পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ দুন স্কুল, দেরাদুনে অবস্থিত এই স্কুল ভারতবর্ষের প্রথম বোর্ডিং স্কুল যেখানে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মেলবন্ধন ঘটেছিল সুনিপুণ ভাবে। ভারতবর্ষের বহু পরিচিতমুখ, বিভিন্ন পেশায় সফল ব্যক্তিবর্গ এই স্কুলেরই প্রাক্তনী। রাজীব গান্ধী, নবিন পট্টনায়ক, মনিশঙ্কর আইয়ার, কুলদিপ সিং ব্রার, প্রণয় রায়, এম জে আকবর প্রমুখরা তাদের স্কুল জীবন কাটিয়েছেন এই স্কুল। এই ভারত বিখ্যাত এবং ভারতের নানা প্রান্ত থেকে ছাত্র আসলেও এই স্কুল প্রতিষ্ঠার পিছনে ছিলেন আদ্যপান্ত এক বাঙালি। তার অক্লান্ত চেষ্টা না থাকলে এই স্কুল প্রতিষ্ঠা হত না।
এই বাঙালি মানুষটি বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে ফেরার পর তার মনে হয়েছিল সাহেবি ধাঁচে কিন্তু ভারতীয় সংস্কৃতির একটি স্কুল তৈরি করবেন। সেই মানুষটির নাম সতীশ রঞ্জন দাশ। তার নাম অনেকেই জানেন না, কিন্তু তার পিতা এবং বোনেদের নাম বেশ পরিচিত। তার পিতা দুর্গামোহন দাশ ছিলেন তৎকালীন সময়ের ব্রাহ্ম সমাজের অন্যতম কর্মী, তিনি বিদ্যাসাগর মহাশয়ের প্রেরনায় নিজের পিতার বিধবা স্ত্রীকে পুনরায় বিবাহ বিবাহ দিয়েছিলেন। এহেন উচ্চ মনস্ক পিতার সন্তান হয়ে তার চিন্তা ভাবনা যে উদার এবং উচ্চ হবে তা বলে দেওয়ার দরকার রাখে না।
তিনি দীর্ঘদিন বিদেশে কাটিয়ে পাশ্চাত্য শিক্ষার সঙ্গে খুব কাছ থেকে জড়িয়ে ছিলেন। ১৯২২ সালে তিনি বাংলার অ্যাডভোকেট জেনারেল পদে নিযুক্ত হন। তারপরই এই স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত নেন। গান্ধীজী অবশ্য তার এই ভাবনাকে সমর্থন করেননি, কিন্তু জওহরলাল নেহেরু তার এই পরিকল্পনায় পাশে দাঁড়ান। ১৯২৭ সালে দেরাদুনে জমি কেনা হয় স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য। সমস্ত ব্যবস্থা তৈরি হয়ে যাওয়ার পরও স্কুল খোলা পর্যন্ত তিনি সময় পাননি। কপাল সাথ দেয়নি তাকে, ১৯২৮ সালে তিনি পরলোক গমন করেন।
কিন্তু তার প্রচেষ্টা এবং স্বপ্নকে বিফলে যেতে দেননি তার দুই সুযোগ্যা বোন সরলা রায় এবং অবলা বসু। তাদের দুজনের চেষ্টায় ১৯৩৫ সালে প্রতিষ্ঠা হয় দুন স্কুল। তার স্বপ্নকে বাস্তব রূপ তিনি দিয়ে যেতে পারেননি ঠিকই কিন্তু তার স্বপ্ন আজ এত বছর পরও সমান মহিমায় দাঁড়িয়ে আছে তার সহোদরাদের জন্য। সরলা বসু পরবর্তী কালে কলকাতায় মেয়েদের জন্য ‘গখেল মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করেন। আর লেডি অবলা বসু, বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসুর স্ত্রী, সমাজের মহিলাদের জন্য অনেক কাজ করেছেন। দুন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সতীশ রঞ্জন দাশের নাম উল্লিখিত হলেও তার বোনেদের অবদানও কম নয়।