Home » “প্রেমের একেল সেকেল”

“প্রেমের একেল সেকেল”

পুলমা দত্ত, কলকাতা: “ও…. আজকালকার প্রেম তো টিকবে না”, “আজকালকার ছেলে মেয়েরা অ্যাডজাস্টমেনটের মানে বোঝে নাকি?”

এসব কথা বার্তা তো মা – কাকিমাদের আমলের লোকেদের কাছ থেকে হামেশাই শুনে থাকতে হয় । প্রেমের আবার একেল সেকেল হয় নাকি?আরেবাবা প্রেম তো প্রেমই। ধরণ পাল্টালেই কি ভালোবাসা পাল্টায় ?

ফোন আবিষ্কারের আগে চিঠপত্র আদানপ্রদানের মাধ্যমে প্রেম নিবেদন করা হতো। এখন যুগের সাথে তাল মিলিয়ে তা হোয়াটস অ্যাপে শিফট হয়েছে। রাস্তার ধারের মাটির ভাঁড়ের চায়ের জায়গা নিয়েছে পাঁচ তারা ক্যাফেগুলো। তাবলে কি প্রেম ও পাল্টে যায় ?

আগে চিঠিই দিতে হতো অনেক ভয়ে সবার থেকে লুকিয়ে। তখন তো এই প্রেমের কথা সবাইকে এভাবে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিয়ে ঘটা করে জানানো যেত না। বাড়ি বা পাড়া প্রতিবেশী এক্কেবারে ছিছি করতো। পাপের চোখে দেখা হতো প্রেমটাকে।আর প্রেম করা সেতো সাক্ষাৎ এক বিশ্ব যুদ্ধ! বন্ধু বান্ধবকে দিয়ে বা বইয়ের ভিতরে চিঠি পাঠানো।”ভালোবাসি” বলতে গিয়েই তো কত ভালোবাসা পরিণতিই পেতো না। একে অপরের অপেক্ষা করে যেত দুপক্ষ।

কিন্তু এখন আবার তা না, একটা ক্লিকেই সবাইকে হাতের নাগালে পাওয়া সম্ভব। ভালোবাসার কথা অনায়াসে বলে ফেলে সবাই মেসেজের মাধ্যমে , আগের মত অত ভয় পায়না কেউই। আর অপেক্ষা? সেদিন রাস্তায় দেখা, ১০ মিনিট দেরি হয়েছে বলে মেয়েটা রাগ করে বাড়িই চলে গেলো। ছেলেটার সাথে ঘুরতে যায়নি।ভালোবাসাটা আগের মত এখন আর “হিরোশিমা – নাগাসাকি” নয়। আসলে এই ডেটিং অ্যাপের যুগে মানুষের ধৈর্য্য খুব কম। মানুষ অনেক বেশি সেলফ কন্সাস , একটু অ্যাডজাস্ট করতে হলেই তা “লেফট সোয়াইপ” করে ফেলে।

অঞ্জন দত্তের “চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো? এখন আর কেউ আটকাতে পারবেনা….. সম্বন্ধটা এইবারে তুমি ভেস্তে দিতেই পারো, মাকে বলে দাও বিয়ে তুমি করছো না” গানটা শুনেই বোঝা যায় চাকরিটা কত জরুরী ছিল। আগে সরকারি চাকরির রমরমা থাকলেও কালক্রমে ত ক্ষীণ হয়ে এসেছে , জায়গা নিয়েছে বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল প্রাইভেট কোম্পানি গুলোই। সেকেলে মেয়েরা খুব কম পরিমাণে স্বাবলম্বী ছিল। তাই বাবা – মা চাইতো একটা ভালো চাকরি করা ছেলের সাথে বিয়ে দিতে, ব্যাবসার কথা শুনলেও যেখানে নাক শিটকাত মেয়ের বাবা। একেলে পরিস্হিতি অনেক পাল্টেছে , মেয়েরা স্বাবলম্বী তাই ছেলের চাকরি নিয়ে খুব একটা মাথা ব্যাথা নেই মেয়ের বাবার।

“ছেলে কি করে?” এটা ছাড়াও আর একটা প্রশ্ন থাকতো সব বাবার তা হলো “ছেলের গোত্র কি?” কারণ জাত- পাত, গোত্র , কুষ্ঠি এসব মেলানোটা ছিল খুব জরুরী। এখন অতশত লাগেনা “ভাইব” মিলে গেলেই সব ঠিক থাকে।

এখন ছেলে মেয়েদের যতটা স্বাধীনতা তার সিকিভাগও আগে ছিল না। আগে মেয়েরা থাকতো ঘোমটার আড়ালে এখন মেয়েরা ছেলেদের সমান। স্বাধীনতাটাকে ভালো উপায়ে কাজে লাগাতে হতো তাহলে হয়তো এই সমাজে এত ব্রেকআপ হতো না আর। তাবলে কি সব ফেলনা ? ভালোবাসা টেকে না ? আলবাদ টেকে কেনো টিকবে না ? সব মানুষই কি এক হয় ? আগেকার যুগের বুঝি সব ভালোবাসা টিকতো?

আসলে অগাধ ভালোবাসা আর কাউকে পাওয়ার অদম্ম ইচ্ছা থাকতে হয় আর সেটা যদি দুপক্ষ থেকেই হয় তাহলেই তো “রাব নে বানা দি যোরি” হতে আর কে আটকায় ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Click to Go Up
error: Content is protected !!