সত্যিই রুপ কথার গল্পের মতোই এই ” রুপ কন্যার সাঁঝ কথা”-র কর্মকান্ড। বহুকাল আগে যাত্রাপথ শুরু হলেও করোনা কালে “রুপ কন্যার সাঁঝ কথা” কলেজ পড়ুয়া থেকে গৃহবধু মহিলা দের নিয়ে জীবনের এক অন্য লড়াই শুরু করে। এই উদ্যোগ প্রাথমিক ভাবে শুরু করে করেন, একেবারেই বাঙালি ছাপোষা মধ্যবিত্ত পরিবারের শ্রীমতী তন্দ্রা রায়, কস্তুরী রায় কর্মকার ও ক্যামেলিয়া রায় ভট্টাচার্য্য। মা ও দুই কন্যার ভূমিকা শুনলেই অবাক হতে হয়।
প্রায় ১২ হাজারের এই পরিবার কে মাতৃ স্নেহে আগলে রাখেন শ্রীমতী তন্দ্রা রায়। তিনি বলেন, সংসার বড় মায়ার, এদের নিয়ে থাকি বলেই বার্ধক্যের সমস্যা গুলো কে এড়িয়ে যেতে পারি। ক্যামেলিয়া-র দায়িত্বে সাংস্কৃতিক বিভাগ। প্রতিভাবান নারীদের নিয়ে, সকালের আলো ফোটার সাথে সাথেই “গ্রূপে” ছোট্ট গান ও কবিতা দিয়ে দিন শুরু করান। এছাড়া বাঙালির বারো মাসের তেরো পার্বনের যাবতীয় দায় তো রয়েছেই। ব্যাবসার পাশাপাশি সঙ্গীত, নৃত্য, আবৃত্তি ও কবিতা বা গল্প লেখায় উৎসাহ ও এগিয়ে যাওয়ার উৎসাহ প্রদান করেন। রবীন্দ্র জয়ন্তী থেকে ক্রীসমাস, সব উৎসবেই ক্যামেলিয়ার সাথে নাচে গানে কবিতায় মেতে ওঠে এই পরিবার। আর কস্তরী কে এখানে বলা যেতেই পারে দ্যা পাওয়ার হাউস।।। সুদুর মহারাষ্ট্রে থেকে এই দল কে প্রায় সর্বক্ষন পরিচালনা করেন দশভূজা হয়ে। যদিও প্রতিটি “মানুষ” আজ দশভূজা তা অনস্বীকার্য, তবে “গ্রুপের” প্রতিটি একক সদস্যার ওপর একক ভাবে ব্যাবসায়ে উৎসাহ দেওয়া, ভূল শুধরে দেওয়া, বানিজ্যিক সমস্যা সমাধান করা ইত্যাদি হাজারো সমস্যার সমাধান এক চুটকি তে করতে সমাধান করতে পারেন এই কস্তুরী।
না, এখানেই শেষ নয়। “গ্রুপে”র সদস্যাদের সন্তানদের প্রতিপালনেও আছে সমান গুরুত্ব। কচিকাঁচা দের নিয়েও হয়ে থাকে নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাথে নিত্যদিনের নানান সমস্যায় জড়িয়ে পড়ে যে সব সদস্যা মানসিক অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়েন তাদেরকেও যত্ন করে আবারও এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করেন কস্তুরী ও ক্যামেলিয়া।
অমিতাভ বচ্চন ও রাজেশ খান্না অভিনীত ফিল্ম “আনন্দ”র কথা মনে আছে আপনাদের? ভাবছেন হঠাৎ রুপ কন্যার সাঁঝ কথা-য় বলিউড ফিল্ম এলো কোথা থেকে???? – বলছি।
আসলে আমাদের জীবন থেকেই তো ফিল্ম তৈরী হয়। “আনন্দ” ফিল্মে রাজেশ খান্নার একটি বিখ্যাত ডায়লগ আছে, জিন্দেগী বঢ়ি হনি চাহিয়ে লম্বী নেহী। অর্থাৎ জীবন টা অনেক বড় হওয়া উচিত তবে সেটা উচ্চতায় নয়। “রুপ কন্যার সাঁঝ কথা”র মূল মন্ত্রই এটা। কারন এত কিছু করার পরও এনারা ক্লান্তিহীন। এগিয়ে এসে পাশে দাঁড়ান প্রাকৃতিক বিপর্যস্ত মানুষের পাশে, আবার কখনও আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া দরিদ্র মানুষের পাশে, বাদ যায়নি নিষিদ্ধ পল্লীর শিশুরাও।
সম্প্রতি এরকম ভাবেই তারা আবারও এগিয়ে এলেন দক্ষিনেশ্বরের কিশোরপল্লী এলাকার কিছু দুস্থ মানুষের পাশে। আপনাদের জন্য রইলো সে দিনের কিছু ক্যামেরা বন্দী মুহুর্ত। প্রচারের উদ্দেশ্যে নয়, জীবনের আসল জীবন দর্শন আজও বর্তমান তাই এই প্রতিবেদন।