পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহ প্রচলন করায় সমাজ সেই যুগে দুভাগে ভাগ হয়েছিল, কেউ বিধবা বিবাহের সমর্থন করেছিলেন কেউবা বিরুদ্ধাচারন করেছিলেন। ঠাকুর পরিবারের সুযোগ্যা কন্যা স্বর্ণকুমারী দেবী বিধবা বিবাহের বিরুদ্ধাচারন করেছিলেন যদিও তার যুক্তি ছিল অন্যদের থেকে আলাদা। তার মতামত ছিল এক পুরুষের নিয়ন্ত্রন মুক্ত হয়ে অন্য পুরুষের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার প্রয়োজন কি? মেয়েরা কি স্বামী ছাড়া বাঁচতে পারেন না? এই ভয়াবহয় প্রশ্ন আজ থেকে প্রায় ১৫০ বছর আগে দাঁড়িয়ে দীপ্ত কণ্ঠে করেছিলেন তিনি। তিনি হিন্দু বিধবাদের বিবাহের পরিবর্তে নিজের পায়ে দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন। সেই উদ্দেশ্যেই প্রতিষ্ঠা করেন ‘সখীসমিতি‘।
স্বর্ণকুমারী দেবী বাংলার প্রথম সারির এগিয়ে মেয়েদের মধ্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি নাম। তার মত কিছু মেয়েরা সেই যুগে না থাকলে আজকের দিনে মেয়েরা কিছুই করতে পারতেন না। আজ বিশ্বের সবকটি জীবিকায় সবেতেই মেয়েরা পুরুষের সমকক্ষ। কিন্তু তার শুরু বোধহয় স্বর্ণকুমারী দেবীর মত কিছু মেয়েদের হাত ধরে হয়েছিল। বাংলা সাহিত্যের প্রথম মহিলা সাহিত্যক হিসেবে তার নামটাই প্রথম মনে আসে। এহেন সর্বগুণসম্পন্না মানুষটার আজ ১৬৮ তম জন্মদিন। বাংলার মেয়েদের অগ্রগতির অন্যতম কাণ্ডারির জন্মদিনে তাকে বিনম্র শ্রদ্ধা ও প্রণাম।
বাংলার মহিলাদের অনেক ক্ষেত্রেই প্রথম তিনি। তিনি বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় মহিলা সাহিত্যিক। তার লেখা অসংখ্য কবিতা, নাটক এবং প্রায় তিন শতাধিক গান রয়েছে। বলা হয় ঠাকুর পরিবারে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরেই গান রচনায় তিনি প্রথম। শুধু সাহিত্যিক নয় দীর্ঘ প্রায় ২০-২২ বছর তিনি ‘ভারতী’ পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব সামলেছেন। ১৮৮৯ ও ১৮৯০ সালে তিনি ডাঃ কাদম্বিনী গাঙ্গুলির সঙ্গে জাতীয় কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনে অংশগ্রহণ করেন। তিনিই ছিলেন প্রথম মহিলা যিনি জাতীয় কংগ্রেসে প্রকাশ্যে অংশগ্রহণ করেন। বিধবা মেয়েদের শিক্ষিত এবং নিজের পায়ে দাঁড় করানোর জন্য প্রতিষ্ঠা করেন ‘সখীসমিতি’। নামটা অবশ্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেওয়া।