধারী।
রাজ্যে যে কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে তার মান কেমন? তথ্য বলছে, ২০১৭-১৮ সালে পশ্চিমবঙ্গে চাকুরিরতদের ৩৩ শতাংশই ছিলেন অস্থায়ী। আর দেশে সেই হারটা ২৫ শতাংশ। এমপ্লয়মেন্ট এক্সেচেঞ্জে লেখানো নামের সংখ্যা ৩৫ লক্ষ। কিন্তু এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের হারও কমছে। প্রায় ২ লক্ষ সরকারি পদে নিয়োগ হচ্ছে না বলেই জানা গিয়েছে। রাজ্যে শিক্ষক পদ ফাঁকা এক লক্ষেরও বেশি। সরকারি কাজে চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের নিয়োগটাই রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০২১-এর ৪ ডিসেম্বরও এমন এক ছবি দেখা যায় এ রাজ্যে। মন্ত্রী হুমায়ুন কবীরের উদ্যোগে একটি বেসরকারি সংস্থার নিয়োগের জন্য ক্যাম্প করা হয়েছিল। ১,২০০ পদের জন্য সেখানে দেখা যায় উপচে পড়া ভিড়। কেউ বলেন এক লক্ষ, কেউ বলেন সাড়ে তিন লক্ষ মানুষ গিয়েছিলেন সেখানে। পরিস্থিতি সামলাতে লাঠি চালাতে হয় পুলিশকে। ঘটনা দুটো একই রকম হলেও, দুটো ঘটনা থেকে একটা ছবি স্পষ্ট, তা হল বাংলার বেকারত্ব। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, রাজ্য সরকার সাধ্যমতো চেষ্টা করছে বেকারত্ব কমানোর। দেশের তুলনায় বাংলায় কর্মসংস্থানের ছবি ভাল বলেও দাবি করেছেন মমতা। তবে কতজনের চাকরি নিরাপদ, কতজন তাঁদের চাকরি নিয়ে নিশ্চিন্তে রয়েছেন? তা নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন। সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি-র সমীক্ষায় উঠে এসেছে বেকারত্ব সংক্রান্ত তথ্য। নিরাপত্তা আছে এরকম কাজের সুযোগ তৈরি করা সরকারের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।