পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ সংবাদ মাধ্যমের দৌলতে শ্রীঘর শব্দটা বহুল পরিচিত। অমুক নেতা বা বলিউডের তমুক অভিনেতা শ্রীঘরে আছেন এই হেডলাইন প্রায়শই শোনা যায়। জেল কথাটা এখন ব্যবহার হয় কম সবাই শ্রীঘর বলতেই অভ্যস্থ। জেলখানাকে ব্যঙ্গ করেই বলা হয় শ্রীঘর। কিন্তু শ্রীঘর কেন? এর পিছনে রয়েছে এক ইতিহাস।
ষোড়শ শতকের কলকাতা, কলকাতা তখন শহর কলকাতা নয় নেহাতই এক গ্রাম। কলকাতায় তখন নানা ধরণের বড়লোক ব্যবসায়ী বিভিন্ন ব্যবসার সাথে যুক্ত, তাদের সম্পত্তি ও অনেক। সেই সময় শ্রীবাবু নামে এক ধনী ব্যবসায়ী ছিলেন কলকাতায়। তার পূর্বপুরুষরা মোঘল রাজাদের সাথে বাণিজ্য করতেন। শ্রীবাবু ও তার পিতা পিতৃব্যর পদাঙ্ক অনুসরণ করে ব্যবসা বাণিজ্য শুরু করেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যখন ভারতে ব্যবসা শুরু করার অনুমতি পায়, তখন শ্রীবাবু তাদের সাথে ব্যবসা শুরু করেন। অল্প দিনের মধ্যেই ইংরেজদের প্রিয় পাত্র হয়ে ওঠেন।
এহেন শ্রীবাবু কলকাতায় একটি প্রাসাদোপম বাড়ি বানান। সেই বাড়ি কলকাতাবাসীর মুখে ‘শ্রীঘর’ নামে প্রচলিত হতে থাকে। একজনের বাড়ি জেলখানার নামান্তর? সেখাই আসল কথা। শ্রীবাবু ইংরেজদের সঙ্গে ব্যবসা করলেও কিছুদিনের মধ্যে ইংরেজদের সাথে তার বিবাদ বাদে। ইংরেজরা বরাবরই কূট প্রকৃতির মানুষ। তারা শ্রীবাবু ষড়যন্ত্র করে জালিয়াতির দায়ে ফাঁসিয়ে দেন। শ্রীবাবুকে তার নিজের বাড়িতেই গৃহবন্দী করে রাখা হয়। কিছুদিন এইভাবে থাকার পর বাড়িতেই মারা যান তিনি। তার মৃত্যুর পর সেই বিশাল বাড়ি ইংরেজরা হস্তগত করে নেয়।
তারপর থেকে সেই বাড়িটিকে ইংরেজরা ইংরেজ অপরাধীদের জেলখানা হিসেবে ব্যবহার করতে থাকেন। ইংরেজ অপরাধীদের সেই সময় ভারতীয় অপরাধীদের সমান শাস্তি দেওয়া হত না। এমনকি ভারতীয় বিচারকরা ইংরেজ অপরাধীদের বিচার করতেও পারতেন না। তাই ইংরেজ অপরাধীদের জেলখানায় না রেখে এই বাড়িতে রাখা হত শাস্তির জন্য।
যদিও এ বাড়িতে তারা জেলের মত করে থাকত না। লোকচক্ষুর আড়ালে তাদের সমস্ত রকম সুযোগ সুবিধা দিয়ে এই বাড়িতে রাখা হত। এই বাড়িকে সবার সামনে কারাগার বা জেলখানার মত ব্যবহার করলেও আসলে জেলখানার কিছুই ছিল না সেখানে। তাই শাস্তির নামে একপ্রকার আরামে বসবাসের জীবন পেত ইংরেজরা এই শ্রীঘরে। সেই থেকে শ্রীঘর জেলখানার ব্যঙ্গাত্মক সমার্থক হয়ে দাঁড়ায়। জেলখানাকে ব্যঙ্গ করতে এবং চোখে ধুলো দেওয়া শাস্তি দেখাতে জেলখানাকে শ্রীঘর বলা শুরু হয়।